• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন নবীনরা


বাগেরহাট প্রতিনিধি জুলাই ২৪, ২০১৭, ১০:২৯ এএম
হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন নবীনরা

বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলাজুড়েই বইতে শুরু করেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। বাগেরহাট জেলায় সংসদীয় আসন (৯৫-৯৮) ৪টি। এই ৪টি আসনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি থেকে কে কোন আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন, এসবের পাশাপাশি এদুটি প্রধান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশি নবীন নেতারা এলাকাবাসিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাটানো পোস্টার ও প্যনায় ছেয়ে গেছে হাট-বাজার, জনপদ।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা বা বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি’র মধ্যে কে বাগেরহাট-১ আসন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচন করেবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বা ছোট বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এই আসনে নির্বাচনে করলে বর্তমান এমপি বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ হেলাল কি বাগেরহাট সদর আসন থেকে নির্বাচন করবেন? তাহলে সদর আসনের বর্তমান এমপি রাকসুর সাবেক ভিপি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা কি মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন? বিগত ভোটারবিহীন নির্বাচনে হারতে-হারতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের তৎপরতায় জয়ী হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীন নেতা ডা. মোজ্জাম্মেল হোসেন আগামী তিব্র-প্রতিদন্ধিতাপূর্ন নির্বাচনেও কি দলীয় মনোনয়ন পাবেন? এসব বিষয়ের পাশাপাশি আলোচিত হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট জেলার সবকটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের ভিভিআইপি বা হেভিওয়ট প্রার্থীদের সাথে বিএনপি দলীয় তরুন প্রার্থীদের প্রতিদন্ধিতার বা জয়-পরাজয়ের আগাম হিসেব নিয়ে।

সংসদীয় আসন-৯৫, বাগেরহাট-১ (মোল্লাহাট- ফকিরহাট ও চিতলমারী) আসন : গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়ার সীমান্তে মধুমতি নদীর অপর পাড়ের এই সংসদীয় আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দূর্ভেদ্য ঘাটি। এই আসন থেকে নির্বাচন করে থাকেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগে প্রার্থী বিজয়ের শত ভাগ নিশ্চিত এই আসনটিতে এবার প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তার ছোট বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার প্রার্থী হবার বিষয়টি দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মুখে-মুখে আলোচিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা- শেখ রেহানা এই আসন থেকে নির্বাচন না করলে বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা বর্তমান এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন নির্বাচন করবেন। এমপি শেখ হেলাল এই আসন থেকে নির্বাচন না করে বাগেরহাট সদর আসন থেকে নির্বাচন করলে প্রার্থী হিসেবে তাঁর ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের নাম আলোচিত হচ্ছে। শেখ তন্ময় ইতিমধ্যেই তাঁর পিতার আসনসহ বাগেরহাট সদর আসনে দলীয় সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের সুখ-দুখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নিশ্চিত এই আসনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ হেলালের কাছে একাধিক বার পরাজিত জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শেখ মজিবর রহমান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু আবারও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে তাদের কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন। একই সাথে এদুই প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে দলীয় প্রার্থী হতে মাঠে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির অপর সহসভাপতি মেরিন ইঞ্জিনিয়ান মাসুদ রানা। ক্লিন ইমেজের দক্ষ এই প্রার্থী মাঠ পর্যায়ে হামলা-মামলার স্বীকার নেতাকর্মীদের সব রকম সহযোগিতাসহ এলাকায় শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলেছেন।

সংসদীয় আসন-৯৬, বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর ও কচুয়া) আসন : বাগেরহাট সদরের এই আসনটিতে প্রতিদন্ধিতাপূর্ন নির্বাচনে এক বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হলে পরের নির্বাচনেই বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী। তবে বিগত সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ের নির্বাচন থেকে দু’দফায় আওয়ামী লীগের দখলে এই সদর আসনটি। এই আসনটি থেকে কয়েক বার নির্বাচিত এমপি অধ্যাপক মীর সাখাওয়াত আলী দারু’র অসুস্থ্যতাজনিত কারনে তাঁর ভাই রাকসুর সাবেক ভিপি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বর্তমানে পরপর দু’বার নির্বাচিত এমপি। তাঁর অসুস্থ্য ভাই সাবেক এমপি মীর দারুর এই আসনে রয়েছে ক্লিনইমেজ।

বর্তমান এমপি মীর বাদশা এবারও দলীয় মনোনয় চাইবেন। তবে জেলা আওয়ামা লীগ ও তার অংগ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে বর্তমান এমপির সৃষ্টি হয়েছে জোজন-জোজন দূরত্ব। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান  টুকু বলেছেন, দলের তৃর্ণমূলের কর্মী-সমর্থকসহ আমরা চাই সদরের এই আসনটিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের যেকোন সদস্য নির্বাচন করুক।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা, শেখ হেলাল বা তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের মধ্যে যেকোন একজন নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীই বিজয়ী হবে। তবেই বঙ্গাবন্ধু পরিবারের কোন সদস্য এই আসনে প্রার্থী না হলে জেলা তাঁতীলীগের সভাপতি, বাগেরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাকী তালুকদার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ন সদর আসনটি  ধরে রাখা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোন সদস্য এআসন থেকে নির্বাচন না করলে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালাম এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী। বয়সে তরুন এই নেতা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করাসহ গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলু এআসনে দলীয় প্রার্থী।

সংসদীয় আসন-৯৭, বাগেরহাট-৩ (রামপাল ও মোংলা) আসন :  এই আসনটি ৯১ সাল থেকেই প্রতিদন্ধিতাপূর্ন সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বর্তমান এমপি তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলে ২০০৮ সালে তা৭র স্ত্রী তালুকদার হাবিবুন নাহার এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এছাড়া প্রতিটি প্রতিদন্ধিতাপূর্ন নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন।

’৯৬ আওয়ামী লীগ সরকারের তিঁনি ছিলেন ত্রান প্রতিমন্ত্রী। এবারও তালুকদার আব্দুল খালেক এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। ৯১ সাল থেকেই প্রতিদন্ধিতাপূর্ন সবকটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে প্রতিদন্ধিতাকারি জামায়াতের প্রার্থী একবারও জয়ী হতে পারেনি। সেকারনে এবার এই আসনটি আর জামায়াতকে ছাড় দিচ্ছেনা বিএনপি।

বিএনপির হাই কমার্ন্ডেও সবুজ সংকেত পেয়ে বিগত বছরগুলোতে এই আসনের প্রতিটি ইউনিটে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাপক গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ফরিদুল ইসলাম। সাংগঠনিক ভাবে দক্ষ ও ক্লিন ইমেজের এই প্রার্থী মাঠ পর্যায়ে হামলা-মামলার স্বীকার নেতাকর্মীদের সব রকম সহযোগিতাসহ অসহায় দরিদ্রদের চিকিৎসা ও অর্থিক সাহায্য করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বিএনপির একক এই প্রার্থী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তীব্র প্রতিদন্ধিতায় ফেলবে এমনটাই বলছেন ওই আসনের সাধারন ভোটাররা। তবে, জামায়াত বলছে, জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির এ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ জোট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।

সংসদীয় আসন-৯৮, বাগেরহাট-৪ (মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা) আসন :  এই আসনটিতে একবার জয়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী। অন্যবার জয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত জোটের জামায়াতের প্রার্থী। বিগত সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ের নির্বাচন থেকে এবারও এই আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সমাজকল্যান প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তবে সর্বশেষ ভোটারবিহীন নির্বাচনে জেলার অন্য ৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত হলেও ডা. মোজাম্মেলকে দলের দুই নবীন বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হারতে- হারতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের তৎপরতায় জয়ী জয়ী হতে সক্ষম হয়।

আগামী নির্বাচনটি তীব্র-প্রতিদন্ধিতা হওয়ায় ডা. মোজাম্মেলকে এবার মনোনয়ন দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলায় তীব্র দলীয় কোন্দলের মধ্যে এবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে কয়েক বছর ধরে এলাকায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার অংগ-সহযোগি সংগঠনের বড় অংশ সাবেক এই ছাত্রনেতার হয়ে গনসংযোগ করছেন।

দলমতের উর্ধে উঠে অসহায়-দরিদ্র ও তৃর্ণমূল পর্যায়ে হামলা-মামলার স্বীকার নেতাকর্মীদের সাধ্যমত সাহায্য- সহযোগিতা করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। ক্লিন ইমেজের দক্ষ এই নেতা বৈবাহিক সূত্রে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ মনিরুজ্জামান বাদলের জামাতা হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। তাঁর চাচাশশুর শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানও। এসব কারণে তিনি শরণখোলায় উপজেলায় সবর কাছে একজন সমাদৃত প্রার্থী হিসেবে আমজনতার কাছে খুব সহজে পৌছাতে পারছেন।

মোড়েলগঞ্জের সন্তান সোহাগ বলেছেন তিনি আগামী নির্বাচনে বাগেরহাট – ৪ আসন থেকে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। দলকে ক্ষক্তিশালী করতে শরণখোলা- মোড়েলগঞ্জে তৃর্ণমূলে কাজ করছেন। সোহাগ ছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এবং মোড়েলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আমিলুল আলম মিলনও দলীয় মনোনয়নের প্রথ্যাশায় এলাকায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলে এই আসনে এবার জামায়াত থেকে প্রার্থী হবেন অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম। আর বিএনপি একক ভাবে প্রার্থী দিলে মোড়েলগঞ্জের সন্তান কেন্দ্রীয় বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক  সাবেক চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি কাজী খাইরুজ্জামান শিপন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে তারা জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে দলটির সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা সোমনাথ দে এই আসনে জাপার প্রার্থী হিসেব তৃর্ণমূলে গণসংযোগ করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!