• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
বিআরটিএ’র পরীক্ষা জটিলতা

হয়রানির কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেন না চালকরা


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৫, ২০১৮, ১০:০০ এএম
হয়রানির কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেন না চালকরা

ঢাকা : প্রায় ৭৯ বছরের পুরনো আইনে চলছে দেশের পরিবহন খাত। ওই আইনের আলোকে একজন চালককে কয়েক ধাপে পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু বিআরটিএ পরিচালিত এ পরীক্ষা পদ্ধতিতে পদে পদে হয়রানি হতে হয় দক্ষ চালকদেরও। ফলে অনিয়ম ও হয়রানি এড়াতে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চান না পরিবহন চালকরা। সংশ্লিষ্ট অনেকেরই মতামত এমনটাই।

দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনা যে কারণেই হোক না কেন, এর দায় গিয়ে পড়ে চালকের ঘাড়ে। তা ছাড়া সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ, গাড়ির চালক ও মালিকের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মোটরযান আইনের বিভিন্ন বিধান রয়েছে। যুগোপযোগী আইন ও বিধান না হওয়ায় বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে গাড়ির চালকদের বেশিরভাগেরই তেমন কোনো ধারণা থাকে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য মতে, দেশে এই মুহূর্তে মোট নিবন্ধনকৃত যানবাহন রয়েছে প্রায় ৩২ লাখ। এসব যানবাহনের বিপরীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক আছে প্রায় ২০ লাখ। বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ীই অবৈধ চালক দিয়ে প্রায় ১২ লাখ যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে চলছে।  ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম মোটরযান আইন করা হয় ১৯৩৯ সালে। এরপর সময়ের প্রয়োজনেই এই আইনের আরো একটি অধ্যাদেশ ১৯৮৩ সালে পাস করা হয়, যা সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। ওই আইনও এখন অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। আর এই কাগুজে আইনের বেড়াজালে পড়ে পরিবহন চালকরা অবৈধ পথে হাঁটছেন।

সরেজমিন বিআরটিএ’র খিলক্ষেত ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, লাইসেন্স নিতে একজন চালককে তিনটি ধাপে (লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক) পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এই তিনটি ধাপের পরীক্ষার মধ্যে মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই ধাপেই চালকরা বেশি হয়রানির শিকার হন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিদর্শকের উপস্থিতিতে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কোনো মাধ্যমে আগে থেকে গোপন চুক্তি বা কারো সুপারিশ না থাকলে এই ধাপেই গড়ে ৭০ শতাংশ চালক অকৃতকার্য হয়ে যান। আর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ব্যবহারিক পরীক্ষায় পড়তে হয় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। নিয়ম অনুসারে এই পরীক্ষার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিগজাগ পরীক্ষা’।

বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি এল শেপের রাস্তা দিয়ে যথাযথ স্থানে গাড়িটি পার্ক করতে পারলেই পরীক্ষায় পাস। এখানেও গোপন চুক্তি বা সুপারিশ না থাকলে ৯০ শতাংশ চালককে অকৃতকার্য হতে হয়। খিলক্ষেতে পরীক্ষা দিতে আসা কয়েকজন চালক বলেন, নির্দিষ্ট ব্যাংকে ৫১৮ টাকা জমা দিয়ে বিআরটিএ থেকে লার্নার (শিক্ষানবিশ) কার্ড নিয়েছেন। এর তিন থেকে পাঁচ মাস পর এই পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাদের। মামুন মিয়া নামে একজন চালক বলেন, এর আগে তিনি আরো দুবার পরীক্ষা দিয়েছেন। দালাল না ধরায় তিনি পাস করতে পারেননি। এবার ৫১৮ টাকা জমা দিয়ে আট হাজার টাকায় দালালের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। দালাল এই চালককে বলেছেন, পরীক্ষায় যোগদান করলেই পাস করিয়ে লাইসেন্স করিয়ে দেবেন তিনি।  

মিরপুর বিআরটিএ অফিস থেকে কয়েকদিন আগে লাইসেন্স নিয়েছেন চালক কালাম। তিনি জানান, আট বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন। কোথাও কখনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। এর আগে একবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারেননি। এবার চুক্তিতে ১০ হাজার টাকায় তিনি ঝামেলা ছাড়াই লাইসেন্স পেয়েছেন। তবে এই চালককে নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে হয়েছে।  

হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করে বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আলী আহসান মিলন বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিটি চালককে তিন ধাপের পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক। আমরা পেশাদার চালকদের সহজে লাইসেন্স পেতে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করে থাকি। কাউকে হয়রানি করা হয় না। তবে পরীক্ষায় ন্যূনতম যোগ্যতা না দেখাতে পারলে তাকে তো লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব নয়। দালাল না ধরে চালকদের যোগ্য হয়ে পরীক্ষা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!