• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হিটলারের সম্পর্কে চমকে দেয়া কিছু তথ্য


শেখ সুজন এপ্রিল ১৮, ২০১৭, ০৩:০১ পিএম
হিটলারের সম্পর্কে চমকে দেয়া কিছু তথ্য

ঢাকা: এডলফ হিটলারকে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম রাজনৈতিক নেতা ও ঘৃণ্যতম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়। জার্মানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার উত্থান ঘটে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী ও মতাদর্শের নেতা ছিলেন তিনি, পরবর্তীতে এই মতাদর্শই ‘নাৎসি আন্দোলন’ হিসেবে রূপ লাভ করে।

নেতা হিসেবে ঘৃণ্য হলেও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে ছিলেন অতুলনীয়। চমৎকারভাবে বক্তব্য দিতে পারতেন হিটলার। বিশেষ করে, তিনি যদি চাইতেন কোনো একটা ধারণা কোনো একজন মানুষের মগজে ঢুকিয়ে দিতে হবে তাহলে খুব চমৎকারভাবে বুঝিয়ে সেই ধারণায় প্রভাবিত করে ফেলতে পারতেন। এই ক্ষমতার উপস্থিতিতেই তার ঘৃণ্য কাজের জন্য অন্যান্য অনেক মানুষকে দলে আনতে পেরেছিলেন। তার ক্ষমতার চমৎকারিত্বের জন্যই পুরো দেশ জুড়ে ইহুদী নিধনের ঘৃণ্য উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছিল।

একটা সময় ছিল যখন ‘হিটলার’ নামটিতে কোনো নেতিবাচকতা ছিল না। কিন্তু নাৎসি নেতা হিটলার তার জীবনে এত পরিমাণ ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজ করেছেন যে পরবর্তীতে ‘হিটলার’ শব্দটিই ঘৃণ্য ও নেতিবাচক হিসেবে রূপ লাভ করেছে। কেউ এখন আর এই নামে নিজেদের সন্তানদের নাম রাখে না।

তবে হিটলার নিজেও আর দশজনের মতোই মানুষ ছিলেন। তারও ছেলেবেলা আছে। তারও একগুচ্ছ ইতিহাস আছে। হিটলারের ‘হিটলার’ হয়ে উঠার আগের ইতিহাস, আর পরের ইতিহাসও আছে।আছে পারিবারিক ইতিহাস, আছে বংশগত ইতিহাস। হিটলারের বংশ সম্বন্ধে খুব বেশি জানা যায় না। তার কৃতকর্মের জন্য তার বংশধরদের ওপর চেপে আছে এক ভয়ানক কলংক। তবে এতসব ছাপিয়েও হিটলারের পরিবারে এমন কিছু ব্যাপার আছে যা মোটামুটি বিস্ময়কর। সেরকমই কিছু তথ্য তুলে ধরছি এখানে।

১. ইহুদী বংশধর

যে হিটলার পৃথিবী থেকে সমস্ত ইহুদী নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলেন, সেই হিটলার নিজেই ছিলেন ইহুদীদের বংশধর। এখন প্রযুক্তি অনেক উন্নত। মানুষের ডিএনএ টেস্ট করে তার সম্বন্ধে এমন সব তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে যা আগে কল্পনাও করা যেতো না। হিটলারের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে এবং তা নিয়ে গবেষণা করে একদল গবেষক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে হিটলার ইহুদী বংশধর ছিলেন।

পূর্বপুরুষের ধর্ম বের করার জন্য ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত যেতে হবে কেন? তার জৈবিক দাদা হিসেবে যাকে ধারণা করা হয় তিনি নিজেই ইহুদী ছিলেন। বিজ্ঞানীদের করা ঐ গবেষণায় আরো একটি চমকপ্রদ বিষয় বেরিয়ে এসেছে। হিটলারের আগের পূর্বপুরুষ আফ্রিকার অধিবাসী ছিল। হ্যাঁ, হিটলার ইহুদী এবং আফ্রিকানদের খুব নিচু দরের মানুষ বলে মনে করতেন। নিজেকে সবসময় তাদের চেয়ে উঁচু ভাবতেন। আজকে যদি হিটলার বেঁচে থাকতেন তাহলে তার সম্বন্ধে এই গবেষণা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লেগে যেতো। 

২. হিটলার তার বোনকে প্রহার করতো

  চিত্র: এডলফ হিটলারের বোন ‘পলা হিটলার’

পলা হিটলার ছিলেন এডলফ হিটলারের বোন। হিটলার কখনোই মনে করতেন না যে পলার মাথায় বুদ্ধিমত্তা বলতে কিছু আছে। তাকে নির্বোধ বলে মনে করতেন। খুব কড়া নিয়ম-কানুন আরোপিত ছিল তার ওপর। বাবা মারা যাবার পর হিটলার তেমন কোনো খবরই রাখেনি তার বোনের। কয়েকটি অনুষ্ঠানে তাকে চড়-থাপ্পরও খেতে হয়েছে হিটলারের হাতে। নাড়ির টান অনুভব করলে মাঝে মাঝে বছরে দুই-একবার দেখা করতেন পলার সঙ্গে। পলা কোমলভাবে কথা বলতেন, কিন্তু হিটলার ছিলেন তার প্রতি নির্মম। তবে হিটলারের বোন কখনো কল্পনাও করতে পারেননি তার দ্বারা এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হতে পারে।

৩. বোন কখনোই নাৎসি ছিল না

হিটলারের বোন নাৎসি কর্মকাণ্ড পছন্দ করতেন না। হিটলার নিজেও তাকে এসবে রাখতেন না। হিটলার মনে করতেন এমন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজ এর মতো মাথামোটা মেয়েকে দিয়ে হবে না। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে পলা মন থেকে নাৎসি কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা করতেন। আরো অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, নাৎসিদের কোনো অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেনি পলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি হাসপাতালের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করতেন পলা। যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন অপরাধীর পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে জেরা করা হয়। জেরা অল্প সময়ের ভেতরেই শেষ হয়ে যায় এবং সে কোনো অপরাধে অপরাধী নয় বলে গ্রাহ্য হয়। এর পরবর্তীতে তার নামের শেষের অংশ ‘হিটলার’ ফেলে দিয়ে ‘পলা উল্‌ফ’ করে নেন নিজের নাম।

৪. হিটলারের ভাইপো লড়েছেন হিটলারের বিরুদ্ধে

চিত্র: হিটলারের ভাইপো ‘উইলিয়াম প্যাট্রিক হিটলার’

হিটলারের ভাইপো উইলিয়াম প্যাট্রিক হিটলার ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে ইংল্যান্ডের নাগরিক। মাঝে মাঝে জার্মানিতে অবস্থান করলেও তার সবকিছু ইংল্যান্ড কেন্দ্রিক। কিন্তু পরবর্তীতে হিটলার তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করার দাবি করেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে উইলিয়াম জার্মানি থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে ঠাঁই নেন।

এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশেষ সুপারিশের মাধ্যমে উইলিয়াম ইউএস নৌবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য মনোনীত হয়ে যান। তখন যুদ্ধ চলমান। তিনি গর্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যুদ্ধ করেন। চাচার বিরুদ্ধে ভাইপোর লড়াই! তার অবদানের জন্য পরবর্তীতে তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃতও করা হয়।

৫. জীবিত পূর্বপুরুষেরা পাল্টে ফেলেছিল তাদের নাম

যুদ্ধের পর হিটলার বংশের যারা জীবিত ছিল তাদের সকলে নিজেদের নাম পালটে দিয়েছিল। কারণ হিটলার শব্দটির প্রতি মানুষের এত ঘৃণা ছিল যে এই নামে পরিচয় দিতেও তাদের লজ্জা হতো। তার বোন ‘পলা হিটলার’ থেকে নাম পালটে হয়েছেন ‘পলা উল্‌ফ’। ভাইপো উইলিয়াম প্যাট্রিক হিটলার নিজের নাম পালটে হয়ে যান ‘উইলিয়াম স্টুয়ার্ট হিউস্টন’। তার সন্তান সন্ততির নামও স্টুয়ার্ট হিউস্টন দিয়েই রাখেন।

৬. ছোটবেলাতেই মারা যায় চার ভাইবোন

চিত্র: ছোটবেলায় ভাই বোনদের এডলফ হিটলার

এডলফের বাবা-মায়ের মোট ছয়টি সন্তান ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এডলফ ও তার বোন পলা-ই পূর্ণবয়স্ক হতে পেরেছেন। বাকি চার জন শিশুকালেই মারা যায়। এডলফের জন্মের আগে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গুস্তাভ এবং আইডা মৃত্যুবরণ করে। হাইড্রোসেফালাসে আক্রান্ত হয়ে তার আরেকটি ভাই অট্টো মৃত্যুবরণ করেন। ৬ বছর বয়সে এডমন্ড নামে আরেকটি ভাই মৃত্যুবরণ করে ১৯০০ সালে। ঐ সময়ে শিশুমৃত্যুর হার বেশি ছিল। কিন্তু তার পরেও এক দম্পতির চার চারটি সন্তান মারা যাওয়া বিরলই ছিল সে সময়ে।

৭. হিটলারের সম্ভবত একটি ছেলে সন্তান ছিল

চিত্র: এডলফ হিটলারের ছেলে ‘জ্যা মারি লরেট’

১৯৪৫ সালে হিটলার নিঃসন্তান হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু হিটলারের কিছু ঘটনা, ছবি ও যাতায়াত সম্পর্কে গবেষণা করে কেউ কেউ দাবি করছেন, তার সম্ভবত একটি জারজ ছেলে সন্তান ছিল। হিটলার যখন জার্মান সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তখন এক ফরাসী মেয়ের দেখা পান। মেয়েটির নাম ছিল লবোজোয়ি শার্লট। তখন শার্লটের বয়স ছিল ১৬। তার সাথে কয়েক বছর সময় পার করেছিলেন হিটলার। শার্লটের একটি ছেলে সন্তান হয়, নাম জ্যা মারি লরেট।

লরেট ১৯৪৮ সালে তার মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারেননি। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে তথ্য জানতে পারেন এবং জন্মের সময়কাল মিলিয়ে দেখেন সম্ভাবনা আছে। তিনি প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন হিটলার তার পিতা। Your Father’s Name Was Hitler নামে একটি আত্মজীবনীমূলক বইও লিখেছিলেন মৃত্যুর চার বছর আগে। ফ্রান্স ও জার্মানির গবেষকরা গবেষণা করে এর সত্যতার পক্ষে প্রমাণও পেয়েছেন। এটা নিয়ে বেশ মাতামাতিও হয়েছে। তবে এসব রগরগে খবরে ঘটনার চেয়ে রঙচঙ হয় বেশি। এখানেও হয়েছিল তা।

৮. হিটলার জার্মান পরিবারের সন্তান ছিলেন না

হিটলারের কথা মনে এলেই জার্মানির কথা চলে আসে। জার্মানির জন্য হিটলারের মন কেঁদে উঠতো। কিন্তু তিনি জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি জার্মান পরিবারের সন্তান ছিলেন না। হিটলারের পরিবার ছিল অস্ট্রিয়ান। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। ২৪ বছর পর্যন্ত সেখানেই বসবার করে। ক্ষুধার তাড়নায় সেখান থেকে জার্মানির মিউনিখ চলে আসে। এরপর সেখান থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং তারপরের দুঃখময় ইতিহাস সকলেরই জানা।

৯. ইভার সাথে বিবাহিত জীবনের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র একদিন

চিত্র: এডলফ হিটলার ও তার স্ত্রী ‘ইভা ব্রাউন’

অধিকাংশ মানুষই জানে ইভা ব্রাউন নামে একজন নারী ছিলেন হিটলারের স্ত্রী। কিন্তু অনেকেই জানেন না তারা বিবাহিত হিসেবে থাকতে পেরেছিলেন মাত্র একদিন। অবিবাহিত অবস্থায় তারা অনেকদিন একসাথে ছিলেন। কোনো সন্তান হয়নি তাদের। হিটলারের চেয়ে প্রায় ২০ বছরের ছোট ছিলেন ইভা। বয়সের এমন পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তার প্রতি খুব আন্তরিকতা ছিল।

বলা হয়ে থাকে, তাদের সম্পর্কের শুরুর দিকে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন ইভা। উদ্দেশ্য হিটলারের কাছ থেকে যেন অধিক মনোযোগ ও অধিক সময় পান। ১৯৪৫ সাল, শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে কাটাচ্ছিলেন সময়টা। অবস্থা আঁচ করতে পেরে উভয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেন। আত্মহত্যা করার আগের দিন তারা বিয়ে সম্পন্ন করেন। এর পরেই আত্মহননের কোলে ঢলে পড়েন তারা। মাত্র একদিন স্থায়ী হয়েছিল তাদের এই বিয়ে। ঐ সময় ইভার বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর।

১০. সবসময় মায়ের ছবি সাথে রাখতেন হিটলার

চিত্র: এডলফ হিটলারের মা ‘ক্লারা হিটলার’

এডলফ হিটলার তার বাবার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। পরিণত বয়সে বাবার খুব একটা খোঁজখবর রাখেননি হিটলার। কিন্তু মায়ের প্রতি ছিল ভিন্নরকম টান। বাবার মৃত্যুর পর অনেক দেখাশোনা করেছেন মায়ের। মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আন্তরিকতা অব্যাহত ছিল তার। মা মারা যাওয়ার পর তার মন খুব ব্যথিত হয়। এরপর থেকে সবসময় মায়ের ছবি সাথে রেখে চলেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছবি বহন করেছিলেন তিনি। কখনো বাদ যায়নি। এ যেন পাথরের ভেতর ফুটে উঠা একটি ফুলেল মন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এসএস

Wordbridge School
Link copied!