• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্মার্ট কার্ড বিতরণে অভিযোগের স্তূপ


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৪, ২০১৭, ১২:৫২ পিএম
স্মার্ট কার্ড বিতরণে অভিযোগের স্তূপ

ঢাকা: উন্নত প্রযুক্তির স্মার্ট কার্ড বিতরণে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কারণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সরবরাহকারী ও বিতরণকারী মাঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

মাঠ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ব্যয়ের চেয়ে বরাদ্দ কম, যন্ত্রাংশের অপ্রতুলতা, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি, অনেকের স্মার্ট কার্ড খুঁজে না পাওয়া; সে বিষয়ে নজর না দেওয়া, ভোটারদের তথ্যের অসংগতি দূরকরণী ফরম সরবরাহ না করা ও লম্বা তালিকা দিয়ে ভিআইপিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে বিতরণ কর্তৃপক্ষ মাঠ কর্মকর্তাদের সব অভিযোগ সঠিক নয় জানিয়ে বলেন, দুই-একটা ছাড়া সবক্ষেত্রেই সর্বদা সহযোগিতা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রাজধানীর সিটি করপোরেশনের পর চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে স্মার্ট কার্ড বিতরণের কাজ। এখন পর্যন্ত ঢাকায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ হয়েছে ৭০ শতাংশ বলে দাবি করেছে এনআইডি কর্তৃপক্ষ। তবে মাঠ কর্মকর্তাদের পরিসংখ্যান বলছে বিতরণ হয়েছে অনেক কম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা জেলার এক থানা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, তার এলাকায় মোট ভোটার ৪ লাখ ২৯ হাজার। সেখানের একটি ওয়ার্ডে ৬৫ হাজার ভোটারের মধ্যে ৪ হাজার স্মার্ট কার্ডের হদিস নেই। সংশ্লিষ্ট কার্ডের আইডি নম্বরটি এন্ট্রি দিলে বলছে, ‘নট ফাউন্ড’ অর্থাৎ তারটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত কমিশন থেকে পাওয়া ৬১ হাজার কার্ডের মধ্যে অনেকগুলো অবিতরণ রয়েছে।

একই সমস্যা অন্য সহকর্মীদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, একটি এলাকায় দু-পাঁচজন ভিআইপির কার্ড আগে দেওয়ার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হলেও শ’ শ’ সুপারিশ স্বাভাবিক কাজের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এ সমস্যা রমনা ভিআইপি এলাকায় বেশি বলে জানান সেখানকার একজন। তিনি বলেন, এসব ভিআইপি কার্ডটি পেতে প্রচলিত নিয়মটি মানতে নারাজ। অথচ প্রত্যেক ভোটারের ১০ আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) আবদুল বাতেন বলেন, স্মার্ট কার্ড পেতে ভিআইপিরা অগ্রাধিকার পাবেন। একে নিয়মের ব্যত্যয় বলা যাবে না। তবে অধিক সংখ্যায় এটা করাটা সমীচীন নয়। আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ ছাড়া একটিও কার্ড বিতরণ করা যাবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলেন, অনেক ভোটারের স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট করতে গিয়ে ‘নট ফাউন্ড’ দেখাচ্ছে। কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ভোটারের তথ্যে গরমিল রয়েছে। অথচ তথ্য সংশোধনের জন্য যে আবেদন ফরমটি প্রয়োজন, সেটাও থানা নির্বাচন অফিসে সরবরাহ করছে না।

ফলে ভোটারদের এসব অভিযোগ অনুযোগ শুনতে হচ্ছে, যাতে স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটছে। তবে ফরম সরবরাহ না করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এনআইডির পরিচালক অপারেশন। তিনি বলেন, তাদের সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত বছরের অক্টোবরে ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা স্মার্ট কার্ড প্রকল্পে সম্পৃক্ত হওয়ার পর অনেকের বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি করছে ইসি। তাদের ভোটারপ্রতি ১০ টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা টালবাহানা।

একজন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, তাদের সম্মানীর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা চাহিদাপত্র চান। ইতোমধ্যে কয়েক দফা চাহিদাপত্র দিলেও বকেয়া পরিশোধে পুরনো গল্পই শুনিয়ে যাচ্ছেন। আর স্মার্ট কার্ড বিতরণে যন্ত্রাংশে রয়েছে স্বল্পতা। আর প্রতি ভোটার স্লিপে ন্যূনতম খরচ ৩০ পয়সা হলেও ৪ লাখ ভোটার অধ্যুষিত এলাকায় একজন থানা নির্বাচন অফিসারের খরচ লাখ টাকার ওপরে।

অথচ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন রাজধানীর একজন থানা নির্বাচন অফিসার। অথচ এ টাকার মধ্যে কম্পিউটারের মাউস, কিবোর্ড, পান্স, স্ট্যাটলার, মাল্টিপ্লাক ও হাব কিনতেই ব্যয় হয় ১ হাজার ২৫০ টাকা। একইভাবে, স্মার্ট কার্ড প্রচারে মাইকিংয়ের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ৫ হাজার, যা খুবই অপ্রতুল।

আর নারায়ণগঞ্জ সদরে ভোটার ৯ লাখ, গাজীপুরে ১০ লাখ, গুলশানে ৬ লাখ, ডেমরায় ৬ লাখ, মিরপুরে সাড়ে ৬ লাখ, পল্লবী, লালবাগ ও সবুজবাগে ৪ লাখ করে ভোটার রয়েছেন। কিন্তু বরাদ্দের ক্ষেত্র একই। এটা বড় বৈষম্য বলে মনে করছেন তারা। তারা আরো বলেন, স্মার্ট কার্ড বিতরণ করতে গিয়ে তাদের পকেটের টাকা ব্যয় হচ্ছে। আবার কোনো ভিআইপি গেলেও তাদের পেছনে ব্যয় করতে হয়।

এ প্রসঙ্গে আবদুল বাতেন বলেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের যে পরিমাণ কাজ হয়েছে সমপরিমাণ পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রচারণায় মাইকিং বাবদও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ভোটার স্লিপ বাবদ যে টাকার কথা বলছেন, তাদের চাহিদাপত্র পেলে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে মাঠ কর্মকর্তাদের করা সব অভিযোগ সঠিক নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচআর

Wordbridge School
Link copied!