• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য


এমাদুল হক (শামীম), শরণখোলা (বাগেরহাট) জানুয়ারি ২২, ২০১৮, ০৪:১২ পিএম
হুমকির মুখে সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাগেরহাট : পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন ভরাট হওয়া ভোলা নদীর কয়েক শ’ হেক্টর সম্পত্তি ধীরে ধীরে দখল খেকোদের কবলে চলে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের একক বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। অপরূপ সৌন্দার্যের লীলাভূমি এ বনের ধানসাগর টহল ফাঁড়ি হতে শরণখোলা রেঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকার ৯০০ হেক্টর সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট আটজনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা ও দীপ্তবাংলা হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের কেন্দ্রিয় সভাপতি মো. রেজাউল করিম খান রেজা।

এ ছাড়া পরিবেশ ও বনজ সম্পদ রক্ষায় ১৯৯৫ সালে সরকার এ বিষয় একটি আইন প্রণয়ন করলেও তা এখন বন সংলগ্ন এলাকায় অকার্যকর। আইন অনুযায়ী ভরাট হওয়া ভোলা নদীর কয়েক শ’ হেক্টর সম্পত্তির বৈধ মালিক বন বিভাগ হলেও দখলারদের কোনো বাধা দিচ্ছে না বন কর্তৃপক্ষ। যার ফলে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নানা অজুহাতে এ অঞ্চলের প্রভাবশালীরাও পিছিয়ে নেই দখল প্রতিযোগীতা থেকে। ইতিমধ্যে ভরাট হওয়া ভোলা নদীর শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর, রসুলপুর, উত্তর রাজাপুর, পশ্চিম রাজাপুর, ঢালির ঘোপ, সোনাতলা ও শরণখোলা এলাকার ১০ কি. মি. এলাকা জুড়ে জেগে ওঠা চরের ৯০০ হেক্টর সম্পত্তির অধিকাংশে বিভিন্ন কায়দায় বসতি স্থাপন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ পুকুর ও ঘের খননের পাশাপাশি কোথাও কোথাও পাকা ইমারত (বিল্ডিং) নির্মাণ করেছেন স্থানীয় ভূমিদস্যুরা।

অনুসন্ধানে ও লিগ্যাল নোটিশ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন লাগোয়া এক সময়ের উত্তাল ভোলা নদীটি খননের অভাবে পলি জমে ১৯৮০ দশক থেকে ভরাট শুরু হয়ে লোকালয়ের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। পরবর্তীতে বনজ সম্পদ রক্ষা ও লোকালয়ের জনসাধারণসহ বিভিন্ন গবাদী পশুর অবাধ বিচরণ ঠেকাতে কোনো মতে নালা কেটে বন রক্ষার চেষ্টা করছেন বন বিভাগ।

অপরদিকে, নদী ভরাটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন কায়দায় ওই সম্পত্তিতে মাছ চাষের জন্য ঘের তৈরির সুযোগে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন শুরু করেন। গত ২০/২৫ বছরের মধ্যে কয়েক শ’ একর সম্পত্তির অধিকাংশই দখল করে স্থানীয় শত শত বাসিন্দা বিভিন্ন পল্লী গড়ে তুলেছেন। যে কারণে দিন দিন সুন্দরবনের ওপর প্রভাব পড়ার পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন তাঁর ঐতিহ্য হারাতে থাকে। মাইলের পর মাইল জুড়ে এক প্রকার সুন্দরবনের পেটের মধ্যে ঘন বসতি তৈরি হওয়ায় কমতে থাকে সুন্দরবনের বাঘ হরিণ সহ বিভিন্ন প্রকার প্রাণীকুলের অবাধ বিবরণ হুমকির মুখে পড়ে বনের ঐতিহ্য ও পরিবেশ। বন বিভাগ ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা প্রাকৃতিক ওই সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও উভয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতায় দখল সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ায় বনজ সম্পদ সহ বনের পরিবেশ গভীর সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে বন বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ ওই পল্লীতে বসবাসরত বাসিন্দাদের অনেকেই জড়াচ্ছেন গাছ কর্তন, বন্যপ্রাণী হত্যা, পাচার ও বিষ দিয়ে মাছ নিধন, বনে আগুন দিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে। সুন্দরবনের মধ্যে এ ধরনের বসতি বনের জন্য হুমকি দাবি করে গত ২০০৪ সালে আদর্শ গ্রাম স্থাপন কার্যক্রম বন্ধের জন্য তৎকালীন সময় খুলনাস্থ পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’ উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশসহ রিট পিটিশন দায়ের করলে স্থগিত হয়ে যায় ওই প্রকল্পটি। তাই ভরাট হওয়া নদীর জমি উদ্ধারসহ অবৈধ বিকিকিনি বন্ধ করে উক্ত সম্পত্তি বনায়নের আওতায় নিয়ে বনের ঐতিহ্য ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ভূমি সচিব, পরিবেশ ও বন সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পূর্ব সুন্দরবন), বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আটজনকে দীপ্তবাংলা হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সম্প্রতি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করে পরবর্তী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে ওই নোটিশের জবাব দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর কর্ম ব্যস্ততার কারণে বক্তব্য দিতে পারেননি।

তবে, পুর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান, দীপ্তবাংলা হিউম্যান রাইডস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্ত ইতিমধ্যে তিনি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ডিসিআর বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বনরক্ষীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!