• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হার্ডলাইনে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭, ০৮:২৩ পিএম
হার্ডলাইনে বিএনপি

ঢাকা: বিএনপি এখন অনেকটাই হার্ডলাইনে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সৌদি আরবে ব্যবসা-সংক্রান্ত বিষয়টি সামনে রেখে তার প্রতিফলন দেখাতে শুরু করেছে দলটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগের জের ধরে গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। 

পরদিন অভিযোগ মিথ্যা-বানোয়াট দাবি করে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে আইনি নোটিশও দেয় বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবে ব্যবসা থাকার অভিযোগের কোনও সত্যতা প্রমাণ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরবের যেসব পত্রিকার নাম বলা হয়েছে, সেগুলোরও কোনও অস্তিত্ব দেখাতে পারেননি। এ কারণে খালেদা জিয়ার পরামর্শে বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আইনি পথে যাচ্ছেন। 

এদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, নোটিশে বেঁধে ত্রিশ দিন সময় শেষ হওয়ার অপেক্ষা করবে বিএনপি। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এ নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা এখনও শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের কাছে কোনও প্রমাণ থাকে, তাহলে প্রকৃত তথ্য থাকলে, তারা বলুক। 

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, সরকার গত কয়েক বছর ধরেই বিএনপিকে দু’টি বিষয়ে নেতিবাচকভাবে প্রচার করছে। তা হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ মৌলবাদী দলগুলোর সম্পর্কের বিষয় তোলা, অন্যটি দলে দুর্নীতির চর্চা হয় বলে দেশে-বিদেশে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা তোলার চেষ্টা। 

এছাড়া সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কোনও উদ্যোগকেই রাজনৈতিকভাবে সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেনি বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবে অর্থ বিনিয়েগোর অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় সরকার।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা মনে করি, অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ কারণেই আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, বিদেশি তথ্যগুলোর যে সূত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। কোনও সূত্রই ঠিক নয়। সূত্রই যদি সঠিক না থাকে, তাহলে অভিযোগ ভিত্তিহীন। রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, রাজনৈতিকভাবে ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এসব অভিযোগ করেছেন। দেশের বাইরে ম্যানুফেকচার করেই এখানে প্রচার করা হচ্ছে। অনলাইনের নাম বলা হয়েছে, আদৌ এমন কোনও বাস্তবতা নেই। 

বিএনপি নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ শুধু বক্তব্য দিয়ে মোকাবিলা করা হলে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে বিষয়টিকে আইনি পথে নেওয়া হয়েছে। এবং এক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে সরকারের এই অপচেষ্টাকে উন্মোচন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগটিকে গুরুত্ব না দিলে দলের অস্তিত্বই সংকটের মুখে পড়তো বলে মনে করেন দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা। তাদের মতে, এখনই এই বিষয়টিতে হার্ডলাইনে না গেলে বিষয়টি সত্য হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত যেতে পারে। জনগণের মাঝে ভুল তথ্য প্রচারিত হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ৭ ডিসেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সৌদি আরবে যে বিশাল শপিং মল পাওয়া গেলো, এটা তো আমরা বলিনি। এই খবর দেয়ার কোনও আগ্রহ দেখলাম না। সম্পাদকরা বিনা পয়সায় শপিং করার কার্ড পেয়েছেন কিনা, সেই কারণে খবরটি চেপে গেছেন কিনা- এমন প্রশ্নও প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তোলেন।

বিএনপি নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ যে মিথ্যা, এর প্রথম দলিল হচ্ছে, সম্প্রতি সৌদি আরবে ২০০জন দুর্নীতিগ্রস্তের তালিকা প্রকাশ করেছে। ওই তালিকায় ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের নাম থাকলেও বাংলাদেশের কারও নাম নেই।

এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আবার কোথায় ভুয়া কাগজ, ভুয়া টেলিভিশন-অনলাইন দিয়ে আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। আমরা বলেছি, প্রমাণ করুন। তিনি প্রমাণ করতে পারেননি বলেই উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে প্রমাণ করতে না পারলে, আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টা এত সোজা না। সবাইকে শুধু বোকা বানিয়ে যাবেন না। কেউ কিছু বোঝে না? বাংলাদেশের মানুষকে এত বোকা ভেবে লাভ নেই।

প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নোটিশ দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এই কেসটিতে পুরোপুরি আমি আইনজীবী হিসেবে কাজ করছি। আমার ক্লায়েন্ট খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই নোটিশের সময়সীমা ত্রিশ দিনের। এরমধ্যে আশা করি তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। না হলে পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে, এটা আমার ক্লায়েন্ট নির্দেশ দেবেন।

বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলমান আইনি কার্যক্রম দেশে-বিদেশে প্রচার করা হবে। বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছেও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। দলটির নেতারা আশা করছেন, শেষপর্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের অসারতা প্রমাণ করা যাবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, হার্ডলাইন না, এই আইনি নোটিশ আমাদের লিগ্যাল রাইট। আমাকে যদি কেউ ক্যারেকটারাইজড করার চেষ্টা করে ফলসলি, রংলি, তাহলে নরমাল সিটিজেন হিসেবে রাইট আছে প্রতিবাদ করার।

এছাড়া সৌদি আরবে পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, পত্রিকায় এলে তো দিতাম না। তিনি নিজে এ ইনফরমেশন দিয়েছেন, এটার তো কোনও তথ্য-প্রমাণ নেই। ফলে ব্যাপারটা শুধু রাজনৈতিকভাবে দেখলে চলবে না, এটাকে রুখতে হবে।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!