• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাভাবিক হচ্ছে সাঁওতাল পাড়া


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৭, ২০১৬, ১০:৪৩ পিএম
স্বাভাবিক হচ্ছে সাঁওতাল পাড়া

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতাল সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি। সংঘর্ষের ১১ দিন পর গত বুধবার তাদের পক্ষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে তাদের চাষ করা ধানকাটা নিয়ে তারা যে অনিশ্চয়তায় ছিলেন তাও এখন কেটে গেছে। হাইকোর্ট এ ব্যাপারে তাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

এদিকে এরই মধ্যে তারা গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ-সামগ্রী। আর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা শিশুদের মাঝে বিতরণ করেছে বই এবং ইউনিফর্ম। দু’দিন ধরে আবার স্কুলে যেতে শুরু করেছে সাঁওতাল পল্লীর শিশুরা।  তবে সাঁওতালদের অন্তরের দগদগে ঘা এখনো শুকায়নি, কারণ তাদের উচ্ছেদের পর সেখানে জোরেশোরে চলছে সীমানা ঘিরে রাখার জন্য কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ। অন্যদিকে পুনর্বাসনের ঘোষণা দেয়া হলেও এ ব্যাপারে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে এজন্য এখন তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রতীক্ষায় আছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছু হয় না।  

সাঁওতালদের ধান কাটতে দিতে হবে-
বিরোধপূর্ণ জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের ধান তাদের বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের শুনানি করে আদালত বলেছেন, ওই জমিতে সাঁওতালদের চাষের ধান হয় তাদের কাটতে দিতে হবে, নয়তো চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন ধান কেটে সাঁওতালদের বুঝিয়ে দেবে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়ার পাশাপাশি কয়েকটি নির্দেশনা ও একটি রুল জারি করেছেন।

উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের ভাষ্য, তারা একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাষকলাই, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন। গত ৬ নভেম্বর চিনিকলের অধিগ্রহণ করা ওই জমি থেকে সাঁওতালদের কয়েকশ ঘর উচ্ছেদের সময় বাড়িঘরের পাশাপাশি মাঠের মাষকলাই, সরিষা ও পাট লুট করা হয়। ধান তখন লুট না হলেও উচ্ছেদের পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ পুরো জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রেখেছে।

পাক ধরা ধান ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে কাটতে না পারলে সব নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন ঘরহারা সাঁওতালরা। তাদের সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় ‘প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না,’ তা জানতে চেয়েই রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, গাইবান্ধার ডিসি ও এসপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও গোবিন্দগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যানকে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তাদের নিরাপত্তার জন্য কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং উচ্ছেদের সময় ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় কয়টি মামলা হয়েছে তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসিকে। এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৩০ নভেম্বর পরবর্তী তারিখ রেখেছেন আদালত।

সাঁওতালদের মামলা নিল পুলিশ-
পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষের ১১ দিন পর অবশেষে সাঁওতালদের পক্ষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। ১৬ নভেম্বর বুধবার রাতে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সাঁওতালদের ওপর হামলা, ঘরে আগুন, পুরোনো বসতবাড়িতে লুটপাট ও সাঁওতাল হত্যার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়। মামলা দায়েরের পর সন্দেহভাজন হিসেবে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই পাঁচজন হলেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর গ্রামের মানিক সরকার (২৬) ও বাদশা মিয়া (৫০), তরফকামাল গ্রামের চয়ন মিয়া (২৫) এবং সাহেগঞ্জ গ্রামের আবদুর রশিদ (৬০) ও শাহনেওয়াজ (৩৮)। এর আগে সাঁওতাল প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছিলেন, সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ পাঁচটি মামলা করেছে, তাই সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের ভয়ে তারা মামলা করতে পারছেন না। পুলিশ মামলা নিচ্ছেও না।

এ পরিস্থিতিতে ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাঁওতালদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখান থেকে গাইবান্ধার পুলিশ প্রশাসনকে সরকারের পক্ষ থেকে সাঁওতালরা মামলা করলে তা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত সরকার বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মুঠোফোনে বলেন, এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সহসভাপতি ফিলিমিন বাস্কে মুঠোফোনে বলেন, ‘মামলা নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের ঘরে আগুন, আমাদের পুরোনো বসতবাড়িতে লুটপাট ও সাঁওতাল হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি।’ ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তীরবিদ্ধ হয়েছেন নয়জন এবং গুলিবিদ্ধ হন চারজন। এই সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন সাঁওতাল নিহত হন।

শুধু পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় ওই রাতে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করা হয়। এই মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চারজন সাঁওতালকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা-
সাঁওতালপল্লির শিশুরা ১০ দিন পর গত বুধবার থেকে স্কুলে যাচ্ছে। সাহেবগঞ্জ ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল বাকি জানালেন, তিনি নিজে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে শিশুদের স্কুলে নিয়ে এসেছেন। আবার ছুটির পর তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। বুজরুক বাড়িয়া আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদও শিশুদের স্কুলে আসার কথা জানান।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!