• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত নতুন স্বপ্ন-আশা


দ্বীন ইসলাম আরিয়ান জানুয়ারি ১, ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
স্বাগত নতুন স্বপ্ন-আশা

ঢাকা : ২০১৭-কে বিদায় জানিয়ে ২০১৮’তে পা রেখেছে বিশ্ব। ভৌগোলিক অবস্থান আর সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময়ে বর্ষবরণ করলেও সবার প্রত্যাশা আশা-আকাঙ্খা এক ও অভিন্ন। নতুন স্বপ্নকে ধারণ করেই প্রতিটি নতুন বছরকে মানুষ স্বাগত জানায়। বিদায়ী বছরের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসেবভূমিতেই রচিত হয় নতুন স্বপ্ন-আশা । একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে, নতুন প্রেরণা নিয়ে। সেই প্রেরণা নিয়েই শুরু হয়েছিল ২০১৭। প্রত্যাশার শতভাগ পূরণ হয়নি সত্য, তবুও নব-উদ্যমে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বরণ করা হয়েছে নতুন বছর।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে নতুন বছরকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য এবার রাজধানীর রাস্তায় ছিল না মানুষের ভিড়, ছিল না তেমন অন্ধকার আকাশ উজ্জ্বল করে তোলা আতশবাজির রোশনাই। অল্প-স্বল্প আনন্দ আয়োজন যা হয়েছে তার প্রায় সবই মহল্লাকেন্দ্রিক আর ঘরোয়াভাবে। পার্টি একেবারে বন্ধ হয়নি, তবে তা ছিল হোটেল কেন্দ্রিক আর আমন্ত্রিতদের জন্য একেবারেই সংরক্ষিত। শুধু প্রাণখোলা উদযাপন ছিল কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়।

এমন অভাবনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে এ নিয়ে তেমন ক্ষোভ ছিল না নিরাপত্তার স্বার্থেই সবাই বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভূতপূর্ব পুনর্জাগরণ ঘটিয়ে চিরকালের জন্য গতকাল হারিয়ে গেছে ঘটনাবহুল ২০১৭ সাল। বাংলাদেশের অনেক ইতিহাস বদলে দিয়েছে বিদায়ী বছরটি।

প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০১৭ সালের প্রথম দিনটি বরণ করা হয়েছিল। ছিল চক্রান্ত, ছিল ষড়যন্ত্র। সবকিছু ছাপিয়ে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

প্রমত্তা পদ্মা সেতুর বুকচিরে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণযজ্ঞ চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে রাজধানীতে মেট্রোরেলের । জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাংলাদেশ পেয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তাই বিদায়ী বছরে প্রাপ্তি ছিল অনেক। ২০১৮ সালের অনেক প্রত্যাশার বীজও বুনে গেছে বিদায়ী ২০১৭।

শেষলগ্নে এসে অনেকেই বলছেন- ২০১৭ সাল ছিল নিস্তরঙ্গ রাজনীতির বছর। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পুরো বছরটিই কেটেছে শাস্তি, স্বস্তি ও অগ্রগতির মিছিলে। ২০১৫ সালের মতো নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো নৃশংসতা বিদায়ী ২০১৭ সালে দেখতে হয়নি।

বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরাও বাংলাদেশে অভ‚তপূর্ব উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বিদায়ী বছর জুড়েই। ২০১৭ সালটি কেমন গেল তার সার্বিক পর্যালোচনায় বলা যায়, কিছু ঘটনা ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উন্নয়নের নবযাত্রার এক বছর পূর্ণ হলো। বিদায়ী এই এক বছরে বড় ধরনের রাজনৈতিক বিরোধিতায় পড়তে হয়নি সরকারকে।

বিদায়ী বছরে আলোচনার শীর্ষে ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। বলা যায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ঢল সামলানোর বছর। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চ্যালেঞ্জ ছিল। সব মিলিয়ে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লক্ষাধিক নাগরিককে সম্পূর্ণ ‘মানবিক কারণে’ বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন থেকে শুরু করে পুরো বছরই এই ইস্যুটি ছিল আলোচনার শীর্ষে এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এ ইস্যুতে শুধু বাংলাদেশের পাশে এসেই দাঁড়াননি, নানা অভিধানে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

নতুন বছরে তাদের টেকসই প্রত্যাবাসনই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্য ঠিক করা হলেও রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক।

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে বিদায়ী বছরটি স্বস্তিতে পার করলেও নতুন বছর আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েই আসছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন এবং দলের পক্ষে বিজয় ধরে রাখার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন বছরটি হবে আওয়ামী লীগের অগ্নিপরীক্ষা।

বিদায়ী বছরজুড়ে বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, কৃষি ও বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবতার দৃষ্টান্ত, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমন, ক্রিকেটারদের সাফল্য, পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান অগ্রগতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও পরিশ্রমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সফল আয়োজনসহ নানা কারণে বিদায়ী বছরে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন শুধু গল্প নয়, বাস্তবতা। বাজেটের আকার ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলারে, প্রবাসে কর্মী রয়েছে ১ কোটির বেশি, রেমিটেন্স ১৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রফতানি আয় বেড়ে হয়েছে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রায় সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন এগিয়ে যাওয়া মধ্যম আয় ও উন্নত দেশের দিকে।

বিদায়ী বছরে রাজনীতির মাঠ শান্ত থাকলেও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে বছরজুড়ে তোলপাড় হয়েছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগকে ঘিরে বছর জুড়ে চলে তুমুল বিতর্ক। সর্বত্র ছিল আলোচনা-পর্যালোচনা। রাজনৈতিক ও বিচারাঙ্গণে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক উত্তাপ।

বিদায়ী বছরে চিরবিদায় নিয়েছেন অনেকেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ ২৫ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি চিরবিদায় নিয়েছেন । প্রবীণ রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক, সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা, খান টিপু সুলতান, বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র আনিসুল হক চিরবিদায় নিয়েছেন আমাদের কাছ থেকে।

এছাড়াও কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক, প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার, বারী সিদ্দিকী, সুরকার লাকী আখন্দসহ অনেকেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

২০১৭ অনেক কারণেই স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। মহাকালের আবর্তে হারিয়ে গেলেও বিদায়ী বছরটি দেশের মানুষের মনে দাগ কেটে থাকবে বহুকাল, বহু বছর।

এখন নতুন বছর আর নতুন কিছুর অপেক্ষায় দেশবাসী। অপেক্ষা কেবল মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি সর্বস্তরে ফিরে আসার। আজ সোমবার থেকে নতুন বছরে, নতুন জীবনে যাত্রা করবে এ দেশের মানুষ। আজ শুরু হলো আরও একটি নতুন বছর ২০১৮। বিদায় ২০১৭।

লেখক : সাংবাদিক

সোনালীনিউজ/এমটিআই

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!