• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাওরে ৪১ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৪, ২০১৭, ০৯:৫৪ পিএম
হাওরে ৪১ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি

ঢাকা: হাওরের পানিদূষণে প্রায় ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ মারা গেছে। যার বাজার মূল্য ৪১ কোটি টাকা। এ ছাড়া মারা গেছে ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ একেবারেই কমে যাওয়া এবং অ্যামোনিয়া গ্যাস ও অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছ মারা গেছে।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) হাওরের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে এসব তথ্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দেয়া হয়েছে পরামর্শ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হওয়ায় এবার মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা গেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছি। হাওরের এমন বিপর্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বছর মার্চ মাসের আগাম বৃষ্টির কারণে হাওর অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আগাম বন্যা দেখা দেয়। আগাম বন্যায় হাওর অঞ্চলের ধানখেত তলিয়ে যাওয়ায় কাঁচা ধানগাছ ও ধানের থোড়ে পচন ধরে। এতে হাওরের পানি ধীরে ধীরে দূষিত হয়ে পড়ে এবং এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাওরে মাছের মড়ক দেখা দেয়। 

জমিতে কীটনাশক ছিটানোর কারণে পানি দূষিত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। বিষয়টি পরীক্ষা করতে গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ-ছয় দিন পর ওই প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বোঝা যাবে। 

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৭ এপ্রিল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোনা জেলার ডিঙ্গাপোঁতা হাওর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় হাওরের পানি পরীক্ষা করে দেখা যায়, পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ০.০১ থেকে ০.৮ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), যা স্বাভাবিক মাত্রার (৫ থেকে ৮ পিপিএম) চেয়ে আশঙ্কাজনকভাবে কম। একইসঙ্গে অ্যামোনিয়ার পরিমাণও ছিল ০.৪ থেকে ০.৬ পিপিএম, যা অস্বাভাবিক।

অ্যামোনিয়ার লিথাল মাত্রা পাওয়া গেছে ০.২ পিপিএম। দেশের অন্যান্য হাওরেও একই সময়ে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ০.৫ থেকে ১.৫ পিপিএম এবং অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.৫ থেকে ০.৮ পিপিএম পাওয়া গেছে। পিএইচের মাত্রা ছিল ৫.০ থেকে ৬.০ শূন্য পর্যন্ত, যা সহনীয় পর্যায়ের (৬.৫ থেকে ৮.৫) নিচে ছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পানির এমন রাসায়নিক উপাদান মাছের জীবনধারণের জন্য মোটেও অনুকূল ছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শনের সময় অনেক মৃত মাছ মুখ খোলা অবস্থায় দেখা যায়। এ ছাড়া মাছের ফুলকা ছেঁড়া অবস্থায় ছিল। 

এভাবে মৃত্যু প্রমাণ করে, অক্সিজেনের মারাত্মক ঘাটতি ছিল। সার্বিক দিক পর্যালোচনায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়, হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অস্বাভাবিক ঘাটতি এবং অ্যামোনিয়ার বৃদ্ধির কারণে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, হাওরে পানিদূষণে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ এবং ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। মৃত মাছের মূল্য প্রায় ৪১ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতি এবার মাছের উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে কি না, জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সে রকম আশঙ্কা নেই। দেশে মোট ৩৯ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ মরে যাওয়ায় তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি জানান, হাওরের পানির গুণাগুণ উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর আট লাখ টাকা ব্যয়ে পানিতে চুন, জিওলাইট ও অক্সিফ্লু প্রয়োগ করেছে। এ ছাড়া গত তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমে বাড়ছে।

এবার মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হওয়ায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিতে প্লাঙ্কটনের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় হাওরে মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা হলে খাদ্য প্লাঙ্কটন খেয়ে মাছ সহজেই বড় হওয়ার সুযোগ পাবে।

একই সঙ্গে আগাম বৃষ্টির কারণে হাওরের পানি চলে আসায় এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে হাওরে মাছের উৎপাদন অন্যবারের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা যায়। এতে হাওরে ইতিমধ্যে মাছের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ এপ্রিল মাছ মারা যাওয়ার আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ২২-২৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওর এবং মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করেছে। বর্তমানে তা প্রায় স্বাভাবিক পাওয়া গেছে এবং মাছের জন্য তা ক্ষতিকর নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!