• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁস-টার্কির খামার করে স্বাবলম্বী হেলালুজ্জামান


মো. শামীম আহসান মল্লিক, মোরেলগঞ্জ এপ্রিল ২৯, ২০১৮, ০৫:৪১ পিএম
হাঁস-টার্কির খামার করে স্বাবলম্বী হেলালুজ্জামান

মোরেলগঞ্জ : জেলার এক বেকার যুবক হাঁস ও টার্কির খামার করে স্বাবলম্বী হলেন হেলালুজ্জামান ফকির। বেকারত্বের অভাব ঘুচাতে যুবক হেলালুজ্জামান ফকির এক সময় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কয়েক মাসের মধ্যে তিনি দেশে ফিরে আসেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শিক্ষিত বেকার যুবক হেলালুজ্জামান মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পরে তিনি চাকরির পিছু না ছুটে হাঁস-টার্কিসহ সমন্বিত খামার করার পরিকল্পনা করেন। চেষ্টা করেন দেশের মাটিতে সোনা ফলানোর।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর সদরের বারইখালী গ্রামের মজিবর রহমান ফকিরের পুত্র হেলালুজ্জামান ফকির তার চিন্তা চেতনাকে ফলপ্রসূ করতে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপম রায়, উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সিনিয়র সহকারী মৎস্য অফিসার ইয়াকিন আলীসহ উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের পরামর্শ নেন। তাদের পরামর্শ নিয়ে প্রথমে তিনি বারইখালী এলাকায় ৩ একর জমি লিজ নিয়ে শুরু করে নানা ধরনের সবজি চাষ আর ঘেরে মৎস্য চাষ। নানা ধরনের মৌসুমি সবজি পেপে, ঢেড়স, বেগুন, সিম, লাউসহ মাছ ও ধান চাষে সফলতা মুখ দেখতে দেখতে জমির লিজ মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। জমির মালিক তার সাফল্যে দেখে নিজেই এ ব্যবসা করার জন্য লিজের মেয়াদ নবায়ন করেনি। আর এ বড় ধাক্কায় পরও তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেয়নি। পরে তিনি আবারো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য চিপা বারইখালী গ্রামে জমি লিজ নিয়ে পুনরায় গড়ে তোলেন সমন্বিত খামার।

তার খামারে রয়েছে হাঁস, টার্কি মুরগি, দেশি-মুরগি, মাছ চাষ, ধান ও নানা সবজি চাষ। তা খামারে তিন জাতের ৫ শতাধিক হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে মাংসের জন্য বেইজিং হাঁস, ডিমের জন্য জিংডিং হাঁস ও রাজহাঁস রয়েছে। প্রায় সব হাঁসই এখন নিউ এডাল্ট। বয়স ৩ মাস। ৪ মাস বয়স থেকেই একাধারে ডিম দিতে শুরু করবে। এক একটি হাঁস ১ বছরে কমপক্ষে ৩২০টি ডিম দিবে। মাংসের জন্য বেইজিং হাঁস সাড়ে ৩-৪ মাসে একটি হাঁসের ওজন হবে ৫ কেজি। তার খামারে রয়েছে ১২টি প্যারেন্স ও ১১ জোড়া নিউ এডাল্ট টার্কি। এরা ৬ মাস বয়স হলেই ডিম দিতে শুরু করবে। বছরে ১২০ থেকে ১৫০টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়।

একদিনের একটি টার্কির বাচ্চা বিক্রি হয় ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। ৪০০ টাকা কেজি দরে টার্কি মুরগি বিক্রি হয়। টার্কির সঙ্গে তিনি দেশি-মুরগি পালন করছে। হেলালুজ্জামান ফকির নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেই হাঁস ও মুরগীর ডিম ফুটাচ্ছেন। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য খামারের পুকুরে চাষ করেছেন ২ লাখ মনোসেক্স তেলাপিয়া, ১০ হাজার পাংগাস, ৩০ হাজার দেশি শিংসহ মিশ্র কার্প জাতীয় ২ লাখ মাছের পোনা রয়েছে। রয়েছে ৪০০ পেপে গাছ। আরো রয়েছে দান ও ভুট্টা চাষ।

হেলালুজ্জামান ফকির বলেন, তিনি দেশে ও জাতির পুষ্টি চাহিদা মেটাতে নিরলস কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেখানে অন্তরায় রয়েছে সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগীতা। পাশাপশি রয়েছে ফিস ফিডসহ অন্যান্য খাবারের দাম ঊর্ধ্বগতি। বিদেশি মাছের কাছে দাম পাচ্ছে না দেশি মাছ। ২০১৫-১৬ সালে তেলাপিয়া ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করলেও তার দাম এখন ৬০-৯০ টাকা। পাংগাস মাছ ২০১৫-১৬ সালে ১১০ থেকে ১৩০ টাকার দরে বিক্রি করলেও এখন তা বিক্রি করছে ৬০-৮০ টাকা দরে। বৈদেশিক মাছ সহজলভ্য ও দাম কম হওয়ায় অনেক চাষীরা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!