• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হুমকির মুখে মুন্সীগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ


মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ মে ২৩, ২০১৮, ০৩:০২ পিএম
হুমকির মুখে মুন্সীগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ

মুন্সীগঞ্জ: জেলার ধলেশ্বরীর তীরে শহর রক্ষা বাঁধ এখন হুমকীর মুখে। বেড়িবাঁধ এলাকায় বল্কহেড, বালুর ব্যবসা, ইটের ব্যবসা ছাড়াও নানা বিধ কারণে এই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাঁধকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদ্রাসা, হাটবাজার, বিভিন্ন স্থাপনা এখন হুমকির সম্মুখীন। যেই শহররক্ষা বাঁধটি শহরকে রক্ষার জন্য নির্মান করা হয়েছিল, তা এখন শহরের জন্য বিপদজনক হয়ে দাড়িয়েছে।

বেড়িবাঁধের ফাটলসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার কারণে হাটলক্ষিগঞ্জ, নয়াগাও, মীরেশ্বরাই মুক্তারপুর, মালিপাথর,ফিরিঙ্গী বাজার এলাকাগুলোর মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মুন্সীগঞ্জ বাসীর একটাই দাবী যাতে দ্রুতই যাতে বাঁধটি সংষ্কার করা হোক।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শহর রক্ষা বাঁধটির কার্যক্রম ২০০৫ সালে শুরু হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২৭ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধটি মুক্তারপুর সেতুর কাছ থেকে শুরু হয়ে লঞ্চঘাট, রমজানবেগ ও মুন্সিরহাট হয়ে শহর ঘুরে পুনরায় মুক্তারপুর সেতুর কাছে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা।

এ পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। এটুকু কাজ আটটি প্যাকেজে ছয়জন ঠিকাদার করেছেন। গত বছর তিন কিলোমিটার বাঁধের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এই কাজের নির্মাণব্যয় ৩৬ কোটি টাকা। শহর রক্ষা বাঁধের পাশে বালু রেখে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যবসা করে আসছেন।

এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের সিসি ব্লকের বেশ কিছু অংশ ধসে যায়। এতে পুরো বাঁধই ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মঙ্গলবার বাঁধ এলাকা ঘুরে এমনাই চোখে পড়ে।

বাঁধ এলাকা সংলগ্ন পারভীন আক্তার জানান, সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারা এবং জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেছেন, কাজ আর হয়নি। সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে বাড়ছে আশংকা। বেড়ি বাঁধের পাশে অসংখ্য দোকান, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার এখন ঝুকিতে আছে। তাই সবার কাছে একটাই আবেদন অতি দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তা না হলে নিজেরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। পুরো শহরকে বাঁচাতে চাইলে অতি দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ সংষ্কার করা হোক।

নয়াগাঁও এলাকার জামাল মিয়াঁ জানান, বর্ষা মৌসুমে তারা রাস্তার সংষ্কার কাজের নামে কারচুপি করে। ফলে ভুক্তভোগী হচ্ছে এই এলাকার শতাধিক মানুষ। সংশ্লিষ্টদের কাছে একটাই আবেদন যাতে অতি দ্রুত এই বিষয়ে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। শহর রক্ষার বাঁধ সংষ্কার না করার কারনে রাস্তাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নয়াগাও এলাকার জীবন আহমেদ জানান, মুক্তারপুর এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন নদীর তীরে এসে গিয়েছে, একাধিকবার বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। বালুর ব্যবসা, ইটের ব্যবসা এগুলো নদীর পাশে না করে দূরে করা উচিত। কেননা এর ফলে আমাদের নদী তীরবর্তী এলাকা এবং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে যেমন আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমন আমাদের বসবাসের জন্য হুমকী হয়ে দাড়াচ্ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, এই বেরিবাঁধটি তৈরির পর থেকে কোন সংষ্কার করা হয়নি। বাঁধের সাথে বালু এবং ইট ব্যবাসার কারণে বেরিবাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। মাটি কাটার ড্রেজারের পাইপ ও বিভিন্ন নৌযান ভেড়ানোর কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পঞ্চসার ইউনিয়নের মুক্তারপুর সেতুর কাছে ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় বাঁধের ওপর ইট ও বালুর ব্যবসা করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান ঘাট থাকা সত্ত্বেও সেখানে না ভিড়িয়ে বাঁধের সঙ্গে ভেড়ানো হয়। এতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড্রেজারের বালুর পাইপগুলো নদী থেকে বাঁধের ওপর দিয়ে গ্রামের দিকে চলে গেছে।

জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, বেরিবাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাল্কহেডগুলোর বালু লোড-আনলোডের কারনে। আর এই কাজগুলো তারা রাতের আঁধারে করে থাকে। বাঁধটি রক্ষার্থে রাতে পুলিশি নজড়দারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বাজেট পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!