• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা মা ও শিশুরা


কক্সবাজার প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭, ০৪:১১ পিএম
স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা মা ও শিশুরা

কক্সবাজার : উখিয়া টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে মা ও শিশুরা রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাবও। ত্রাণ বিতরণে রয়েছেও সমন্বয়হীনতা। এর মধ্যে অপুষ্টির শিকার দুই লাখ শিশু রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে।

সেনাবাহিনীর ধর্ষণের শিকার ২০ হাজার নারীর অবস্থা আরো শোচনীয়। তাদের করুণ চাহনি বলে দেয়, তারা যেন বেঁচে আছে লাশ হয়ে। মৃত্যুর মুখ থেকে পালিয়ে আসা গর্ভবতী ৮০ হাজার নারী রয়েছে দুর্ভোগে। এ ছাড়া বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে ৫০ হাজার।

এদিকে ক্যাম্পগুলোতে খাবার ও পানি সংকটের পাশাপাশি যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগে পরিবেশ দিন দিন বিষিয়ে উঠছে। অপুষ্টি ও খাদ্যাভাবে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে আরো শিশু।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম জানায়, ২৫ আগস্ট থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে মোট ভর্তি হওয়া রোহিঙ্গা রোগীর সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি।

তাদের মধ্যে ডায়রিয়ায় এক হাজার ৫৪১ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ২৯৩ এবং চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২৫ জন। এর বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭ হাজার ৬৮৫ জন রোহিঙ্গা। ইপিআই আক্রান্ত রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৪ জনকে।

কক্সবাজারের উখিয়া সদর হাসপাতালের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা নারীদের একটি বড় অংশ গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা। তারা অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের অনেকেই এর আগে মাতৃসেবা পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। তারা ঠিকমতো খাবারও পাননি।

তাদের প্রয়োজনীয় টিকাও দেওয়া হয়নি। আর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসায় তারা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা মায়েরা যাতে নতুন করে গর্ভবতী না হন আমরা সেদিকেও জোর দিচ্ছি।

শিশুদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যের শিশুরা চরম অপুষ্টির শিকার। আমরা তাদের ৮৪ হাজার শিশুকে হাম ও রুবেলা টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। আশা করি ৪-৫ দিনের মধ্যেই টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারব।

কক্সকাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, গর্ভবতী মায়েদের সেফ ডেলিভারির জন্য। এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার গর্ভবতী মাকে শনাক্ত করেছি। খুব জটিলতা হলে আমরা স্ট্যান্ডবাই অ্যাম্বুলেন্স রেখেছি যাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া যায়।

অপুষ্টির শিকার দুই লাখ শিশু : রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনে কাজ করা কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার দাবি, উখিয়ায়-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় দুই লাখের অধিক শিশুর অবস্থা খুবই নাজুক। অপুষ্টি ও খাদ্যাভাবে তাদের জীবন সংকটের মুখে।

নির্বাক ২০ হাজার ধর্ষিত নারী : উখিয়ার হাকিমপাড়া ক্যাম্পে গেলে এখানে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের ধর্ষণের শিকার হওয়া বেশির ভাগ নারী এ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নির্বাক চাহনিই বলে দেয়, এ সভ্য সমাজের অসভ্য বর্বরোচিত ঘটনায় তারা আজ বেঁচেও মৃতপ্রায়।

অনেকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা কোনো টুঁ শব্দটি করেননি। অনেক চেষ্টার পর এক কিশোরী কথা বলতে রাজি হয়। তিনি জানান, তার মতো ১০-১৫ জনকে রহমতের বিল এলাকার মাদরাসা থেকে ফেরার পথে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। পরে তারা বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে শুনে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

গত দুদিনে উখিয়ার কুতুপালং বালুখালী ও থাইংখালী পরিদর্শন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা। তিনি বলেন, অনেক রোহিঙ্গা নারী মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তারা কিছু বলতে রাজি না।

দুর্ভোগে ৮০ হাজার গর্ভবতী নারী : রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে আশ্রয় নিয়েছে চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। এর মধ্যে ৮০ হাজার গর্ভবতী নারী। মিয়ানমারের সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে পাহাড়, জঙ্গল ও নদী পার হয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছেন। না খেয়ে দীর্ঘপথ হেঁটে বাংলাদেশে আসায় তাদের অবস্থাও গুরুতর।

হাজার হাজার গর্ভবতী নারী শরীর জ্বরে পুড়ছে। অনেকেই পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে অবস্থা আরো চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকলেও বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য এ সেবা নিতান্তই অপ্রতুল।

ত্রাণ দিতে আসা সমাজ উন্নয়নকর্মী ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়িতে বিপন্ন মানবতা। প্রায় দুই লাখের অধিক শিশু মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। ৫০ হাজার বৃদ্ধ মৃত্যুর মুখে।

অসংখ্য নারী ধর্ষিতা হয়ে মুখ বুজে আছে। এমন পরিস্থিতি থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হবে উখিয়া-টেকনাফ। তাই নিবন্ধন শেষে এদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আপাতত বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!