• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হেরে গেলেন শামীম ওসমান!


নিয়ন মতিয়ুল নভেম্বর ১৯, ২০১৬, ০১:৫১ এএম
হেরে গেলেন শামীম ওসমান!

ঢাকা: প্রথমবারের নির্বাচনে হেরে গিয়ে নিশ্চয়ই লজ্জা পেয়েছিলেন। সবচেয়ে প্রিয় ছেলে হওয়ার আকাশচুম্বী গর্বও ম্লান হয়ে গিয়েছিল। যে তল্লাটে ‘বাঘে মহিষে একঘাটে জল খাওয়ান’ সেখানেই এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজয়ের ধাক্কা! একেবারেই অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছিল সবার কাছে। হয়তো সে কারণেই ‘শ্রদ্ধেয় মায়ের’ প্রিয় ছেলের খাতা থেকে সবার অলক্ষ্যে নামটাও কাটা গিয়েছিল। যার জলজ্যান্ত প্রমাণ পাওয়া গেল।

আরো বোঝা গেল, রাজনীতিতে মা ডেকে কারো সহানুভূতি আদায় করা যতটা সহজ, ততটা সহজ নয় নিজের দুষ্টুমী আড়াল করে ভালো মানুষ সাজার পরিকল্পিত অপপ্রয়াস।

সে তো সেই ২০১১ সালের গল্প। কৌশলে দলীয় সমর্থন আদায় করে স্বদলীয় প্রতিপক্ষকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ জ্ঞান করে পুরো তল্লাটে দাপিয়ে বেড়ালেন। শতভাগ কনফিডেন্ট নিয়ে অনিবার্য বিজয়ের দিবাস্বপ্ন দেখলেন। কিন্তু শেষ বেলায় অবিশ্বাস্য ব্যবধানে স্বদলীয় প্রতিপক্ষের কাছে হেরে গেলেন।

তবে দুষ্টু ছেলের মতোই পরাজয়ের মধ্যে খুঁজতে শুরু করলেন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। প্রমাণস্বরূপ রাজপথে বের করলেন লক্ষাধিক সমর্থক। দিলেন বিশালমাপের শোডাউন। বোঝাতে চাইলেন, ভোট তার পক্ষেই ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ তাকে তলিয়ে দিয়েছেন। বিপুল পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপি- জামায়াত কোটি কোটি টাকার খেলা খেলেছে। আমাকে পরাজিত করতে বিরোধীদলের নেতা ভোটের আগের রাতে তার প্রার্থীকে কোরবানি দিয়েছেন। ওই ভোটগুলো অন্য জায়গায় পড়েছে।’

রাজনীতি নিয়ে যারা কখনও কখনও মাথা ঘামান তারা বুঝলেন, জনগণের (না, সরকারের?) আইওয়াশের এ ফলাফল কোনো এক সময় কাজে লাগাবেন শামীম ওসমান। কিন্তু সবার অভিজ্ঞতা মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেল। 

নিজের পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে আর স্বদলীয় চিরকালীন প্রতিপক্ষকে নাকানি-চোবানি খাওয়াতে গণপদত্যাগের যে ফরমুলা বুক পকেট থেকে বের করলেন তা তো মাঠে মারা গেল। তিন নম্বর বাচ্চারা ছাগলের দুর্গতি দেখে হয়তো লাফালাফি বন্ধ করে অন্য চিন্তা করছে।  

‘রক্তখেকো নগরী’ হিসেবে নিন্দিত নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির গতিটাই বড় অদ্ভুত। প্রবল স্ববিরোধী আর স্বার্থপরতার কাছে নীতি নৈতিকতা হারানো কিছু নেতার কাছে এ রাজনীতি ‘দিল্লিকা লাড্ডুর’ মতো। 

স্বাধীনতার পর থেকে বন্দরনগরীর রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে দুটি প্রভাবশালী পরিবারের হাতধরে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলী আহাম্মদ চুনকা আর শামসুজ্জোহার ছিল একদিকে গভীর আত্মিক, আরেকদিকে নির্ভরতার সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের উত্তরসুরী হয়ে এসেছেন চুনকার যোগ্যকন্যা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আর শামসুজ্জোহা পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য শামীম ওসমান।

কিন্তু রাজনীতির অন্ধকারের পথ ধরে সুন্দর সম্পর্কের বহমান ধারা কলুষিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে ওই দুই পরিবারের কৃতজ্ঞতার বন্ধন অবিচ্ছেদ্য থাকলেও দুই পরিবার চলে গেছে দুই মেরুতে। কেউ কারো আপন হয়ে উঠতে পারনি। একপক্ষ আলোর দিকে, আরেক পক্ষ আলোহীন পথে। 

দলীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে তাই বন্দরনগরীর নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় রিপাবলিকান মার্কিন সরকারের বৈদেশিক নীতির মতোই মনে হয়। না হলে এতো অভিযোগ থাকার পরেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই একজনই কেন হয়ে ওঠতে পারেন অনিবার্য। দল যার পাশে দাঁড়ায় বারংবার। দলীয় এই পৃষ্ঠপোষকতা বরাবরই থেকে গিয়েছে ব্যাখ্যাতীত। 

তবে এবারের সিদ্ধান্ত অতীতের সবকিছুই পাল্টে দিয়েছে। রক্তখেকো নগরীর রাজনীতি নিয়ে ভালো মন্তব্য করার সুযোগও হয়তো এসে গেছে।

কে হচ্ছেন মেয়র, শামীম ওসমান না আইভী?
আইভীই হলেন আ.লীগের প্রার্থী

সোনালীনিউজ/এমএন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!