• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ জঙ্গির দাফনও ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে!


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৬, ০৬:১২ পিএম
১৪ জঙ্গির দাফনও ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে!

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বিশেষ অভিযানে নিহত হয় ১৯ জঙ্গি। গত প্রায় আড়াই মাস ধরে ‘গুলশানের হোলি আর্টিজান থেকে আজিমপুরে’ নিহত সেসব জঙ্গিদের অধিকাংশের লাশ এখনও পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। এখন পর্যন্ত ১৯ জঙ্গির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ-ই লাশ নেবার আগ্রহ দেখায়নি।

তাই গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে থাকা গুলশান হামলায় নিহত পাঁচ জঙ্গির লাশ জুরাইন কবরস্থানে ‌‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। 

ওই পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে আরও একটি লাশ দাফন করা হয়েছে, তিনি ছিলেন হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর প্রধান বাবুর্চি। এর আগে ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গি আবিরের লাশও ‘বেওয়ারিশ হিসেবে’ দাফন করা হয় শোলাকিয়ার একটি কবরস্থানে।

এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পড়ে আছে ১৪ জঙ্গির লাশ। এসব লাশের মধ্যে ১৩ জনের পরিচয় শনাক্ত হলেও পরিবারের পক্ষে এখনও কেউ লাশ নেয়ার দাবি জানায়নি। তাই সেসব লাশও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গে থাকা লাশগুলোর মধ্যে ৯টি কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে নিহত জঙ্গিদের। তাদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। অন্য পাঁচটি লাশের মধ্যে তিনটি নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় নিহত জঙ্গিদের। বাকি দুজন রূপনগর ও আজিমপুরে নিহত হন।    

পুলিশের অভিযানে নিহত এই ১৪ জঙ্গির লাশের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি নিহতদের লাশের প্রয়োজনীয় ভিসেরা ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রেখেছেন। পরীক্ষা শেষে লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজে রাখা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ সূত্র জানায়, ঢামেক মর্গে ২০টি লাশ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এরই মধ্যে ১৪ জঙ্গির লাশ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। তাই অন্য লাশ রাখতে সমস্যা হচ্ছে। 

এসব সমস্যার কথা জানিয়ে ডিএমপিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠিও দিয়েছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও জবাব পায়নি ঢামেক মর্গ বিভাগ।

এ বিষয়ে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ১৪ জঙ্গির দাফনের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কেউ যদি লাশের দাবি না করে, তাহলে নিয়মানুযায়ী আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।

প্রায় ২ মাস ধরে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পড়ে আছে কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে নিহত ৯ জঙ্গি। গত ২৬ জুলাই পুলিশের ওই বিশেষ অভিযানে নিহতদের মধ্যে ৮ জঙ্গির পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। 

তারা হলেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের আবদুল্লাহ, টাঙ্গাইলের মধুপুরের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার প্রকৌশলী তাজ-উল-হক রাশিক, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ওমরপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান, স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ নেতা মোনায়েম খানের নাতি আকিফুজ্জামান খান, যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী সাজাদ রউফ অর্ক, নোয়াখালীর শিবিরকর্মী জোবায়ের হোসেন এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলার রায়হান কবির।

পুলিশ বলছে, আট জঙ্গির পরিচয় যেভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, একইভাবে নবম জনের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তবে তার আঙুলের ছাপে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। তার ছবি দেখেও পুলিশের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।

গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ডিএমপির বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের অভিযানে নিহত ৩ জঙ্গি হলেন গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ হামলায় মূল পরিকল্পনকারী ও পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত আসামি তামিম আহমেদ চৌধুরী, যশোরের এমএম কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র রাব্বি। অন্যজন ঢাকার ধানমন্ডির তাওসীফ হোসেন। 

এদিকে গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের একটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ। তিনি তামিম চৌধুরীর প্রধান সহযোগী ছিলেন। সবশেষে গত ১০ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আজিমপুরে ২০৯/৫ নম্বর বাড়িতে পুলিশের অভিযানের সময় গলা কেটে আত্মহত্যা করেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা তানভীর কাদেরী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!