• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হার্টের রিং নৈরাজ্য: ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি সরকার!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২১, ২০১৭, ০৫:২৮ পিএম
হার্টের রিং নৈরাজ্য: ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি সরকার!

ঢাকা: জীবন ও মরণের সন্ধিক্ষণে থাকা রোগীদের জিম্মি করে খেয়াল-খুশিমতো দামে হার্টের রিং বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাই জয় হলো শেষে। অসাধু ও ফরিয়া ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের কাছে ‘রহস্যজনক কারণে’ নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

গরিব ও অসহায় রোগীদের জীবন ও চিকিৎসা খরচের সাধ্যের কথা ভাবা হয়নি। রিং ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দামেই রোগীদের আবার হার্টে রিং পরাতে হবে। এক দিন বন্ধ থাকার পর এ শর্তে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) হৃদরোগীদের স্টেন্ট (রিং) অস্ত্রোপচার আবার শুরু হয়েছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশের চারটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান করোনারি স্টেন্টের প্রস্তাবিত মূল্য অধিদফতরে দাখিল করে। এতে বেয়ার মেটাল ও ডিইএস স্টেন্টের মূল্য ২৫ হাজার এবং ড্রাগ ইলিওটিং স্টেন্টের মূল্য ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

সরকার এ দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করলেও এসব রিং পরাতে হাসপাতালভেদে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কোনো সময় আরো বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় বিদেশি ও উন্নত প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বলে রোগীদের মানহীন রিং দেওয়ার অভিযোগও আছে।

হৃদরোগীদের হার্টের রিং নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের চরম নৈরাজ্য চলে আসছে। এর লাগাম টেনে ধরতে ভুক্তভোগীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছে। রিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এর প্রতিবাদে রিং ব্যবসায়ীরা গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করেন। ধর্মঘটে ঢাকাসহ সারা দেশে হাজারো রোগী জিম্মি হয়ে পড়েন।

এনআইসিভিডি থেকে জানা যায়, দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হৃদরোগে আক্রান্ত। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাথল্যাবে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগীর হার্টে রিং পরানো হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নির্ধারিত দামে রিং বিক্রির শর্ত থেকে সরে আসার পরেই কেবল গতকাল কোম্পানিগুলো রিং সরবরাহ শুরু করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালটির এক চিকিৎসক বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর কাছে হাসপাতাল পরিচালক তথা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অসহায় আত্মসমর্পণ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার দোহাই দিয়ে সরকার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করেছে।’

এ বিষয়ে এনআইসিভিডির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজাল হোসেনের বক্তব্য জানতে তার মুঠেফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

তথ্যমতে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সম্প্রতি নিবন্ধনকৃত ২১টি কোম্পানির ৪৭ প্রকারের রিংয়ের মূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকে রিংয়ের যুক্তিসংগত মূল্য নির্ধারণ ও অনুমোদন করিয়ে সেই দাম প্রতিটি রিংয়ের গায়ে উল্লেখ করা এবং উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে কোম্পানিগুলোকে বলা হয়। একই রিং বা স্টেন্ট বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। এ অরাজকতা বন্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর উদ্যোগী হওয়ার পর অঘোষিত ধর্মঘট ডাকেন ব্যবসায়ীরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কাছে নতিস্বীকারের বিভিন্ন নজির তৈরি হয়েছে। জনদুর্ভোগ ও জনস্বার্থ সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে না মোটেই। বাস মালিকদের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে সরকারকে। বন্ধ হয়নি অবৈধ সিটিং সার্ভিস।

রাজধানীতে টানা চার দিন সীমাহীন দুর্ভোগের পর বৃহস্পতিবার থেকে আবার সড়কে নামে সিটিং বাস। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সেই নৈরাজ্যেই ফিরে এসেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!