• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
শ্রমিক সঙ্কট, বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস

হাওরের পাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় কৃষক


নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ২১, ২০১৮, ০২:৪৩ পিএম
হাওরের পাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

ঢাকা : এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে হাওরে। ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ হাওরের জেলাগুলোয় ধান কাটার ধুম পড়েছে। পর পর দুবছর ফসল হারানো কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে হাওরবাসীর জীবনে। ইতোমধ্যে অঞ্চলভেদে হাওরে ১৫ থেকে ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ধান কাটা শেষ হবে। তবে আনন্দের পাশাপাশি রয়েছে শঙ্কাও।

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওরের কোনো কোনো নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে হাওরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে আগাম বন্যা। রয়েছে শিলাবৃষ্টির আশঙ্কাও। এ ছাড়া রয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। এ অবস্থায় দ্রুত ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের জন্য সরকারিভাবে বেশি করে আধুনিক যন্ত্র সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা যাতে দ্রুত ফসল তুলতে পারেন সে জন্য তারা নজর রাখছে এবং কোথাও কোথাও দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াইয়ের যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

হাওরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এখানকার হাওরগুলোয় ধুম পড়েছে ধান কাটার। ফলন ভালো হওয়ায় গত বছরের আগাম বন্যার ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে দেশি ধান কাটা শেষ হবে। কৃষি বিভাগ যদি ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের জন্য বেশি করে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে আবহাওয়া যেহেতু অনুকূলে, তাই সমস্ত ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত এ জেলায় শতকরা ৩০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ হবে। দু-একটি জায়গায় অল্প পরিসরে ধান কাটার আধুনিক যন্ত্রপাতি কম্বাইন হার্ভেস্টার ও রিপার ব্যবহার করা হচ্ছে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, বোরো ধান ঘরে তোলার ধুম পড়েছে এ জেলার হাওরের কৃষকদের মধ্যে। একই সঙ্গে বাড়ছে ব্যস্ততা ও দুশ্চিন্তা। দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে ধান কাটা শ্রমিকের সন্ধানে নেমেছেন তারা। আকাশে মেঘের আনাগোনা, হঠাৎ দমকা বাতাস, বিদ্যুৎ চমকানো, আকস্মিক বন্যা-শিলাবৃষ্টির আশঙ্কার মধ্যেই চলছে ধান কাটার ধুম।

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার মাইজাইল হাওরপারের কৃষক সুরুজ মিয়া জানান, এবার ধান ভালো হয়েছে এবং পেকেছে। তবে কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। একজন শ্রমিককে ৪০০-৫০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের কৃষক ছুলেমান মিয়া জানান, এ বছর সম্পূর্ণ ধান তুলতে পারলে গত বছরের ক্ষতি অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা। একই কথা বলেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার দরিয়াপুর হাওরের কৃষক মারজান।

কৃষকদের সহযোগিতা দিতে তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সিলেট জেলা প্রশিক্ষক সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আশা করি, বৈরী আবহাওয়া শুরুর আগেই কৃষক ধান তুলতে পারবেন।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওরের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে এখানকার হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ সংবাদে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নেত্রকোনার হাওরের কৃষকরা।

আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান জানান, আজ (গতকাল) টানা চার-পাঁচ দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এতে সুরমা কুশিয়ারা, ধনু, সোমেস্বরীসহ এ অঞ্চলের প্রভৃতি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে অতিক্রম করে হাওরে আগাম বন্যা হতে পারে। তবে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢোকার মতো পরিস্থিতি হবে না।

খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি কৃষক তপন বাঙালি বলেন, ইতোমধ্যে হাওরের প্রায় ৪০ ভাগ ফসল কাটা হয়ে গেছে। তিনিও সরকারিভাবে ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের অনুরোধ জানান।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কায় দ্রুত হাওরের বোরো ধান কেটে ফেলতে জেলা প্রশাসন থেকে এখন কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের হাওরে ইতোমধ্যে ১৮ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ‘দেখা’র হাওরের কৃষক সৈয়দ আহমদ বলেন, ফলন ভালো হলেও বৃষ্টির জন্য আতঙ্কে আছি, এ মুহূর্তে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি হলে ধান ঝরে যাবে, পাকা ধান ঘরে তুলতে পারব না। আকাশে ডাক দিলেই ভয় জাগে মনে।

ঝাওয়ার হাওরের কৃষক মোতালেব হোসেন বলেন, সব শ্রমিক গেছে বালু-পাথর কোয়ারির কাজে। সেখানে দিনে তারা ১০০০-১৫০০ টাকা পায়। ধান কাটলে তারা পাবে ৪০০-৫০০ টাকা। এ জন্যই শ্রমিক সংকট।

জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম জানান, এ জেলার হাওরসমূহে বোরো ধান দ্রুত কাটতে অন্যান্য পেশার শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!