• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘১৫ নম্বর’ বিয়েতে ধরা খেলেন বর, নববধূ ‘বেহুশ’


ঝালকাঠি প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭, ০৫:১০ পিএম
‘১৫ নম্বর’ বিয়েতে ধরা খেলেন বর, নববধূ ‘বেহুশ’

ঝালকাঠি: তখন বেলা সাড়ে ১২টা। বরপক্ষকে বরণে প্রস্তুত কনেপক্ষ। বরযাত্রীও হাজির। তিন দিন আগেই লাখ টাকা দেনমোহরে হয়ে গেছে রেজিস্ট্রি-কাবিন। তবে একেবারেই বিধি-বাম। তবে কনেকে তুলে নেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ফাঁস হয়ে গেল আসল ঘটনা।

বরের এটা ১৫তম বিয়ে! এর আগে তিনি ১৪টি বিয়ে করেছেন। এ কথা শুনে মুহূর্তেই মূর্ছা গেলেন কনে। পুরো বিয়ে বাড়ি জুড়ে শুরু হলো হৈ হট্টোগোল। পণ্ড হয়ে গেল কয়েকশত লোকের আপ্যায়নের আয়োজন। ভবিষ্যত স্বামী-সন্তানের স্বপ্নে বিভোর নববধূকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে স্বজনপ্রিয়জনরা। অবস্থা বেগতিক দেখে বরের সাথে আসা অন্যরাও পালিয়ে যায়।

গেল বুধবার ( ২২ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বলাই বাড়ি এলাকায়। ঘটনাটি পুরো এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করে।

বরের নাম মনজুর আলম (২৮)। তিনি ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বেরপাশা গ্রামের সোবাহান হাওলাদারের ছেলে ও বরিশাল জজ আদালতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। আর কনে সাথী আকতার রাজাপুর উপজেলার বলাইবাড়ী এলাকার মৃত সোবাহান তালুকদারের মেয়ে ও রাজাপুর ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

এলাকাবাসী বিয়ে পাগলা বর মনজুর আলম ও ঘটক হানিফকে আটক করে। পরে জনপ্রতিনিধি ও ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় তাদের রাজাপুর থানায় সোপর্দ করেন।

কনের ভাই আল আমিন জানায়, ঘটক হানিফের মাধ্যমে গেল ২০ ফেব্রুয়ারি মঠবাড়ী ইউনিয়ন কাজী অফিসে এক লাখ টাকা দেন মোহরে কাবিন রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। তবে ঘটক হানিফ বর মনজুরের বহুবিবাহের বিষয়টি জানলেও তা আমাদের কাছে গোপন করে। এর মধ্য দিয়ে আমার বোনের জীবনটাই অনিশ্চতার মধ্যে পড়ে গেলো।

ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নূর হোসেন জানান, আমার কাছে বিভিন্ন সময় মনজুরের ৫-৬টি বিয়ের অভিযোগ এসেছে। এসব বিয়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিরোধের মিমাংসা করেছি। কিন্তু বিয়ের নেশায় আসক্ত মনজুরের কুকর্ম দিনদিন বেড়েই চলে। সে বিভিন্ন এলাকায় বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুক হিসাবে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে স্ত্রীর আর কোনো খবর নেয় না। এখন শুনছি সে এর আগে আরও ডজনখানেক বিয়ে করেছে।

মনজুরের একাধিক স্ত্রীর মধ্যে উপজেলার বাইপাস এলাকার ইউনুস খানের মেয়ে পারভিন বেগম (১৯) একজন। মনজুরকে আটকের খবর শুনে তিনি থানায় ছুটে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, দেড় বছর আগে মনজুরের সাথে এক লাখ টাকা দেনমোহরে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সে বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করলেও আমার পরিবার গরীব বলে টাকা দিতে পারিনি। সে জন্য মনজুর আমাকে প্রায়ই মারধর করত। সবশেষ ৮ দিন আগে টাকা দিতে না পাড়ায় তাকে মারধর করে চলে যায়। তারপর এই বিয়ে ও আটকের খবর পেয়ে তিনি থানায় আসেন। সে খুবই খারাপ লোক উল্লেখ করে মনজুরের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।

আটক বর মনজুর আলম জানায়, তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তবে সেই বউ তাকে ছেড়ে চলে যায়। গত তিন মাস যাবত একা জীবন যাপন করছেন। তাই ঘটক হানিফ ভাইয়ের প্রস্তাবে এই বিয়ে করেছে। পূর্বের বহু বিয়ে সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এক ডজন বিয়ে করিনি। তবে এখন পর্যন্ত ৪-৫টি করেছি।

এ বিষয়ে রাজাপুর থানা পরিদর্শক শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, কনে পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আটক মনজুরকে ঝালকাঠি আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর/এমএন

Wordbridge School
Link copied!