• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে


দ্বীন ইসলাম আরিয়ান ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭, ১১:৩৪ এএম
হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে

ঢাকা : ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে। পৃথিবীর সুন্দরতম একটি দিন। যার অপেক্ষায় দীর্ঘ প্রহর গুণে প্রেমিক-প্রেমিকারা। ‘ভালোবাসা’ জীবনের সুন্দরতম এই উচ্চারণের শুদ্ধতম প্রকাশ ঘটে ওই দিন। প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাঙ্ক্ষিত সাহচর্যে। অথচ এ প্রেমের কারণে রাজ্যহারা হয়েছেন কেউ কেউ। ত্যাগ করেছেন রাজসিংহাসন। মর্মর পাথরে গড়েছেন প্রেমের সৌধ- তাজমহল। আবার কেউ নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন অন্তহীন প্রাণের আবেগে। 

পৃথিবীতে কবে থেকে এই ভালোবাসা দিবসের শুরু? তার সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। তবে এ নিয়ে প্রচলিত আছে নানা কল্প-কাহিনী ও প্রেম-উপাখ্যান। চায়নাদের ‘দি নাইস অব সেভেনস’ এবং জাপানি ও কোরিয়ানদের ‘হোয়াইট ডে’ ভালোবাসাকেন্দ্রিক হলিডে হলেও পশ্চিমাদের বহুজাতিক ‘ভালোবাসা দিবস’ একমাত্র ভালোবাসা দিবস হিসেবে বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে। এটি এখন রীতিমতো কসমোপলিটান কালচার। প্রেমিক-প্রেমিকারা কত বিচিত্র পন্থায় ভালোবাসা বা ভালোলাগার প্রমাণ রাখতে চান, তা সত্যিই বিস্ময়কর। উপহারসামগ্রী আদান-প্রদানের দিক থেকে ক্রিসমাসের পরই ভ্যালেন্টাইনস ডের স্থান। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের কোটি কোটি প্রেমিক-প্রেমিকা এসএমএস কিংবা এমএমএসের মাধ্যমে তাদের মনের কথাটি প্রকাশ করেন। নব্বইয়ের দশক থেকে আমাদের দেশেও ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। পারস্পরিক ভালোবাসার হাজারও জাগতিক প্রকাশ ঘটে এ দিনটিতে।

ইতিহাসে আধ্যাত্মিক বা রহস্যময় যে ক’জন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে জানা গেছে, তাদের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়ার সাধক ভ্যালেন্টাইন (১০০-১৫০) ইতিহাসে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। তিনি ছিলেন রহস্যময় শিক্ষক ও ১৪৩ সালে ‘বিশপ অব রোম’ পদের একজন শক্তিশালী প্রার্থী। তার ভালোবাসার ভার্সনে বিয়ে প্রাধান্য পেয়েছে। খ্রিস্টধর্মের মৌল চেতনায় কঠোর তপস্যা ও কৌমার্যব্রত পালনকে তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। পরকালে দায়মুক্তির কনসেপ্টের চেয়ে বাসরঘরই তার কাছে শ্রেয় ছিল। 

জার্মান পণ্ডিত গুয়েবার স্ক্যান্ডেনেভিয়ান অঞ্চলের দেবতা ভ্যালির সম্পর্কে লিখেছেন- ‘ভ্যালি হচ্ছেন চিরন্তন আলোর উৎস’। যেমন করে ডিভার হচ্ছে, এমন বস্তু যাকে কোনোদিনও ধ্বংস করা যাবে না। 

আলোকরশ্মিকে যেমন তীর হিসেবে বর্ণনা করা, তেমনই দেবতা ভ্যালিও সবসময় তীরের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। এ কারণে নরওয়েবাসী ফেব্রুয়ারি মাসের ক্যালেন্ডারটিতে ধনুকের চিহ্ন রাখবেই। আর এটির নাম ‘লিয়া-বেরি’ মানে আলো আনয়কারী। একসময় জার্মানির খ্রিস্টানরা ফেব্রুয়ারি মাসটিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জন্য উৎসর্গ করে দেশের উপজাতিদের ধর্মীয় আচার পালন থেকে বিরত থাকতে বারণ করত। বলা হয়ে থাকে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দেবতা ভ্যালির মতোই দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। যারা সুন্দর আগামী উপহার দিতে পারতেন। মানব মনের সব  আবেগকে জাগিয়ে দিতেন, বিশ্বের সব প্রেমিক-প্রেমিকাকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ইতিহাসে রয়েছে- ফেব্রুয়ারির সঙ্গে ভালোবাসা ও উর্বরতার সম্পৃক্ততার প্রমাণটিও নাকি বেশ প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিক ক্যালেন্ডারে মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত সময়টির নাম হয়েছে থ্যামিলিয়ন। আর প্রাচীন রোমে ১৫ ফেব্রুয়ারিকে বলা হতো লিউপারক্যালিয়া। পোপ গ্যালাসিয়াস (৪৯২-৪৯৩) লিউপারক্যালিয়া উৎসব বাতিল ঘোষণা করেন। তবে পোপ ৪৯৬ সালে ঘোষণা দেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে পালিত হবে। সেই থেকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে। অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসের শুরু।

বলা হয়, তিনজন খ্রিস্টান শহীদ ভ্যালেন্টাইনের নামে দিবসটি পালন শুরু হয়। তবে তাদের মধ্যে কে প্রকৃত ভ্যালেন্টাইন ছিলেন এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। রয়েছে নানামাত্রার উপাখ্যান। আসুন জেনে নিই সেসব উপাখ্যানের খণ্ডকাহন-         
                
উপাখ্যান-১

রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের সময়কালের কথা। যুদ্ধের জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী দরকার। কিন্তু যুবকরা কেউ সেনা দলে যোগ দিতে রাজি নন। সম্রাট পড়লেন মহামুশকিলে। ভাবছেন কী করা যায়। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসে- দেশের যুবকরা যেন প্রেম-ভালোবাসায় জড়িয়ে না পড়ে কিংবা বিয়ে করতে না পারে। তা হলে তারা অবশ্যই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করবে না। ঘোষণা করলেন রাজ ফরমান- ‘আজ থেকে যুবকদের বিয়ে নিষিদ্ধ’। তার এই ফরমানে দেশের তরুণ-তরুণীরা ক্ষেপে গেলেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এই আইন মেনে নিতে পারেননি। তিনি পাশে এসে দাঁড়ালেন তরুণ-তরুণীদের। সম্রাটের আইন অমান্য করে তিনি গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে লাগলেন। মোমবাতির স্বল্প আলোয় একটি রুমে বর-বধূ বসত। ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ খবর বেশি দিন গোপন থাকেনি। সম্রাট ক্লডিয়াস পুরো ব্যাপারটি জেনে গেল। এবং ভ্যালেন্টাইনকে বন্দি করে জেলে পুরলেন। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে-কানাচে। প্রেমিক যুবক-যুবতীদের মধ্যে দেখা গেল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তাদের অনেকেই প্রতিদিন ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে দেখতে আসতেন। তারা তাকে ফুল উপহার দিতেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের উদ্দেশে বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলতেন- যাতে তিনি ভেঙে না পড়েন। এক কারারক্ষীর একজন অন্ধ মেয়ে ছিল। মেয়েটি ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত কারাকক্ষে। অনেকক্ষণ ধরে তারা দুজন প্রাণ খুলে কথা বলতেন। অন্ধ এ মেয়েটিও নানা কথা শুনিয়ে ভ্যালেন্টাইনকে উৎসাহ দিতেন। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারগুলো আর গোপন থাকল না। ভ্যালেন্টাইনের প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা সম্রাটের কানে যায়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। ভ্যালেন্টাইনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীর সেই মেয়ের উদ্দেশে তার বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটি চিঠি লেখেন। যাতে লেখা ছিল- ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসার এ স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশে সেই থেকে শুরু সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন।

উপাখ্যান-২

৮২৭ খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন নামের এক ব্যক্তি রোমের পোপ নির্বাচিত হয়েছিল। তিনি তার চারিত্রিক মাধুর্য এবং সুন্দর ব্যবহার দিয়ে অল্পদিনের মধ্যেই রোমবাসীর মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ৪০ দিন দায়িত্ব পালনের পরই তার জীবনাবসান ঘটে। প্রিয় পোপের মৃত্যুর পর তার স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারি রোমবাসী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনেকের মতে, এভাবেই ভ্যালেন্টাইনস ডের সূচনা।

উপাখ্যান-৩

ইতালির রোম শহরে ভ্যালেন্টিনা নামে এক সুদর্শন যুবক বাস করতেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে তিনি রোমানদের দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা ত্যাগ করেন। ভ্যালেন্টিনার দেখাদেখি তার অনেক বন্ধুবান্ধবও পূজা-অর্চনা ছেড়ে দেন। ফলে রোমান সম্রাট ক্ষিপ্ত হয়ে ভ্যালেন্টিনাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। ভ্যালেন্টিনার বন্ধুবান্ধবরা তাকে কারাগারে চিঠিপত্র দিয়ে সাহস জোগাতেন। শেষ পর্যন্ত ভ্যালেন্টিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টিনার মৃত্যু দিন। প্রতি বছর এই দিনে তার বন্ধুবান্ধবরা তাকে স্মরণ করতেন। সেই থেকে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের শুরু বলে অনেকে মনে করেন।

এসব প্রচলিত গল্প নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। রয়েছে নানাজনের নানামত। তবে গল্প কিংবা বিতর্ক যাই থাকুক, ভ্যালেন্টাইনস ডে এখন আর কোনো নির্দিষ্ট গোত্র বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। গোটা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে তার আবাহন। যার গভীরে লুকিয়ে রয়েছে ভালোবাসার সবুজবার্তা। আজকের পৃথিবীতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অস্থির জনজীবন। অন্তত এই একটি দিনেও যদি মানুষের মধ্যে শান্তি ও সদ্ভাব ফিরে আসে, তা হলে মন্দ কি? কারণ আমরা চাই, সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হোক পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ। রচিত হোক মহামিলনের মহাকাব্য।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!