• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্পষ্ট হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত টানাপোড়েন


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৮, ২০১৭, ০১:৫৮ পিএম
স্পষ্ট হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত টানাপোড়েন

ঢাকা : যুদ্ধাপরাধের দায়ে একের পর এক শীর্ষ নেতাদের দণ্ড কার্যকর, দলের নিবন্ধন বাতিল ও নাশকতার মামলায় কোণঠাসা জামায়াতের গুরুত্ব এখন বিএনপি জোটেও কমে আসছে। সম্প্রতি বেশ কিছু ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত টানাপড়েনের লক্ষণও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রগতিশীল দলগুলোকে কাছে টানা ও আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে কৌশলে জামায়াতকে এড়িয়ে চলছে বিএনপি।

বিএনপি জোটের বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘ ১৮ বছরের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। সবশেষ গত ১০ মে খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ রূপকল্প উপস্থাপন অনুষ্ঠানে জামায়াতের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেননা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতকে নিয়ে ২০ দলীয় জোট কেবল আন্দোলনকেন্দ্রিক। জোটে জামায়াতের গুরুত্ব কমে আসছে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা। অন্য দলের ওপর নির্ভরতা বা বিএনপি জোটে জোর করে থাকার মানসিকতা জামায়াতেরও নেই- বলছেন জামায়াত নেতারা। তাদের মতে, জোটগত বা এককভাবে হোক, নির্বাচনের জন্য জামায়াত প্রস্তুত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, নানা বাস্তবতায় বিএনপি-জামায়াতের মধুর সম্পর্ক এখন আর নেই। সামনের দিনগুলোতে ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে জামায়াতের ভূমিকা আরো কমতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

প্রসঙ্গত, আন্দোলন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ রাজনীতি শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। ওই সম্পর্ক আর কতো দিন টেকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে দশের চলমান রাজনীতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে যায় জামায়াত। স্বাধীনতাবিরোধী দলের সঙ্গে ওই জোট গঠন নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে পড়লেও বিএনপির ক্ষমতায় ফিরতে তা কার্যকর ছিল বলে প্রমাণ হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে কোণঠাসা করে দিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়েই ক্ষমতায় ফেরে চারদলীয় জোট। তখন মিত্রতার বন্ধন আরো অটুট হয়। এরপর থেকেই গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপিকে ছায়ার মতো অনুসরন করেছে জামায়াত। জোটবদ্ধ হওয়ার একযুগেরও বেশি সময়ে ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি হলেও বর্তমানে টানাপোড়েন চরম আকার ধারন করেছে। এর আগে দল দুটির সম্পর্কে এমন ঝাঁকুনি লাগেনি।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি শুরু মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে। এ নিয়ে বিএনপি প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নেয়া থেকে বিরত থাকায় জামায়াত বরাবরই অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় নিয়ে বিএনপির নিশ্চুপ অবস্থানকে রাজনৈতিকভাবে সঠিক মনে করছেন দলের নেতারা। একের পর এক রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত যেমন কঠিন সংকটের মধ্যে আছে। তেমনি বিএনপিও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

একদিকে বিচারের পক্ষে ব্যাপক সমর্থনের বিষয়টি চিন্তা করতে হচ্ছে। অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতের সংকটকালীন সময়ে পাশে দাঁড়াতে পারছেন না তারা। এ নিয়ে মনোকষ্টে থাকলেও জামায়াতের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন সময় বিছিন্ন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।

তবে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের অবনতির বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ২০ দলীয় জোট যে লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে, সে লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় জোটের ভুল-বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই।

একই প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যে জোট আদর্শিক নয়, তা নির্বাচনী। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এ বিষয়টি বারবার বলেছেন। দুটি দলই গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। ওই আন্দোলন এখনো শেষ হয়ে যায়নি, সংগ্রামরত রয়েছে। তাই এখন এ প্রশ্নটি আসা উচিত নয়। যদি গণতন্ত্র উদ্ধার হতো, কোনো সংকট না থাকতো। তাহলে জামায়াত প্রশ্ন তুলতে পারতো। সেই সময় তো আসেনি।

তিনি আরো বলেন, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে উচ্চ আদালত যে সব রায় দিয়েছেন, তা নিয়ে বিএনপির নতুন করে কিছু বলার নেই। বিএনপিও আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছ বিচার প্রত্যাশা করে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!