• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ নমনীয় আ.লীগ, বিএনপি চায় ওপেন সমাধান


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১১, ২০১৮, ০৮:৪০ পিএম
হঠাৎ নমনীয় আ.লীগ, বিএনপি চায় ওপেন সমাধান

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে হঠাৎ করে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নমনীয়। কিসের সংলাপ, কার সঙ্গে সংলাপ? এমন প্রশ্ন যারা করতেন, তারাও এখন নমনীয়। শনিবার (১১ আগস্ট) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ফোন করলে আলোচনা হবে, এমন শর্ত দিয়ে আলোচনা হতে পারে না। শর্ত দিয়ে নয়, বিএনপির সঙ্গে শর্তহীন আলোচনা হতে পারে। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে স্বচ্ছ মন নিয়ে আলোচনার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শুন্য টেবিলে তো আর আলোচনা হয় না। আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু থাকতে হবে। একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে আলোচনা হওয়া দরকার সেই আলোচনার জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা যদি বলে এটা হবে না, ওটা হবে না তাহলে তো বুঝতে হবে তাদের মন সাদা নয়। স্বচ্ছ মন নিয়ে আলোচনার জন্য আসুক তাহলে আমরা সেই আলোচনার জন্য সব সময় প্রস্তুত। 

সূত্র জানায়, হঠাৎ ঘরে-বাইরে চাপ অনুভব করছে সরকার। সামলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু এখনো সঠিক গতিসীমায় পৌঁছাতে পারেননি ক্ষমতাসীনরা। গত কয়েক দিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের তৎপরতায় এমন চিত্র দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে নানা মেরুকরণ হয়, এবারও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় দলগুলো জোট-মহাজোটে আবদ্ধ। যারা জোটের বাইরে আছে তারাও নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও শক্তি বাড়াতে ব্যস্ত। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শাসনামলের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা সব সময় মাঠে সক্রিয় ভূমিকায় ছিল তাদের নিয়ে মহা টেনশনে সরকার। 

এদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে যেসব দল অংশ নেয়নি, তারাও মাঠে তৎপর সরকারের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে। ঠিক এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা শঙ্কিত দুই জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো আসলে কোন পথে হাঁটে, তা নিয়ে। অন্যদিকে সরকার শুধু অভ্যন্তরীণই নয়, বাইরের চাপও অনুভব করছে। একটি অংশগ্রহণমূক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার চাপে রয়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে। এসব কারণে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দৌড়ের ওপর রয়েছেন। তারা এক মিনিটও বসে নেই। ঘরে-বাইরে দৌড়াচ্ছেন। সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রকাশ্যে ও গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। ছোট দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টার পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটে থাকা একাধিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে সরকার। এমনকি বিএনপির সঙ্গেও একটি গোপন সংলাপের দিনক্ষণ ঠিক হয়, যেটি পরবর্তীতে বাস্তবায়ন হয়নি। অবশ্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট মনে করছে, সরকারের সঙ্গে সংলাপ হতেই পারে। কিন্তু তা হতে হবে প্রকাশ্যে, গোপনে নয়। তবে পরিস্থিতি যাই হোক সরকার তা সামলে নেয়ার চেষ্টায় রয়েছে। 

সম্প্রতি এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎ ও আলোচনা দৃশ্যমান। সচিবালয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এসব সাক্ষাতে আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ করা না হলেও আলোচনা যে হয়েছে, তা সকলেরই জানা, কিন্তু নেপথ্যে আরো দৌড়ঝাঁপ চলছে। গত ২৬ জুলাই দুপুরে হঠাৎ রাজনৈতিক সংকট সমাধানে যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। 

জানা গেছে, ওই দিন রাতে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে একটি বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক হয় অভ্যন্তরীণ সংলাপের। রাজধানীর গুলাশান-২ এ ৯৬ নম্বরে রোডের ১৯ নম্বর বাড়িতে ‘হোটেল সিক্স সিজন’ এ দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। রাতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের ফাঁকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির মহাসচিবের নেতৃত্বাধীন পৃথক দুটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হওয়ার সময় নির্ধারণ হয় রাত আটটায়। ঠিক আটটায়ই যথাস্থানে উপস্থিত হন ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব ছাড়া অন্য নেতারাও রাত ৮টার আগেই হোটেল সিক্স সিজনে উপস্থিত হন। কিন্তু সোয়া ৮টায় বিএনপি মহাসচিব ফোনে জানান, তিনি অসুস্থ, তাই আজকের এই সভায় অংশ নিচ্ছেন না। ফলে সবাই হতাশ হন। রাত পৌনে ৯টায় বের হয়ে যান ওবায়দুল কাদের। যাওয়ার সময় বলে যান আজকের (২৬ জুলাই) বৈঠকটি হলো না, যদি আবার সময় সুযোগ আসে তাহলে হবে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এতথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। 
এ বিষয়ে বিরোধী দলের সাবেক চিফ হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুকের বলেন, এ বৈঠকের বিষয়ে জানতে অনলাইন নিউজ পোর্টালের ১৩ ও পত্রিকার ৪ জন সাংবাদিক তাকে ফোন করেছেন। তাদের তিনি বলেছেন, এ ধরনের কোনো বৈঠকের খবর তিনি জানেন না। 

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যাগুলো সমাধানের আহবান জানানো হয়েছে সরকারকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলগুলোর সেই আহবানে কোনো পাত্তাই এতোদিন দেয়া হয়নি। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন মন্ত্রী উল্টো বলেছেন, কীসের সংলাপ, কার সঙ্গে সংলাপ, সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু হঠাৎ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কণ্ঠে নরম সুর বেজে উঠলো। উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করলো। যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী হয়ে উঠলো আওয়ামী লীগ। 

গত ২৬ জুলাই দুপুরে এক সভায় ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি আলোচনা করতে চাইলে তাতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে। দলটির এতে কোনো আপত্তি নেই। বিএনপির সঙ্গে টেলিফোনে কথা হতে পারে। ফোনে যোগাযোগ করেও অনেক কঠিন সম্পর্কের বরফ গলে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কেউ আলোচনার ইচ্ছে প্রকাশ করলে সরকার তা বিবেচনা করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চাপ অনুভব না করলে আওয়ামী লীগ সংলাপের জন্য ইচ্ছা পোষণ করার কথা নয়। ভেতর ও বাইরের চাপেই সরকার এখন আলোচনায় আগ্রহী হয়েছে। 

গত ২৯ জুলাই রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী নাগরিক দল আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিপদে আছেন বুঝতে পেরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছেন। তিনি (কাদের) যদি টেলিফোন করেন আমাদের মহাসচিবকে, তাহলে আমাদের মহাসচিব বলবেন, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনের সময় আনতে হবে। এটা তিনি টেলিফোনেও বলবেন। আবার যদি মহাসচিবের সাথে দেখা করেন, সেখানেও তিনি একই কথা বলবেন। 

চাপে হোক বা সময়ের প্রয়োজনেই হোক, বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত সরকার। কিন্তু বিএনপির সমর্থকরা মনে করছেন, কোনো গোপন সংলাপে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ এর আগেও আওয়ামী লীগ অনেক কথা দিয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের আগে তারা বলেছিল এটা (দশম জাতীয় সংসদ) নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিছু দিন পরই আলাপ-আলোচনা করে বিকল্প একটি নির্বাচন দেয়া হবে এবং সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই কথাও রাখেনি বলে জানায় বিএনপি সূত্র। 

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!