• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ ধরপাকড়ে সতর্ক বিএনপি!


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮, ০৯:৩৮ পিএম
হঠাৎ ধরপাকড়ে সতর্ক বিএনপি!

ঢাকা: কোনও ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েকদিনের অভিযান বিএনপির শীর্ষস্থানীয়সহ দুই শতাধিক নেতকর্মী আটক ও গ্রেফতার হয়েছেন। এতে করে দলটির সর্বস্তরে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তবে হঠাৎ গ্রেফতার অভিযানে শীর্ষ ও মাঠপর্যায়ের নেতারা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও ভেঙে পড়েনি বিএনপি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হলে চলমান বৈরী পরিস্থিতি সামলে দলটি চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে যাওয়ারই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দলটির নেতারা মনে করছেন, জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সরকার বিএনপি প্রধানকে সাজা দিতে চাইছে। এর লক্ষ্য দুটি। এক. বেগম জিয়াকে আটক রেখে বিএনপির দুর্বল অবস্থানকে নির্বাচনের মাঠে পুঁজি হিসেবে কাজে লাগানো। 

দুই. সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের যে বিরূপ মনোভাব আছে সেটা যাতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে না পারে। অর্থাৎ বিরোধী দলকে দুর্বল করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সরকারি দলের মূল টার্গেট।

সরকারি দলের কাছে তথ্য রয়েছে, সামনে যেকোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। আর সেই নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, তাহলে ২০১৪ সালের মতো অবস্থা না-ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যাওয়ার পথ কঠিন হয়ে যেতে পারে।

ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে আগামী নির্বাচনে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশসহ প্রভাবশালী দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীরা বারবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে তাগিদ দিয়ে আসছে, সে বিষয়টি উপেক্ষা করা সম্ভব না-ও হতে পারে। ফলে আগামী নির্বাচনে জয়লাভে সব ধরনের কৌশল গিয়ে পড়ছে তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ওপর।

বিএনপির কৌশল ছিল- বেগম জিয়ার রায় পারবর্তী আন্দোলন পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রূপ দেয়া হবে। সরকার বিরোধী দলের এ কৌশল বুঝতে পেরেছে। সে কারণে সরকার এখনই বিএনপিকে দুর্বল করে দিতে চায়। রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাতে ভয় ধরিয়ে দেয়াই তাদের প্রথম লক্ষ্য। গত মঙ্গলবার পুলিশের ওপর একটি হামলাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান চলছে।

রাজধানীতে এই অভিযান চলছে আরো জোরেশোরে। ইতোমধ্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়সহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের দুই শতাধিক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। এর পাশাপাশি বিএনপিতে ভাঙন ধরানোরও তৎপরতা চলছে। চেষ্টা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ তথ্য জানার। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে বিএনপিতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ার পর ৮ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে কৌশল পাল্টে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। রাজপথে ব্যাপক গণজমায়েতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রায়ের দিন লাখো কর্মীকে রাজপথে নামার নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। রায় বিপে গেলে রাজপথে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানানো হবে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে একাধিক টিম ইতোমধ্যে তৃণমূল সফর করে কেন্দ্রের এমন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। তৃণমূলের পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী সংগঠনও দিনটিকে ঘিরে আলাদা প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

প্রতিটি নেতাকর্মী যাতে ওই দিন রাজপথে থাকে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রায়ের দিন যারা রাজপথে থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। সিনিয়র নেতাদেরও ওই দিন রাজপথে নামতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, সরকার রায়ের দিন বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেবে না এমনটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। রায়কে ঘিরে তৃতীয় প যাতে কোনো স্যাবোটাজ করতে না পারে সে দিকেও সতর্ক আছে দলটি। 

তবে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিলেও সঙ্ঘাতের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেবে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীনেরাো রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারই সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে।

সোনালীনিউজ/জেএ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!