• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে ওষুধের ভুল ব্যবহারে


স্বাস্থ্য ডেস্ক আগস্ট ৮, ২০১৬, ০১:২৭ পিএম
স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে ওষুধের ভুল ব্যবহারে

ওষুধের ঢালাও ও ভুল ব্যবহার হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বেশি লেখা হচ্ছে। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রাহকের ওপর আর্থিক চাপ পড়ছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সমস্যা অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে বেশি।

ওষুধ গবেষক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রোগ নির্ণয়ের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকরা বেশি ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ওপর নজরদারির ব্যবস্থা নেই বলে এর অপব্যবহার হচ্ছে বেশি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কলাবাগানে একটি ওষুধের দোকানে সকাল ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত থেকে দেখা গেছে, এক ঘণ্টায় ৫৪ জন গ্রাহক ওষুধ কিনতে এসেছিলেন। তাদের ২৭ জনের হাতে চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্র ছিল। এর মধ্যে নয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার পরামর্শ ছিল। ১৭ জনের কোনো ব্যবস্থাপত্র ছিল না। তাদের দুজন অ্যান্টিবায়োটিক কেনেন।

২০০৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত অ্যান্টিবায়োটিক গাইডে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বা ভুল ব্যবহারের কারণে ব্যক্তি ও সমাজকে বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে। জাতীয়ভাবে বছরে ওষুধের জন্য যে খরচ হয়, তার ৪০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য- যার পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকার বেশি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের আর্থিক সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশের ছয় বিভাগের ছয়টি জেলা হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে একটি গবেষণা চলছে। ওই গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সার্জারি, জেনারেল মেডিসিন ও শিশু বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজনই ছিল না।

দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, একজন চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগের সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার এড়িয়ে চলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পক্ষে নিয়ম মেনে চলা সম্ভব হয় না। 

ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বেশি হচ্ছে : নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপত্রে একটির বেশি ওষুধ লেখার হার অত্যন্ত বেশি এবং ক্রমশ তা বাড়ছে। কেমন চলছে স্বাস্থ্য খাতের পরিচালনা শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি ব্যবস্থাপত্রে তিন বা তিনের অধিক ওষুধের নাম লেখার হার আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৪ সালে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫ শতাংশ ব্যবস্থাপত্রে তিন বা তিনের অধিক ওষুধের নাম লেখা হতো। ২০০৯ সালে তা বেড়ে ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ব্যবস্থাপত্রে তিন বা তিনের অধিক ওষুধ (পলিফার্মেসি) থাকলে নানা ধরনের ঝুঁকি বাড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটির সভাপতি আ ব ম ফারুক বলেন, প্রতিটি ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। বেশি ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হয়। 

এছাড়া একাধিক ওষুধের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, ওষুধ বিক্রেতার ভুল ওষুধ দেয়ার আশঙ্কা থাকে, ওষুধ গ্রহণে রোগী ভুল করতে পারে। বেশি ওষুধের কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়ে যায়।

ইনজেকশনের অনিরাপদ ব্যবহার : দেশের ছয় বিভাগের ২৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে এক গবেষণা জরিপে (২০০৯) দেখা গেছে, গড়ে ৭৮ শতাংশ রোগীকে ইনজেকশন দেয়া হয়। রোগীপ্রতি ইনজেকশন প্রয়োগের হার সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৪ (ঢাকা বিভাগ) থেকে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ২৬ (খুলনা বিভাগ)।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!