• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বামীর নির্যাতনে ভারসাম্যহীন রুবি এখন শিকলবন্দী


পিরোজপুর প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩১, ২০১৭, ০৭:১৮ পিএম
স্বামীর নির্যাতনে ভারসাম্যহীন রুবি এখন শিকলবন্দী

পিরোজপুর: জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়ায় রুবি বেগম নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর দিন কাটছে শিকলবন্দী অবস্থায়। অন্তঃসত্ত্বা রুবি বেগম (৩২) এর ৭ বছরের একটি পুত্র সন্তান এবং ৩ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামী, শ্বাশুড়ী, ননদ ও স্বামীর ১ম স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার কারণে তাকে শিকল দিয়ে আটকে রাখতে হয় বলে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) এ প্রতিনিধিকে জানান রুবি বেগমের মা হালিমা খাতুন। বর্তমানে আর্থিক অনটনের কারণে তার চিকিৎসা করতে পারছে না বলে জানান হালিমা খাতুন।

রুবি বেগমের ছোট ভাই রুবেল হাসান বলেন, ২০০৬ সালে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার চর হোগলা বুনিয়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে জয়নাল উদ্দিনের সাথে রুবির পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। রুবিকে বিয়ে করার আগে জয়নালের আরো এক স্ত্রী ও মেয়ে ছিল। সে কথা গোপন করে রুবিকে বিয়ে করে জয়নাল। তবে দু’তিন বছর  যেতে না যেতেই নানা অজুহাতে রুবির উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে স্বামী, শ্বাশুড়ি, ননদ ও জয়নালের প্রথম স্ত্রী। শ্বশুর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা এনে দেয়ার জন্য জয়নাল চাপ দেয় রুবিকে। নিরুপায় হয়ে রুবি তাদের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা এনে দিলেও তাতে মন ভরেনি জয়নালের। তাকে তাড়ানোর জন্য জয়নালের পরিবারের অত্যাচারের মাত্রা দিনদিন বাড়তে থাকে। অত্যাচার নির্যাতনে প্রায় ৭ মাস আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রুবি। এ অবস্থায় তিনি ছয় মাস পূর্বে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে স্বামী, শ্বশুড়ি ও বাড়ির লোকজন তাকে পাগল বলে তাড়িয়ে দেয়। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।

রুবিকে নিয়ে আসার পর থেকে সে বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে চাইতো তাই প্রায় ৩ মাস তাকে হাতে পায়ে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান রুবির ভাই রুবেল।

এ ব্যাপারে রুবির মা হালিমা খাতুন বলেন, আমার মেয়েটাকে ওরা বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার করে পাগল বানিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। দুইটা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েও ওদের কোনো মায়া হয় নাই। এমনিতেই মেয়েটি এখন পাগল তার উপর আবার ছয় মাসের গর্ভবতী। মেয়েটিকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। রুবিকে যে উন্নত চিকিৎসা করাবো তার জন্য যে টাকা লাগবে তাও আমাদের কাছে নেই। চিকিৎসা না করানোর কারণে দিনদিন তার অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ঘটনার বিষয়ে রুবির মা হালিমা খাতুন আরও বলেন, স্থানীয় ইউপি, চেয়ারম্যানের কাছে বিষয়টি জানানোর পরে  রুবি পাগল আর তাকে নিয়ে সংসার করবে না বলে জানায় রুবির স্বামী জয়নাল। এ সময় জয়নাল স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে রুবিকে তালাকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করানোর জন্য চেষ্টা করলেও এতে রাজি হননি রুবির মা।

তবে এসব ব্যাপারে রুবির স্বামী জয়নালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, উভয় পক্ষই এর আগে আমার কাছে এসেছিল। আমি উভয়পক্ষকে নিয়েই বিষয়টির একটা মীমাংসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!