• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জ শহরের বিদ্যুৎ যাচ্ছে টমটমের পেটে!


হবিগঞ্জ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৫, ২০১৭, ০৪:৪৯ পিএম
হবিগঞ্জ শহরের বিদ্যুৎ যাচ্ছে টমটমের পেটে!

হবিগঞ্জ: শহরের বিভিন্ন এলাকায় যততত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ টমটমের গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে নামমাত্র মিটার ব্যবহার করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে টমটমের ব্যাটারি চার্জ দেয়া হচ্ছে। এ কারণে হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুত বিভ্রাট হচ্ছে। গত ১২ নভেম্বর হবিগঞ্জ শহর ও শহরতলীর তিন অবৈধ টমটম গ্যারেজ মালিকের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই দিন আলমবাজারের তাজউদ্দিনের গ্যারেজ, উমেদনগর বানিয়াচং সড়কের আব্দুল খালেক কাজলের গ্যারেজ ও একই এলাকার লস্কর মিয়ার গ্যারেজকে আর্থিক জরিমানা করা হয়।

হবিগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফীন জানান, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে আব্দুল খালেক কাজল ও লস্কর মিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ আইনে মামলা চলমান আছে এবং তাজউদ্দিনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- হবিগঞ্জ শহরে ৫ হাজারের বেশী ব্যাটারী চালিত টমটম চলাচল করে থাকে। এসব টমটমের ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য ছোট বড় মিলিয়ে শহরের বগলাবাজার, চিড়াকান্দি, মাছুলিয়া ব্রিজের পূর্ব পাড়ের একটি মার্কেট, খাদ্য গুদাম রোড, পুরানমুন্সেফী, ২নং পুল, তেঘরিয়া আবাসিক এলাকা, বহুলা এবং কোর্ট স্টেশন এলাকা, পোদ্দার বাড়ি, মোহনপুর, তেঘরিয়া, পৈল রোড, অনন্তপুর, মাহমুদাবাদ, শ্যামলী, শ্মশানঘাট, নোয়াবাদ, উমেদনগর, রাজনগর, জালালাবাদ, আনোয়ারপুর, পাতাড়িয়া, আলমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ১শ’র বেশী গ্যারেজ স্থাপন করা হয়েছে।

এসব গ্যারেজে টমটম চার্জ দেয়ার ফলে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে বিদ্যুতের লোডশেডিং সৃষ্টি হয়। প্রায় সময়ই দেখা যায় অতিরিক্ত লোডের কারণে মেইন লাইনের তার ছিড়ে যায়। এতে করে প্রতিদিনই ১ থেকে ২ ঘন্টা বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় থাকতে হয় শহরবাসীকে।

হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। সাম্প্রতিককালে ১-২ ঘন্টা করে বিভ্রাট ঘটছে। আর এর জন্য টমটমের ব্যাটারি চার্জকেই দায়ী করছেন শহরবাসী।

টমটম গ্যারেজের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভূক্তভোগী এলাকাবাসী মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন। হবিগঞ্জ পৌরসভা থেকে ১২শ টমটমের অনুমতি দেয়া হলেও বর্তমানে শহরে টমটমের সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশী ছাড়িয়েছে। তবে ১২শ টমটমই কোথায় চার্জ দেয়া হবে তারও নির্ধারিত স্থান নির্ণয় করা হয়নি।

এক জরিপে দেখা গেছে- গরুরবাজার, কামড়াপুর থেকে কিবরিয়া ব্রিজ পর্যন্ত ছোট বড় ব্যাঙের ছাতার মত অর্ধশতাধিক টমটম গ্যারেজ রয়েছে। এছাড়া পোদ্দারবাড়ি এলাকায়ও বেশ কয়েকটি এ ধরনের টমটম গ্যারেজ রয়েছে। ওইসব এলাকায় মোবাইল কোর্ট গেলে নিমিষেই গ্যারেজ হয়ে যায় গুদাম ঘর।

এদিকে, একটি মহল সম্প্রতি টমটমের ভাড়া বৃদ্ধির কথা প্রচার করে হবিগঞ্জ শহরে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আগের নিয়মে ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। নতুন করে ৫ টাকার ভাড়ার স্থলে ১০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ পৌরসভার অনুমোদন নিয়ে টমটম শহরে চলাচলের বৈধতা পেয়েছে। অথচ পৌরসভা ছাড়াই ভাড়া নির্ধারণ করছে কতিপয় সংগঠন। এ সংগঠনের ভাড়া বৃদ্ধির খবরে গণপরিবহন খ্যাত টমটম চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে। আর এতে লাভবান হচ্ছে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা কতিপয় গ্যারেজ মালিক। ভাড়ার বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে তারাও তাদের গ্যারেজের ভাড়া ও চার্জের টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।

টমটম গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে শহরবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। শিগগির ব্যবস্থা না নিলে জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন শহরবাসী।

এ ব্যাপারে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফীন জানান, হবিগঞ্জ শহরে কোন বৈধ টমটম গ্যারেজ নেই। বাণিজ্যকভাবে লাইন নিয়ে অনেকে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে হবিগঞ্জ টমটম মালিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শহরের চৌধুরী বাজার থেকে শায়েস্তানগর সিএনজি স্ট্যান্ড পর্যন্ত ৫ টাকা করার বিষয়ে আগামী সভায় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!