• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সংসদে বাজেট নিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা

হঠাৎ বিরোধী দল জাপা!


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৮, ২০১৭, ০২:৫১ পিএম
হঠাৎ বিরোধী দল জাপা!

ঢাকা : সংসদে হঠাৎ প্রকৃত বিরোধী দলের ভুমিকায় জাতীয় পার্টিকে দেখা গেলো। দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি থাকলেও কখনোই দলটির সাংসদের সরকারের তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুরে সংসদ অধিবেশনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বর্ধিত আবগারি শুল্ক নিয়ে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে দলটির একাধিক সাংসদ।

এসময় দীর্ঘদিন পর নির্দিষ্ট একটি ইস্যুতে খানিক সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে উঠে সংসদ। এসময় জাতীয় পার্টির সাংসদরা বলেন, বর্ধিত এই শুল্ক আরোপ প্রস্তাবের কারণেই সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হয়েছে। যদিও পরে এসব সমালোচনার জবাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, মদ-গাঁজা-বিড়িতে আবগারি নেবেন। এখন আমার আমানতের ওপর ধরলেন। কেন ব্যাংকে টাকা রাখবেন? ব্যাংকে আমানত রাখবেন আবাগারি শুল্ক বসিয়েছেন। আগে সুদ থেকে টাকা কাটা হতো এখন কাটবেন আসল থেকে। ভোটের আগে বাজেট.. ভোট যে কি পরিমাণ নষ্ট হয়েছে রাস্তায় না গেলে বুঝবেন না। তিনি বলেন, সরকারে গেলে দুই ধরনের লোকের অভাব হয় না। একটি হলো তেল দেওয়া আরেকটি হলো বাঁশ দেওয়া। ব্যাংক লুট যারা করেছে তাদের বিচার না করে জনগণকে..। জনগণকে পুতুল ভাববেন না।

তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনি আমাদের বিরোধী দল মনে করতে পারেন। আমাদের কেউ বিরোধী দল মনে করে না। আমাদের সবাইকে পুতুল বানিয়ে ফেলেছে। পুতুলের মতো নাচি-খেলি। সামনে নির্বাচন। জনগণের একটু মনোভাব নিয়েন। সামনে যারা আছে তারা সব না। অন্য মানুষের কথা শুনবেন।

ফিরোজ রশীদ বলেন, ’৭০ সালের নৌকা আর এখনকার নৌকা এক না। ’৭০ সালের নৌকা ছিল ছোট। ছোট নৌকা নিয়েই কিন্তু বঙ্গবন্ধু সাড়ে ৭ কোটি লোক নিয়া দেশ স্বাধীন করেছিলেন। এখন বাজেট অনেক বড়, নৌকাও অনেক বড়। নৌকায় কারে উঠায়ছেন এখন? আস্তিক, নাস্তিক, বামপন্থি-চরমপন্থি সব নৌকায় উঠাইছেন। এত পরিমাণ উঠছে যে, নৌকা এখন ডুবো ডুবো। এই আস্তিক নাস্তিক নিয়া সাগর পাড়ি দিবেন ক্যামনে? যেখানে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা উঠতে পারে নাই। ভোট দেন দেখবেন, এই আস্তিক-নাস্তিক আর হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের সাথে ত্যাগী আওয়ামী লীগারদের দূরত্ব বেড়ে গেছে।

বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছোটবেলায় পুতুলকে মানুষ ভেবে খেলি। আরো একটু বড় হলে মানুষকে পুতুল ভেবে খেলি। মাননীয় অর্থমন্ত্রী। দেশের সমস্ত জনগণকে মনে করেছেন পুতুল। পুতুলের যেমন বাকশক্তি নাই। এই দেশের ১৬ কোটি মানুষও বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে, তাদের কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তাদের বোধ শক্তি নেই। তাহলে কি এখানে এ বাজেট আসে? ৪৯টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২৭টি মন্ত্রণালয় বেশি খরচ করে ফেলেছে। একজন বলেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা মাত্র। এক লাখ কোটি টাকা যেহেতু পাচার হয়ে গেছে দেশ থেকে। তাহলে ওই ১৮ হাজার কোটি টাকা কিছুই না। সেইজন্য এটা বলে।

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, খরচ তো হয়েই গেছে টাকা। এখন আইসেন সংসদে, কেন? এই টাকা হচ্ছে জনগণের টাকা। জনগণের ট্যাক্সের টাকা। খরচ কইর‌্যা আইসেন আমাদের বৈধতা দেন। আমাদের বৈধতা তো দিতেই হবে। কারণ সরকারি দল হ্যাঁ-না ভোটে জিতে যাবে। বৈধতা হয়েই গেল। এটা অনৈতিক অসাংবিধানিক।

জাপার আরেক সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, একজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেছেন সমুদ্র কি নৌকা দিয়ে পাহারা দেওয়া যায়? যায় না। সমুদ্র পাহারা দিতে হলে জাহাজ কিনতে হবে। আমিও তাই বলবো। নৌকা দিয়ে কিছুই করা যাবে না। নৌকায় আপনারা সবাই উঠে পরেছেন। নৌকা এখন ডুবো ডুবো। তাই আমি আরো বলবো, নৌকা দিয়ে সমুদ্র পাহারা দেয়া যাবে না। নৌকা দিয়ে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেয়া যাবে না। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে হলে আরো কিছু লাগবে। কি লাগবে? লাঙল লাগবে।

জাতীয় পার্টি দলীয় এই এমপি বলেন, গত ৩ বার লাঙল দিয়ে আমরা আপনাদের সাহায্য করেছি। তবে প্রবলেম কোথায় জানেন? আপনাদের সাহায্য করার পর ভুলে যান। এবারও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের কি ভূমিকা ছিল। সেটা ভুলে গেছেন। ৩ জনকে দিয়ে সহায়তা করছি। আরও চাইলে সামনে বসে আছেন, দেওয়া যাবে।

তিনি বলেন, এক লাখ টাকার উপরে ট্যাক্স-আবগারি শুল্ক ধরা হলে মূলধন কমে যায়। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে চায় না। বালিশের নিচে, মাটির নিচে। মাটির নিচেও প্রবলেম আছে। সেটা নাকি সরকারের। আকারে-প্রকারে অর্থমন্ত্রী রেকর্ড করতে চান। পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে খাজনা বেশি আদায় করতে হবে। সরকার মানেই খাজনা আদায়কারী, জনগণ মানেই খাজনা দেওয়নওয়ালা।

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কোনো উদ্দোগ নেই জানিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, অর্থ পাচার রোধে আইন করেছে। কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ করছে না। বিদেশে অর্থপাচার করে কথিত শিল্প উদ্যোক্তারা গাড়ি বাড়ি করেছেন। রেমিটেন্স কম আসছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন, মেগা প্রকল্প নিয়ে মেগাজটে পড়েছে সরকার। সামনে নির্বাচন আগামী ২ বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। পার ক্যাপিটা ইনকাম..। অর্থনীতি ভয়াবহ অবস্থায় আছে। আশা করি অর্থমন্ত্রী সবকিছু উতরে এগিয়ে নেবেন দেশকে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর (বগুড়া-৬) শুল্ক আবগারি প্রসঙ্গে বলেন, যে ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে এখন যদি ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকাও নেওয়া হয় তাহলেও ইমেজ পূরণ হবে কিনা জানি না। অর্থমন্ত্রী বলেছেন পৃথিবীর সব ব্যাংকে চুরি হয়। এক লাখ টাকা যে রাখে সে ধনি। এ কথাগুলো কতটুকু গ্রহণযোগ্য..?

জাতীয় পার্টির সাংসদদের এমন বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন,  ব্যাংকে আমানতের ওপর কর অনেক আগে থেকেই রয়েছে। ব্যাংকে আমানতের ওপর কর ধার্য নতুন কিছু নয়। এটা আগে থেকেই ছিল। আমি করের হারটা একটু বাড়িয়েছি।

তিনি বলেন, অর্থপাচার যেটা হয় সেটা বেআইনি। সেটা বন্ধ করার সুযোগ নেই। তবে যেটা আমরা করতে পারি, তা হচ্ছে পাচারের সুযোগ কমানো। এর অর্থ হচ্ছে কালো টাকা দেশে যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী মাসের মধ্যেই এটা দেখা যাবে।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আগেই বলেছি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কিছুটা কমানো হবে। সাধারণত সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাজারের সুদের হারের থেকে একটু বেশি রাখা হয়। তবে খুব বেশি রাখা উচিত নয়। আমাদের সামগ্রিক একটি হিসাব হলো যে, মার্কেট ইন্টারেস্ট রেটের থেকে কমপক্ষে দুই শতাংশ বা তার বেশি রাখা দরকার। সেই অনুযায়ী, এই রেট নির্ধারণ করা হবে। তবে এজন্য একটু সময় লাগবে।

রেমিটেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার রেমিটেন্স কিছুটা কমেছে। তবে রেমিটেন্স কমার বিষয়টি বাংলাদেশের একার বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া প্রত্যকটি দেশেরই রেমিটেন্স কমেছে। তিনি বলেন, আমি গত কয়েক বছর কালো টাকা সাদা করার কোনও প্রস্তাব নিচ্ছি না। নিয়মিতভাবে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা প্রচলিত আইনে রয়েছে। এক্ষেত্রে স্থায়ী জরিমানা দিতে হয়। তা বহাল রয়েছে। গত দুই বছর ধরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তখন থেকেই এ ব্যবস্থা চলছে। এটা অব্যাহত থাকবে। অবশ্য এক্ষেত্রে বড় আকারের জরিমানা রয়েছে। ২০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়।

আগামী অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে মুহতি বলেন, এবারের বাজেট অত্যন্ত ভালো বাজেট। আমার ৮৪ বছরের যে অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা বা ব্যর্থতা সব কিছু নিয়েই তৈরি করেছি। সম্পূরক বাজেটে সে রকম কৃতিত্ব দাবি করি নাই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!