• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাঁড়ের ক্ষয়রোগের কারণ ও চিকিৎসা


ডা. এ. সি. সাহা জুন ২২, ২০১৬, ০১:৩৫ পিএম
হাঁড়ের ক্ষয়রোগের কারণ ও চিকিৎসা

অস্টিওপোরোসিস বা হাঁড়ের ক্ষয়রোগ হচ্ছে এমন একটি রোগ যার ফলে হাঁড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যাওয়ায় হাঁড় ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। এতে হাঁড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, হাঁড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে ক্রমেই হাঁড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে হাঁড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।

কারণসমূহ :

• হাঁড়ের গঠন ও ক্ষয়ের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
• মহিলাদের ক্ষেত্রে ইষ্ট্রোজেন এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব।
• থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিজনিত সমস্যা।
• অপর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ।
• জেনেটিক বা বংশানুক্রমিক রোগ যেমন: হাঁড়ের ক্যান্সার ইত্যাদি। উপসর্গ ও লক্ষণ: অস্টিওপোরোসিস এ হাঁড় নীরবে ক্ষয় হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হাঁড় ভাঙ্গার মাধ্যমে এর উপস্থিতি প্রথমে টের পাওয়া যায়।

প্রধান প্রধান লক্ষণ সমূহ :
• হাঁড় ও পেশীতে ব্যথা।
• ঘাড় ও পিঠে ব্যথা।
• খুব সহজে দেহের বিভিনড়ব স্থানে হাঁড় (বিশেষ করে মেরুদন্ড, কোমর বা কবজির হাঁড়) ভেঙ্গে যাওয়া।
• কুঁজো হয়ে যাওয়া ।

ঝুঁকি যাদের বেশি :
• মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ পরবর্তী মহিলা।
• অপর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করা।
• ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করা।
• শরীর চর্চা না করা।
• রিউমেটয়েড আর্থাইটিস বা গেঁটে বাত।
• এইডস, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ এবং এসব রোগের ব্যবহৃত ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়।
• দীর্ঘ দিন যাবৎ কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করা।
 
শনাক্তকরণ :
• সাধারণ এক্স-রে দ্বারা অস্টিওপোরোসিস সর্ম্পকে ধারণা করা যেতে পারে। তবে সঠিকভাবে এর মাত্রা জানতে হলে বোন মিনারেল ডেনসিটি (বিএমডি) পরীক্ষা করা দরকার। সাধারণত কোমর, মেরুদন্ড বা কবজির ডেক্সা স্ক্যান করে বিএমডি এর সঠিক মাত্রা নির্ণয় করা হয়। বিএমডি দ্বারা হাঁড়ের ঘনত্ব সঠিকভাবে নির্ণয় করে হাঁড় ভাঙ্গার ঝুঁকি এবং এর সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করা যায়।

বিএমডি এর মাত্রাগুলো জেনে নেয়া যাক :
১. স্বাভাবিকঃ T score – 1SD এর সমান বা উপর (পজেটিভ)
২. অস্টিওপেনিয়াঃ T score – 1SD থেকে – 2.5 SD
৩. অস্টিওপোরোসিসঃ T score –2.5 SD ঝউ থেকে কম (নেগেটিভ)
 
প্রতিরোধ :
• সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
• পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।
• নিয়মিত শরীর চর্চা করা (যেমন: নিয়মিত হাঁটা, সিড়ি দিয়ে উঠা ইত্যাদি)।
• ধুমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।
 
ক্যালসিয়াম :

• প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের (১৮-৫০ বৎসর পর্যন্ত) দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫১ বৎসর বা তদুর্ধ্বে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত। দুধ, শাকসবজি, হাঁড়সহ ছোট মাছ, ফলমূল, সরিষার তেল ইত্যাদি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। ভিটামিন ‘ডি’: • ভিটামিন ‘ডি’ এর অন্যতম উৎস হল সূর্যালোক। মানবদেহের অভ্যান্তরে ভিটামিন ‘ডি’ ‣তরি হওয়ায় একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোক দেহের সংর্স্পশে আসা প্রয়োজনীয়। সামুদ্রিক মাছ (যেমন: টুনা, সার্ডিন, স্যালমন ইত্যাদি), কড লিভার তেল, ডিম, দুধ, গরুর কলিজা, মাখন ইত্যাদি ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার।

ব্যায়াম :
• ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ হাঁড় পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটার মাধ্যমে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
চিকিৎসা :
সঠিক সময়ে অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা না নিলে দেহের বিভিনড়ব স্থানের হাঁড় ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিবেচনায় দুঃসহ জীবনযাপন করতে হয়। বিশ্বজুড়ে প্রতি ৫ জনে ১ জন রোগী হাঁড় ভাঙ্গার এক বৎসরের মধ্যে মারা যায়। কাজেই অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা প্রয়োজনীয়তার দিকে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। জীবনযাত্রার সঠিক নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত।

• নিয়মিত ব্যায়াম করা।
• ধুমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা।
• শরীরে ওজন কমানো, ফাষ্ট ফুড ও চর্বি জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলা।
• পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ছোট মাছ, দুধ,ডিম ইত্যাদি গ্রহণ করা।
• চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকমাত্রার ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ ট্যাবলেট যেমন: Labcal D গ্রহণ করা যেতে পারে।
• বয়স্ক পুরুষ বা নারী এবং মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁড় ক্ষয় প্রতিরোধকারী ঔষধ যেমন: বিসফসফোনেট, এলেনড্রোনিক এসিড, ইবানড্রোনিক এসিড, জোলেনড্রোনিক এসিড জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
অস্টিওপোরোসিসে হাঁড়ের ঘনত্ব কমে হাঁড় ছিদ্রুযুক্ত, দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসা না নিলে একান্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম যেমন: নামায পড়া, গোসল করা, টয়লেটে যাওয়া, হাঁটা-চলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাজেই অস্টিওপোরোসিস সর্ম্পকে আমাদের সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

ডা. এ.সি. সাহা
এমবিবিএস, এম.এস. (অর্থো)
কনসালটেন্ট
অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগ
E-mail: [email protected]

সোনালীনিউজ/ঢাকা/ওএফ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!