• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজত নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করলেন শেখ হাসিনা


ফেসবুক থেকে ডেস্ক জুন ৫, ২০১৭, ০৬:৩৫ পিএম
হেফাজত নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করলেন শেখ হাসিনা

ঢাকা: জাতীয় ঈদগাহ সংলগ্ন সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা তর্কবিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে হেফাজতের দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে সরকার প্রধানকে ঈঙ্গিত করেও নানা আলোচনা চলতে থাকে।

অবশেষে হেফাজতে ইসলাম ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকার তথা নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) নেতা ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পরিষ্কার করেন।

দুই সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ইফতারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান শেষে প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী তার অবস্থান তুলে ধরেন। পরদিন Sheikh Hasina Wazed ফেসবুক আইডিতে সেই বক্তব্য তুলে ধরেন। সেই বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, হেফাজত কিংবা অন্য যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আদর্শে ভিন্নতা ও মতবিরোধ থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী (দেশের অভিভাবক) হিসেবে যা ভালো মনে করেছি তাই করেছি।’

কওমি মাদরাসায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে, এতদিন তাদের শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা না করে আমি থাকতে পারি না। তাই তাদের কাছে ডেকে কথা বলেছি, ছয়টি শিক্ষাবোর্ড গঠন করে দিয়েছি, দেশকে শতভাগ শিক্ষিত করতে হলে তাদের বাদ দেয়া সম্ভব না।

যারা হেফাজতের সঙ্গে সরকার হাত মিলিয়েছে, চেতনা গেল গেল বলে গলা ফাটাচ্ছেন, ৫ মে রাতে যখন হেফাজত শাপলা চত্বর দখল করেছিল তখন তারা কোথায় ছিলেন? তারা কী চেতনাবোধ থেকে সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন?

ভাবতে পারেন আর কয়েক ঘণ্টা হেফাজতের দখলে থাকলে দেশের কী অবস্থা হতো? সেদিন আমি নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে যা যা করণীয় তা করে হেফাজতমুক্ত করেছিলাম। সবার মধ্যে আতঙ্ক ছিল কী হবে কী হবে? পরদিন অনেক মন্ত্রিসভার সদস্য ভয়ে সচিবালয়মুখীও হননি।

হেফাজত ইসলামের মুসল্লিদের ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়েছিল বিএনপি। ৫ মে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের এনে জড়ো করে সরকার পতনের অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ওদের বলা হয়েছিল ২শ’ গরু জবাই করে তাদের বিরিয়ানি খাওয়ানো হবে। ছোট ছোট কোমলমতি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সারাদিন একটি রুটি আর কলা খাইয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

সরকারের প্রতি ভুল ধারণা নিয়ে ওরা জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলালে দেশের কী অবস্থা হবে তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন? তারা এখন জঙ্গি দমনে সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, এ উদ্যোগকে যারা সহজভাবে নিতে পারেন না তারা কী চান? 

জাতীয় ঈদগাহ সংলগ্ন সুপ্রিম কোর্টের যে স্থানটিতে গ্রিক গড অব থেমিসের আদলের ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল সেই ভাস্কর্যের গায়ে শাড়ি পড়ানো হলো কেন? ভাস্কর্য স্থাপনের আগে বাইরে থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশপথে দেশের মানচিত্র দেখা যেতো, ওইটি স্থাপনের পর সেটি ঢেকে যায়। তা ছাড়া জাতীয় ঈদগাহের সামনে নামাজের সময় এটিদেখা গেলে দৃষ্টিকটু লাগতো, তাই ওটি সরানো হয়েছে। 

ভাস্কর্য সরানোর ফলে অনেকে ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাইদিয়ে ধর্ম গেল গেল বলে চিৎকার করছেন, আন্দোলন করছেন। কেউ কেউ ভাস্কর্য সরালে মসজিদও সরাতে হবে এমন কথাও বলছেন। যাদের আমি জিরো থেকে হিরো বানিয়েছি তারা এখন আন্দোলন করছেন। তারা কী ভুলে গেছেন শাহবাগে তাদের যখন হেফাজতিরা তাড়া করেছিল তখন তাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাঁচিয়েছিলো। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মকে অস্বীকার করা নয়, শূকরের মাংস, মদ ও গাঁজা খেয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা যারা বলেন, তারা পারভারটেড।

আমি অনেক অপমান সহ্য করেছি, এখন যারা এর বিরোধিতা করছেন আর যারা পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আমরা দু’পক্ষের কারও পক্ষে থাকবেন না। তারা আগে মারামারি ও মল্লযুদ্ধ করে শক্তির পরীক্ষা করুক। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও এ ব্যাপারে দু’পক্ষ মুখোমুখি হলে কিছু করতে মানা করেছি। দু’পক্ষের শক্তির পরীক্ষায় যারা আহত হবেন তাদের চিকিৎসা দিবো।

বাস্তবতা বিবেচনা না করে অনেক মন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় তার পাশে বসে থাকা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ছাড়াও রাশেদ খান মেনন ও আসাদুজ্জামান নূরের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কথা বলার আগে তারা পদত্যাগ করতে পারতেন।’

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!