• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নবাজ সেই নগরপিতার জন্মদিন আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮, ০৮:৩৯ পিএম
স্বপ্নবাজ সেই নগরপিতার জন্মদিন আজ

ঢাকা : মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়, এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলতেন, এগিয়ে যেতে হলে স্বপ্নের প্রয়োজন। অনেকেই মনে করি স্বপ্ন মানেই একটি নিছক কল্পনামাত্র। কিন্তু আসলে তা নয়; স্বপ্ন মানেই বাস্তব, স্বপ্ন মানেই গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই তার নাম স্বপ্ন। প্রতিটি মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হতে পারে।

আনিসুল হক নিজে স্বপ্ন দেখতেন, অন্যদেরও স্বপ্ন দেখাতে জানতেন।

৪০০ বছরের বুড়ো ঢাকা শহরে তারুণ্য এনে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কথা দিয়েছিলেন একটি মানবিক ঢাকা তৈরি করবেন। সকলে মিলে একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলবেন। সেই লক্ষে তিনি ধাপে ধাপে অগ্রসরও হচ্ছিলেন। কিন্তু সময়ের আগেই অনিবার্য নিয়তির ডাকা সাড়া দিয়ে চলে যান স্বপ্নবাজ আনিসুল হক।

অনেক রাজনীতিকই স্বপ্ন দেখান, মানুষকে উন্নত সময়ে পৌছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু কজন মানুষ বিশ্বাস বিশ্বাস করে? তাদের দেখানো স্বপ্ন মানুষের কাছে নিছক গালভরা বুলি। কিন্তু আনিসুল হকের স্বপ্নের কথা দলমত নির্বিশেষ বিশ্বাস করেছিল নগরবাসী। মানুষের হৃদয়ে তার অবস্থান টের পাওয়া গেছে, নগরপিতাকে হারিয়ে নগরবাসীর হাহাকারে।

পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ছিলেন না কিন্তু উন্নয়ন আর ভালোবাসা দিয়ে রাজনৈতিক মাঠেও আপন হলেন। যে উদ্যোগ আর উন্নয়নের পসরা সাজিয়ে নগরবাসীর মন জয় করেছিলেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক।

যিনি স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতেন, স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেন সেই সফল মানুষ, সফল ব্যবসায়ী, টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক, উদ্যোক্তা আনিসুল হকের আজ ৬৬তম জন্ম‌দিন। ১৯৫২ সালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে জন্ম নেন তিনি। তবে তাঁর শৈশবের একটি বড় সময় কাটে ফেনীর সোনাগাজীর নানাবাড়িতে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি স্ত্রী রুবানা হক, দুই কন্যা ও এক ছেলে রেখে গেছেন। শরিফুল হক ও রওশন আরা বেগম দম্পতির বড় সন্তান আনিসুল হক। তাঁর ছোট ভাই আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক সা‌বেক সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্ণাঢ্য জীবন ছিল আনিসুল হকের। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের মেয়র নির্বাচনে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবেও তিনি বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন। প্রয়াত আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বড় ছেলে নাভিদুল হক দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এক মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওতে কর্মরত এবং আরেক মেয়ে তানিশা ফারিয়াম্যান হক মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। মেয়র হওয়ার আগে ব্যবসায়ী হিসেবে তিনিই মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন।

প্রয়াত আনিসুল হক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের তৈরি পোশাক খাত, জ্বালানি খাত, তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যম খাতের সঙ্গে জড়িত। পোশাকমালিকদের সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন সার্ক চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত।

আশির দশকে আনিসুল হক বাংলাদেশ টেলিভিশনে জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পান। তাঁর উপস্থাপনায় বিটিভির ঈদের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আনন্দমেলা, রাজনীতিবিষয়ক অনুষ্ঠান মুখোমুখিসহ বেশ কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে ঢাকার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। এর অনেক সুফল এখনো পাচ্ছে ঢাকাবাসী। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে আনিসুল হক পরিবহনশ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েন। পরে ওই সড়ক দখলমুক্ত করে তা সড়ক হিসেবে চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ফলে দীর্ঘ বছর ধরে দখল হয়ে থাকা এই সড়ক এখন সবার জন্য উন্মুক্ত।

এছাড়া গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় বিশেষ রঙের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন আনিসুল হক। আবার ঢাকার গাবতলী থেকে সাভারে যাওয়ার পথটি ছিল যন্ত্রণাময়। এলোপাতাড়িভাবে বাস রাখার জন্য এখানেও যানজট লেগেই থাকত।

আনিসুল হকের উদ্যোগে এই সড়কটিও এখন দখলমুক্ত। এ ছাড়া বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। এরই মধ্যে মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মাত্র দুই বছরের জন্য মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এ অল্প সময়ের কাজের জন্যও একজন ব্যতিক্রমী মেয়র হিসেবে ঢাকাবাসী আনিসুল হককে মনে রাখবে বহুদিন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!