• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বৈরাচার পতন দিবস আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৬, ২০১৬, ১০:২৬ এএম
স্বৈরাচার পতন দিবস আজ

আজ স্বৈরাচার পতন দিবস। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনতার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটে। মুক্তি পায় গণতন্ত্র। দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন পৃথক বাণী দিয়েছেন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর এরশাদ সরকার দেশের রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে গণবিরোধী ধারা প্রবর্তন করে। রাজনৈতিক নেতারাও ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হন।

১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। ঢাকা পলিটেকনিকের ছাত্র মনিরুজ্জামান হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার প্রত্যয় ঘোষণা করে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর হরতালের সময় নূর হোসেনকে স্বৈরাচার এরশাদের বাহিনী গুলি করে। নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা ছিল- ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’।

দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৪ ডিসেম্বর রাতে নাটকীয়ভাবে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরদিন (৫ ডিসেম্বর) সব রাজনৈতিক দলের অনুরোধে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ শর্তসাপেক্ষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণে সম্মত হন। আর ১৯৯০ সালের এই দিনে (৬ ডিসেম্বর) সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর এরশাদের জরুরি আইন জারির প্রতিবাদে সাংবাদিকদের ধর্মঘটে ১০ দিন বন্ধ থাকার পর সারা দেশে এদিন থেকে সংবাদপত্র পুনঃ প্রকাশিত হয়। 

তবে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের ২৫ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি তিন জোটের সেই ঐতিহাসিক রূপরেখা। বরং দুটি বড় রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বের সুযোগে স্বৈরাচারী এরশাদ ও তার দল জাতীয় পার্টি এ দেশের রাজনীতিতে বেশ ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিএনপি এরশাদকে নিয়ে গঠন করেছিল চারদলীয় ঐক্যজোট। এরশাদ প্রায়ই নিজেকে এই চারদলীয় জোটের রূপকার হিসেবে দাবি করেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক। আর দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।    

এরশাদের উত্থান-পতন ও হত্যার রাজনীতি : ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের দীর্ঘ ৯ বছরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালের এই দিনে (৬ ডিসেম্বর) তিনি তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। 

১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করে একটি সামরিক ফরমান (এমএলআর-৮২) জারি করেন এরশাদ। এতে আকারে-ইঙ্গিতে কেউ তার সামরিক শাসনের সমালোচনা-বিরোধিতা করলে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এরশাদের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ শুরু হলে এই এমএলআর-৮২-র অধীনে রাজনৈতিক নেতাসহ হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। 
সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনামলে আন্দোলন-সংগ্রাম ঠেকাতে বহু জাতীয় রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্তরীণ করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের কারারুদ্ধ করেন এরশাদ। বর্তমানে মহাজোট সরকারের মূল দল আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রমুখও রেহাই পাননি। 

রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদের ক্ষমতা দখলকে প্রথমদিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে অনেকটাই নীরবে মিলিটারি স্বৈরশাসন হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিলেও ছাত্ররা মেনে নেয়নি এই সামরিক অভ্যুত্থান। ক্ষমতা দখলের দিনই (২৪ মার্চ ১৯৮২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে পোস্টার লাগাতে গিয়ে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর তিন সদস্য গ্রেফতার হন। এই ছাত্রনেতারা হলেন শিবলী কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান ও আবদুল আলী। পরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। সেই থেকে শুরু হয় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আপসহীন লড়াই।

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে শহীদ বেদিতেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মিছিলের খবর শুনে সাভার সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী চলে আসে, স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর চলে নির্মম নির্যাতন।

সরকারি ফরমান ও তৎপরতার কারণে সে সময় সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লাল-কালো অক্ষরে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন অব্যাহত থাকে। ছাত্রদের দেয়াল লিখন সমানে মুছতে থাকে সামরিক সরকারের তল্পীবাহক পুলিশবাহিনী। পুলিশ যত দেয়ালে সাদা চুন টেনে মুছে ফেলে, ছাত্ররা ততই দেয়াল লিখন চালিয়ে যেতে থাকে। এভাবেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলছিল দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ সময় ছাত্রনেতারা একটি সর্বাÍক গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়া হয়। সেটাই ছিল সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম লিখিত প্রতিবাদ।

পতনের সিঁড়ি : সামরিক স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী প্রথম বড় ধরনের আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি, যা মধ্য ফেব্র“য়ারির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। আর এদিন থেকেই শুরু হয় সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ আমলের রক্তঝরার ইতিহাস। এদিন মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কাঞ্চন, জাফর, জয়নাল, আইয়ুব, দিপালী ও ফারুক। ১৫ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাম্মেল পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ১৪ ফেব্র“য়ারি ছাত্রসংগ্রাম আহূত সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সকাল প্রায় ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন জয়নাল, জাফর, দিপালী সাহাসহ কয়েকজন। নিহতদের কয়েকজনের লাশ গুম করে সরকার। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। একই সঙ্গে ওই সময় পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় এবং ব্যাপকসংখ্যক ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ছাত্রহত্যা ও পুলিশি হামলার প্রদিবাদে পরদিন এ আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাবালনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পরদিন সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। 

কিন্তু সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা এতটাই ব্যাপক ছিল যে এই বিক্ষোভ ও ছাত্রহত্যার ঘটনার বিষয়ে পরদিন কোনো পত্রিকায় সরকারের প্রেসনোটের বাইরে অন্য কোনো খবর প্রকাশ হতে পারেনি।

রক্তাক্ত ১৪ ফেব্রুয়ারির পটভূমি : এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর প্রায় এক বছর ধরে চলে আন্দোলনের প্রস্তুতি। ১৯৮২ সালে শিক্ষা দিবস (১৭ সেপ্টেম্বর) সামনে রেখে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ১৬ সেপ্টেম্বর মৌন মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মুনির-হাসিব), বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রঐক্য ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন। এরপর ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর উপলক্ষে ৮ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মুনির-হাসিব)। পুলিশ এ মিছিলের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় ৗ লাঠিচার্জ করে। ফলে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের তীব্র সংঘর্ষ বাধে এবং এ সংঘর্ষ কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলে। পুলিশ একপর্যায়ে কলাভবনের ভেতরে ঢুকে ছাত্র এবং শিক্ষকদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায়। এতে অনেক ছাত্রছাত্রী এবং কয়েক শিক্ষক আহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন (৮ নভেম্বর) ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ঐক্য আরও দৃঢ় হয় এবং ১৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ার পর ১৩ ডিসেম্বর এ সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচির ডাক দেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি এরশাদের উপদেষ্টা মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়। 

অবিরাম রাজনৈতিক হত্যা : এরশাদ তার দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনামলে আন্দোলন-সংগ্রাম প্রতিহত করতে কত মানুষ হত্যা করেছেন, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে ১৯৮৩ সালের মতোই তার শাসনামলজুড়ে ছিল গণতন্ত্রকামী সংগ্রামীদের মৃত্যুর মিছিল। 

১৯৮৪ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল চলাকালে নিহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন ও ইব্রাহিম সেলিম। ১ মার্চ সেলিম ও ইব্রাহিম হত্যার প্রতিবাদে সাত দল ও ১৫ দল হরতাল ডাকে। সেই হরতালে নিহত হন শ্রমিক তাজুল ইসলাম। ২৭ সেপ্টেম্বরের হরতালে ঢাকার কালিগঞ্জে নিহত হন রাজনৈতিক নেতা ময়েজ উদ্দিন। এদিন স্বপন কুমার, নেত্রকোনায় তিতাস ও অপর একজন নিহত হন। ঢাকায় পুলিশের গুলিতে একজন রিকশাওয়ালা ও ফুটপাতের একজন দোকানদার এবং ঢাকার বাইরে আরো দুজন নিহত হন। ২৪ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গায় ফজলুর রহমান নামে একজন নিহত হন। ২২ ডিসেম্বর রাজশাহীতে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় হলের বাবুর্চি আশরাফ, ছাত্র শাজাহান সিরাজ ও পত্রিকার হকার আবদুল আজিজ।

১৯৮৫ : ১৩ ফেব্র“য়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া। ১৯ মার্চ হরতাল চলাকালে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ২২ এপ্রিল মিছিলে বোমা হামলায় একজন, ৯ অক্টোবর তেজগাঁও পলিটেকনিকে ৪ জন, ৩০ অক্টোবর ছাত্রনেতা তিতাস, ৩১ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে বিডিআরের গুলিতে ছাত্র স্বপন ও রমিজ নিহত হন। ৭ নভেম্বর আদমজী জুট মিলে ধর্মঘটে হামলায় ১৭ শ্রমিক এবং বিডিআরের গুলিতে তিন শ্রমিক নিহত হন।

১৯৮৬ : ৭ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিহত হন পাঁচজন, ১৪ মে হরতালে নিহত হন আটজন, ১৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনে নিহত হন ১১ জন, ১০ নভেম্বর হরতাল চলাকালে ঢাকার কাঁটাবন এলাকায় সাহাদত নামে এক কিশোর নিহত হয়।

১৯৮৭ : ২২ জুলাই জেলা পরিষদ বিল প্রতিরোধ ও স্কপের হরতালে নিহত হন তিনজন, ২৪ অক্টোবর শ্রমিক নেতা শামসুল আলম, ২৬ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কৃষক জয়নাল, ১ নভেম্বর কৃষক নেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা, ১০ নভেম্বর নূর হোসেন নিহত হন এবং ১১ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবুল ফাত্তাহ, ছাত্র বাবলু, যুবনেতা টিটো, শেরপুরের আমিনবাজারে পুলিশের গুলিতে উমেছা খাতুন, গোলাম মোহাম্মদ আসলাম, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোকন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো তিনজন নিহত হন। এরপর ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছাত্রনেতা দৌলত খান নিহত হন। 

১৯৮৮ : ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় আগত মিছিলে গুলিবর্ষণে নিহত হন ২২ জন। তারা হলেন ক্ষেতমজুর নেতা রমেশ বৈদ্য, হোটেল কর্মচারী জি কে চৌধুরী, ছাত্র মহিউদ্দিন শামীম, বদরুল, শেখ মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন ও আলবার্ট গোমেজ, আবদুল মান্নান, কাশেম, ডি কে দাস, কুদ্দুস, পংকজ বৈদ্য, চান মিঞা, হাসান, সমর দত্ত, পলাশ, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, সাহাদাত হোসেন। ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনের সময় হামলায় ১৫ জন নিহত হন। 

১৯৯০ : ১০ অক্টোবর সচিবালয়ে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের গুলিতে ছাত্র জেহাদ ও মনোয়ার, হকার জাকির, ভিক্ষুক দুলাল, ১৩ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মনিরুজ্জামান ও সাধন চন্দ্র শীল, ২৭ অক্টোবর হরতাল চলাকালে ঢাকার বাইরে দুজন, ১৪ নভেম্বর আদমজীতে ১১ জন, ২৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়ের দোকানদার নিমাই, ২৭ নভেম্বর ডা. শামসুল আলম মিলন, ২৮ নভেম্বর মালিবাগ রেলপথ অবরোধে দুজন, ৩০ নভেম্বর রামপুরায় বিডিআরের গুলিতে একজন, ১ ডিসেম্বর মিরপুরে ছাত্র জাফর, ইটভাঙা শ্রমিক আবদুল খালেক, মহিলা গার্মেন্টকর্মী ও নুরুল হুদাসহ সাতজন, আট মাসের শিশু ইমন, নীলক্ষেতে একজন, কাজীপাড়ায় দুজন এবং ডেমরার যাত্রাবাড়ীতে দুজন, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একজন, খুলনার খালিশপুরে মহাব্রজ, নারায়ণগঞ্জের মণ্ডলপাড়ায় এক কিশোর, ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে দুজন, ২৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ময়মনসিংহে দুজন, রাজশাহীতে দুজন, ধানমণ্ডিতে একজন ও জিগাতলায় একজন নিহত হন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!