• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াত


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৪, ২০১৭, ০২:৪৩ পিএম
স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াত

ঢাকা : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তির রায় কার্যকর, দলের নিবন্ধন বাতিল ও দলীয় বিভেদসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কার্যক্রম। দলটি এখন প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে না।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সব রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে, তখন জামায়াত একধরনের অদ্ভুত নীরবতা পালন করছে। সে কারণে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে অনেকের মনেই প্রশ্ন, জামায়াতের ভবিষ্যত কী? কী করতে যাচ্ছে তারা?

হাইকোর্টের আদেশে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। ইসির তালিকায়ও নেই জামায়াতের নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক। নিবন্ধন ও প্রতীক না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কৌশলী অবস্থানে থাকবে জামায়াত।

জামায়াত ও ২০ দলীয় জোট সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখেই জামায়াত নির্বাচনী মাঠে লড়াই করবে। সেক্ষেত্রে তারা ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে যাবে না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তারা জোটের সঙ্গে আলোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করাবে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকও যাতে একই থাকে সে জন্যও তারা পরিকল্পনা করে রেখেছে। যাতে প্রতীক দেখে জামায়াতের অস্তিত্ব বোঝা যায়।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে। এরপর ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) নামে তাদের কার্যক্রম চালায়। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে জামায়াতে ইসলামী আবারো রাজনীতি করার সুযোগ পায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। পরবর্তীতে বিচারের রায়ে জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতা ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে জামায়াত নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। এখনও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।

তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়াকে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর মর্মে ঘোষণা করায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়। চলতি বছরের শুরুতে নির্বাচন কমিশন ‘দাঁড়িপাল্লা’ নির্বাচনী প্রতীকের তালিকা থেকে বাতিল করে দেয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে ভিন্ন কোনো নামে কার্যক্রম চালাবে নিজস্ব সক্রিয়তায়। স্থানীয় সরকারে নির্বাচনে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ও জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে ভোটের মাঠে থাকবে। যেহেতু দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য ২০ দলীয় জোটে থেকে নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকতে চায়। এ জন্য একটা কৌশল থাকবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যেকটি আসনেই যাতে একই ধরনের প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া যায়। এ জন্য যতরকম কৌশল থাকে তা অবলম্বন করা হবে। উপজেলা নির্বাচনেও জামায়তের প্রার্থীরা প্রায় সবাই একই প্রতীকে নিয়ে নির্বাচন করেছেন।

জামায়তের এক শীর্ষ নেতার বরাত দিয়ে ২০ দলীয় জোটের এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াত জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জামায়য়াত নিজ থেকে কখনো জোট থেকে সরে দাঁড়াবে না। এছাড়া জামায়াত হচ্ছে জোটের বিশ্বস্ত সহযোগী। জোট শরীকরাও চায় না জামায়াতে জোট থেকে বেরিয়ে যাক। কারণ এটা কোনো আদর্শিক জোট নয়, এটি নির্বাচনী জোট। সেক্ষেত্রে বিএনপি যদি জামায়াতকে বাদ না দেয় তাহলে জামায়ত নিজ থেকে কথনো সরে দাঁড়াবে না।’ তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক বিএনপির বড় একটা অংশ চায় না জামায়াত ২০ দলীয় জোটে থাকুক। তবে এটা নিয়ে প্রকাশ্যে মতবিরোধ নেই।’

এদিকে, ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া বলেন, ‘জামায়াত তাদের মতো করেই কর্মকৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত দিনে দেখা গেছে, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে যেখানে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না। জাতীয় নির্বাচনেও তারা সেইভাবেই এগুচ্ছে। আমার জানা মতে, জামায়াতের নির্বাচনী প্রস্তুতি অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে গোছানো।’ তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জামায়াত জোটগতভাবেই অংশগ্রহণ করবে, কারণ ২০ দলীয় জোট এখনও অটুট আছে।’

এছাড়া জামায়াতের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘একটি দল তার নিজস্ব ধারায় রাজনীতি করবে। তাদের রাজনীতি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!