• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা দিবসে পাঁচ বছর পর বিএনপির শোভাযাত্রা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৭, ২০১৭, ১১:০৭ এএম
স্বাধীনতা দিবসে পাঁচ বছর পর বিএনপির শোভাযাত্রা

ঢাকা : পাঁচ বছর পর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বিশাল বর্ণাঢ্য র‌্যালি করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার (২৬ মার্চ) বিকেলে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

র‌্যালিতে অংশ নিতে গতকাল দুপুরের পর থেকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের আশপাশে ঢল নামে নেতাকর্মীদের। ব্যানার-ফেস্টুন, ঢাকঢোল ও স্বাধীনতা দিবসের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নেতাকর্মীরা অংশ নেন শোভাযাত্রায়। গন্তব্য নয়াপল্টন থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত হলেও র‌্যালি শুরুর আগেই পুরো এলাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।

দীর্ঘ দিন পর বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে এত বিপুলসংখ্যক উপস্থিতি ছিল লক্ষ করার মতো।

বিকেল সোয়া ৩টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিপূর্ব সংপ্তি বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হয়েছে, মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চাই, আমরা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। সেজন্য বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে সবাইকে নামতে হবে।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের আশা-আকাক্সার প্রতিফলন ঘটতে পারে শুধু অবাধ ও নিরপে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। সেটা সম্ভব নির্বাচনকালীন সহায়ক নিরপে সরকারের মধ্য দিয়ে।

‘বিএনপি মাঠে নেই’ বলে যারা অবজ্ঞা করে তাদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘যারা বলে দেশে বিএনপি নেই, তারা এসে দেখুক বিএনপি আছে কি না।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি করলে জনগণ মেনে নিবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ভয়ভীতির মধ্য দিয়েও লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত হয়েছে। জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে সরকারকে বলতে চাই, বিরোধী দলকে মিছিল মিটিং করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিন। নয়তো এটি প্রমাণিত হবে যে আপনি জঙ্গিবাদে জড়িত।’

কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া র‌্যালির সম্মুখভাগে বিশাল আকৃতির লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা এবং এরপর ধানের শীষের বিএনপির পতাকা ছিল। ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড, হাতি-ঘোড়া, গণতন্ত্রের কফিন, মাটিতে রোপণ করা ধানগাছ নিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে অংশ নেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। এর ফলে ফকিরেরপুল থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত গোটা এলাকা সমাবেশে রূপ নেয়। বিকেল সোয়া ৩টায় র‌্যালিটি শুরু হলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে শান্তিনগরের কাছে পৌঁছে মিছিলের অগ্রভাগ। ওই সময় মিছিলের শেষ ভাগ নয়াপল্টনের কার্যালয় ছাপিয়ে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিল। ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ের প্রতীকী চিত্রসহ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি র‌্যালিতে স্থান পায়। র‌্যালি কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর ঘুরে নয়াপল্টনে এসে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়।

র‌্যালিতে আরো অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতা মো: শাহজাহান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম, সালাহউদ্দিন আহমেদ, নুরী আরা সাফা, আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, মাহবুবুল হাসান পিঙ্কু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের জুয়েল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, জাসাসের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, হেলাল খান, ছাত্রদলের রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ। ঢাকা মহানগরের নেতাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির কাজী আবুল বাশার, মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, ইউনুস মৃধা, আতিকুল ইসলাম মতিন, মোশাররফ হোসেন খোকন, লতিফুল্লাহ জাফরু, নবী উল্লাহ নবী, তানভীর আহমেদ রবিন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, কাউন্সিলর আনোয়ার পারভেজ বাদল, হাজী মনির হোসেন চেয়ারম্যান, জুম্মন মিয়া চেয়ারম্যান, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, হাজী মো: হযরত আলী, শামসুল আলম চিনু, এম এ হান্নান, হাজী আব্দুল মতিন, দেলোয়ার হেসেন দুলু, শফিকুল ইসলাম রাসেল, সাঈদ হোসেন সোহেল, আলী আকবর আলী, মো: শাহজালাল, সেলিম দেওয়ান গিয়াস, শেখ হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহ আলম মোল্লা, অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান, আশরাফুল রহিম, রফিকুল ইসলাম স্বপন, গোলাম সাবের চৌধুরী কিরণ প্রমুখ অংশ নেন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, উলামা দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, জাসাসসহ মহানগরের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী র‌্যালিতে অংশ নেয়।

বিনা প্রচারণায় র‌্যালিতে এত লোকসমাগমে নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস।

র‌্যালির কারণে মালিবাগ থেকে কাকরাইল, বিজয়নগর, মতিঝিল সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

জিয়ার মাজারে খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা : সকালে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে মরহুম নেতার রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাতেও অংশ নেন তিনি।

খালেদা জিয়ার সাথে এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ শাহজাহান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, রফিক শিকদারসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ মুনাজাতে অংশ নেন।

জিয়ার মাজারে বিএনপি ছাড়াও মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, উলামা দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, ছাত্রদল, জাসাসসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

উল্লেখ্য, মহানগর বিএনপির আয়োজনে ৪৭ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা করে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়। ব্যানার-ফেস্টুন, ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ড দল নিয়ে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ঢাকা মহানগর বিএনপি ওই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। নতুন বছরে এটিই রাজধানীর রাজপথে বিএনপির প্রথম বড় কোনো কর্মসূচি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

 

Wordbridge School
Link copied!