• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজতকে মাঠে আনছেন এরশাদ


এম সুজন আকন, নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৪, ২০১৭, ০৯:৫৮ পিএম
হেফাজতকে মাঠে আনছেন এরশাদ

ঢাকা: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় নতুন হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বৃহৎ দুই জোটের বাইরে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্লাটফরম গঠনে ভেতরে ভেতরে তুমুল প্রস্তুতি চলছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে তাই রাজনীতির মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তাপ।

অবশ্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী জোটের নির্বাচনী পালেও লেগেছে হাওয়া। উভয়পক্ষই নির্বাচনে মাঠ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শীর্ষ পর্যায় থেকে দেয়া হয়েছে নির্দেশনাও। তবে বৃহৎ এই দুই জোট ভোটার আর আম জনতার আলোচনার খোরাক জোগাতে পারেনি। যতটা পারছে নতুন জোট গঠনের খবর।

যদিও আগামীর ভোটযুদ্ধে জিততে বছর দুয়েক আগে থেকেই রাজনীতির ময়দানে নতুন করে শুরু হয়েছে মেরুকরণ। এবার তা প্রকাশ্যে আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে রাজনীতির মাঠে একপক্ষ অপরপক্ষকে ঘায়েল করে জনমত নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে চলে ক্ষমতা ও শক্তির লড়াইয়ে বিরোধীদের ঘায়েলের চেষ্টা। তবে এবার শক্তিশালী জোট বাড়ার ফলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে বলেই মনে করছেন বোদ্ধারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীনরা আবারো ক্ষমতায় ফিরতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আর এ জন্য যা যা করা দরকার সবই করবে। অন্যদিকে বিরোধীরাও ক্ষমতায় ফিরতে নানা কৌশল করবে। নতুন গঠিত জোটকেও তারা নিজেদের তাবুর নিচে আনা চেষ্টা করবে প্রাণপণ।

বিশ্লেষকদের ধারনা, সরকার আবারো এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চাচ্ছে। সরকারের গ্রিন সিগনালে এরই মধ্যে এরশাদ তৎপরতাও শুরু করে দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবেই নতুন রাজনৈতিক প্লাটফরম বা শক্তিশালী জোট গঠন করে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলছেন। আর এরশাদের টার্গেট ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে এক কাতারে নিয়ে আসা।

এর আগেও রাজনীতির মাঠে নতুন চমক নিয়ে আসছেন এরশাদ- এমন খবর চাউর হয়। জাতীয় পার্টি নতুন জোট গঠন করে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় বৃহৎ বা বিরোধী দল হিসেবে সংসদের প্রতিনিধিত্ব যে করতে চায় এটা আগেই জানিয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান।

পার্টির একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে, জাপার নেতৃত্বাধীন জোটে হেফাজতে ইসলাম যোগ দিতে পারে। এর বাইরে ধর্মভিত্তিকসহ ১০ থেকে ১২টি রাজনৈতিক দল এরশাদের নেতৃত্বাধীন নতুন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছে। তবে হেফাজতের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলের নাম এখনো তেমন করে আলোচনায় আসছে না।

কয়েক বছর আগেই (২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ আহমদ শফীর দোয়া নিয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। জাপা ক্ষমতায় গেলে হেফাজতের ১৩ দফা মানার চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে এরশাদের মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতেও দেখা গেছে।

সে সময় এরশাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামের দারুল উলুম মইনুল ইসলাম (হাটহাজারী বড় মাদরাসা) মাদরাসায় হেফাজতের প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা প্রায় ৫০ মিনিট রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকেই তাদের জোট বাঁধার আগামী পরিকল্পনা ছিল বলে ইঙ্গিত করছেন বিশ্লেষকরা।

জাপার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দুটি দলের সঙ্গে তাদের কথাবার্তা চলছে। এর বাইরে ইসলাম ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গেও জাপার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার জোট বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্সের (বিএনএ) একাধিক দলও জোটে আসার আগ্রহ দেখিয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান বেশ আগেই তাদের নেতৃত্বে একটি নতুন জোটের আভাস দিয়েছিলেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ও শক্তিশালী একটি জোট গঠনে নেতৃত্ব দেবে জাপা।

সম্প্রতি এরশাদ বলেছেন, ‘নতুন জোট গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এরই মধ্যে সমমনা অনেক দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছি।’ আর নতুন এই জোট প্রক্রিয়ায় ইসলামি ভাবাপন্ন দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে আভাসও দিয়েছিলেন। দলটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারও বলেছেন একই কথা।

নতুন জোট প্রসঙ্গে জাপার মহাসচিব রহুল আমিন হাওলাদার জানান, আমরা ইসলামী আদর্শ অক্ষুণ্ন ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে পৃথক একটি জোটের কথা ভাবছি। ইতোমধ্যে আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে দুটি ইসলামী ভাবধারার দল যোগাযোগ করেছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!