• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
রওশনপন্থীরা বাদ

১০০ আসনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত জাপার!


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২, ২০১৮, ০৬:৪৯ পিএম
১০০ আসনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত জাপার!

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাজোটের অংশীদার হিসেবে বিরোধী দলের নেতা ও পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের অগোচরেই গোপনে দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

১০০ জনের গোপন এ তালিকায় দলের অনেক সিনিয়র নেতাসহ রওশনপন্থী অনেকেই জায়গা পাননি। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যেও কেউ কেউ বাদ পড়েছেন। তবে এমন অনেকেই প্রার্থী তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন, যারা কখনো আগে জাতীয় পার্টি করেননি, এমনকি এই তালিকায় বিতর্কিত ও মামলার আসামিরাও স্থান পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

জাপার একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এলে মহাজোটের অংশীদার হয়ে নির্বাচন করবেন এরশাদ। এ জন্য তিনি আগে ভাগেই নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১৪ দলীয় জোটনেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ১০০ আসন চাইবেন।

যদি সম্ভব না-ও হয়, সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৭০টি আসন দাবি করবেন তিনি। সেই হিসাব মাথায় রেখে তৃণমূলের মতামত ছাড়া রওশন এরশাদকে না জানিয়ে গোপনে প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। যেকোনো সময় সেই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছানো হবে বলেও এরশাদ-ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে।

এরশাদের গোপন তালিকায় যারা স্থান করে নিয়েছেন তারা হলেন, ঢাকা-১ আসনের অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদ ও ঢাকা-১৭ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, গাজীপুর-২ এস এম নেওয়াজউদ্দিন, নরসিংদী-২ আজম খান, নরসিংদী-৪ নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, মানিকগঞ্জ-২ সৈয়দ আব্দুল মান্নান, মানিকগঞ্জ-৩ জহিরুল আলম রুবেল।

ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, ময়মনসিংহ-১০ ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, কিশোরগঞ্জ-২ সৈয়দ সাদরুল উল্লাহ মাজু, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-১ সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-সেলিম ওসমান, মুন্সিগঞ্জ-১ অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ-২ মো: নোমান মিয়া, টাঙ্গাইল-৫ পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মনির, রাজবাড়ী-১ অ্যাডভোকেট খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, ফরিদপুর-৩ এস এম ইয়াহিয়া, জামালপুর-৩ এম এ সাত্তার, জামালপুর-৪ ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ, শেরপুর-১ মো: ইলিয়াস, নেত্রকোনা-৩ মো: জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া।

চট্টগ্রাম-৩ এম এ ছালাম, চট্টগ্রাম-৪ আল্লামা এম এ মান্নান (ইসলামী ফ্রন্ট), চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, চট্টগ্রাম-১২ এম এ মতিন (ইসলামী ফ্রন্ট), চট্টগ্রাম-১৬ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার-১ মৌলভী মো: ইলিয়াস, কক্সবাজার-২ আলহাজ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ, নোয়াখালী-১ আলহাজ আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক (ইসলামী মহাজোট)।

নোয়াখালী-২ ফজলে এলাহী সোহাগ, নোয়াখালী-৪ মোবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর-২ মোহাম্মদ নোমান, ফেনী-৩ রিন্টু আনোয়ার, কুমিল্লা-২ আমির হোসেন ভূইয়া, কুমিল্লা-৪ অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, কুমিল্লা-৮ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, কুমিল্লা-৯ এ টি এম আলমগীর, কুমিল্লা-১১ এইচ এন এম শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-১ এমদাদুল হক রুমন, চাঁদপুর-২ মো: এমরান হোসেন মিয়া, চাঁদপুর-৫ মাওলানা মো: আবু সুফিয়ান আল কাদেরী (ইসলামী মহাজোট), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ অ্যাডভোকেট ইসলাম উদ্দিন দুলাল (ইসলামী ফ্রন্ট), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।

রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৫ ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর-৬ নুরে আলম জাদু, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-৩ ডা. আক্কাস আলী, কুড়িগ্রাম-৪ অধ্যাপক মো: ইউনুছ আলী, লালমনিরহাট-১ মেজর (অব:) খালেদ আখতার, লালমনিরহাট-২ রোকন উদ্দিন বাবুল, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নীলফামারী-২ মো: সাজ্জাদ পারভেজ, নীলফামারী-৪ মো: শওকত চৌধুরী, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-২ আব্দুর রশিদ সরকার, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার।

রাজশাহী-৩ শাহবুদ্দিন বাচ্চু, রাজশাহী-৫ অধ্যাপক মো: আবুল হোসেন, নওগাঁ-৩ অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন, নাটোর-২ মজিবুর রহমান সেস্টু, নাটোর-৪ অধ্যাপক আলাউদ্দিন মৃধা, সিরাজগঞ্জ-২ আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, পাবনা-২ মকুল হোসেন সন্টু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ মো: ইসমাইল আজাদ, বগুড়া-২ শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, জয়পুরহাট-১ আ স ম মোক্তাদির তিতাস, জয়পুরহাট-২ কাজী আবুল কাশেম রিপন, ঠাকুরগাঁও-১ রেজাউর রাজি স্বপন চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও-৩ মো: হাফিজউদ্দিন, দিনাজপুর-৬ মো: দেলোয়ার হোসেন।

সিলেট-১ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিলেট-২ ইয়াহহিয়া চৌধুরী, সিলেট-৩ উসমান আলী চেয়ারম্যান, সিলেট-৪ এ টি ইউ তাজ রহমান, সিলেট-৫ মো: সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রমান মিজবাহ, সুনামগঞ্জ-৫ আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম, হবিগঞ্জ-১ আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু, হবিগঞ্জ-৩ আতিকুর রহমান আতিক।

বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতন, পটুয়াখালী-১ এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, পিরোজপুর-১ আলহাজ নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-৩ ডা: রুস্তম আলী ফরাজী।

খুলনা-১ সুনীল শুভ রায়, খুলনা-৩ শফিকুল ইসলাম মধু, সাতক্ষীরা-১ সৈয়দ দিদার বখত্, বাগেরহাট-৩ সেকান্দার আলী মনি (বিএনএ), কুষ্টিয়া-১ শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, কুষ্টিয়া-৪ সুমন আশরাফ, চুয়াডাঙ্গা-১ অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন, যশোর-৪ লে. কমান্ডার (অব:) সাব্বির আহমেদ, ঝিনাইদহ-২ নূর উদ্দিন আহম্মেদ ও মাগুরা-১ অ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা।

এরশাদের গোপন তালিকায় যারা বাদ পড়েছেন : দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা-৫ আসনে মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ঢাকা-সবুজবাগ আসনে অধ্যাপক দোলোয়ার হোসেন খান, টাঙ্গাইল সদর-৫ আসনের মো: আবুল কাসেম, ঢাকা-৮ আসনের সাইদুর রহমান টেপা, ঢাকা-মোহাম্মদপুর আসনে শফিকুল ইসলাম সেন্টু ছাড়াও এস এম ফয়সল চিশতী ও সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন।

উপদেষ্টাদের মধ্যে বি-বাড়িয়ার কাজী মামুন, ফেনীর নাজমা আখতার, সোমনাথ বাবু, ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে টাঙ্গাইলে জহিরুল ইসলাম জহির, নুরুল ইসলাম নুরু, পাবনার সরদার শাজাহান, গাজীপুরে আরিফ খান, পটিয়ার শামসুল আলম মাস্টার, চট্টগ্রামে মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম, নারায়ণগঞ্জে আলমগীর সিকদার লোটন, নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভিন ওসমান, সোনারগাঁও আসনে মহিলা পার্টির সেক্রেটারি ও এরশাদের পালিত কন্যা অনন্যা হোসেন মৌসুমী।

দলের যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, টাঙ্গাইলে আশরাফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডে দিদারুল কবির দিদার, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সেক্রেটারি বেলাল হোসেন, ছাত্রসমাজের সাবেক সভাপতি ইফতিখার হাসান, সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মিরু, কুমিল্লায় মহিলা পার্টির নাজমা আকতার, নেত্রকোনায় মরহুম ফকির আশরাফের স্ত্রী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আসমা আশরাফসহ অন্যান্য ত্যাগী নেতা। তালিকায় নাম নেই বগুড়ার বর্তমান সংসদ সদস্য আলতাব হোসেন ও নুরুল ইসলাম তালুকদারেরও। তালিকায় বাদ পড়া এসব ত্যাগী নেতার মধ্যে অনেকেই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দলের প্রার্থী তালিকা করা হয়েছে।

এরশাদের এই গোপন তালিকার শতাধিক আসন থেকে ৭-৮টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জোটের শরিকদলগুলোর শীর্ষনেতাদেরকে। তাদের মধ্যে ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ ৪টি আসনে, ইসলামী মহাজোট ও বিএনএসহ অন্যদের জন্য বাকি আসন রাখা হয়েছে।

জাপা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় দশম নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন কর্তৃত্বহীন। স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জাপা। দলের সব মনোনয়ন চূড়ান্তও করেন রওশন। এতে এরশাদের পছন্দের অনেক প্রার্থী বাদ পড়ে যান। এমপি হয়ে যান রওশন-ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু নেতা। এরশাদ নিজেই ছিলেন ঢাল-তলোয়ারবিহীন পার্টির চেয়ারম্যান। নির্বাচন শেষে বিরোধী দলের নেতাও হন রওশন। বিষয়টি তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। এ জন্য তিনি রওশনের ওপর ভেতরে ভেতরে ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন। এসব বিষয়ে স্বামী- স্ত্রীর দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। উপায় না দেখে মাঝে মাঝে স্ত্রীর সঙ্গে গলা মেলালেও তার ওপর নাখোশ ছিলেন এরশাদ।

জানা গেছে, একাদশ নির্বাচন এরশাদের জীবনের শেষ নির্বাচন। শেষ জীবনে রওশনকে সরিয়ে জাতীয় পার্টিতে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান সাবেক এই সেনা শাসক। নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ, প্রার্থী চূড়ান্তকরণসহ একাদশ নির্বাচনের সব কিছুই তিনি এককভাবে করতে চান। আর এ মিশনে নেপথ্যে কাজ করছেন দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। রওশনের অগোচরে এসব নেতার পরামর্শেই শতাধিক প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেন এরশাদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রভাবশালী নেতা জানান, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এরশাদকে সহজে ভুল বুঝিয়ে যা ইচ্ছা করা যায়। পছন্দ না হলে দল থেকে বাদ দেয়া, বিত্তশালী কাউকে পেলে দলের পদ-পদবিসহ নমিশনও দিয়ে দেয়া, এমনি ভুল বুঝিয়ে বিরোধী নেতার বিরুদ্ধেও ক্ষেপানো যায় এরশাদকে। কিন্তু বিরোধী দলের নেতাকে সেটা করা যায় না। তারই ধারাবাহিকতায় দলের মহাসচিব, সাবেক মহাসচিবসহ শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিজেদের পছন্দ-অপছন্দে এরশাদকে দিয়ে এই গোপন তালিকা তৈরি করেছেন, যাতে দলের ত্যাগী অনেকেই বাদ পড়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!