• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৭ সালেই ‘সম্ভব’ মাথা প্রতিস্থাপন


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬, ০৪:৩৫ পিএম
২০১৭ সালেই ‘সম্ভব’ মাথা প্রতিস্থাপন

২০১৭ সালের মধ্যেই মানব শরীরে মাথা প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে, পশু নিয়ে তিনটি গবেষণার পর এমনটাই জানিয়েছেন ইতালীয় এক বিজ্ঞানী। সার্জিও ক্যানাভারো নামের এই বিজ্ঞানী মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনে প্রথম নিউরোসার্জন হতে চান বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।

এই খবর প্রকাশের আগের সপ্তাহে সার্জিক্যাল নিউরোলজি ইন্টারন্যাশনাল নামের জার্নালে ক্যানাভারো’র সম্পাদনায় তিনটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। নতুন কোনো শরীরে একটি মাথা সংযুক্ত করতে সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে স্পাইনাল কর্ড-কে পুনরায় যুক্ত করা। এই বাঁধা পাড়ি দেওয়া সম্ভব বলে দেখানো হয়েছে ওই গবেষণাপত্রগুলোতে, জানিয়েছেন ওই বিজ্ঞানী।

অন্যদিকে, সমালোচকদের মতে, এই তিন গবেষণায় খুব একটা বেশি তথ্যউপাত্ত আর মানব শরীর নিয়ে পরীক্ষায় আগানোর মতো বিস্তারিত প্রমাণ নেই। কিন্তু এই পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত দক্ষিণ কোরীয় দলটি জানিয়েছে, তারা এই পদ্ধতিতে একটি রাসায়নিক সমাধানের প্রমাণ দিয়েছেন। এটি স্পাইনাল কর্ডে ইনজেক্ট করার মাধ্যমে ছিন্ন হওয়া নিউরনগুলো পুনরায় যুক্ত করা যেতে পারে বলে দাবি তাদের।

এই গবেষণার একটি অংশে একটি কুকুর নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল ওই কুকুর গলায় এক আঘাত পাওয়ার পর সম্পূর্ণ ‘প্যারালাইজড’ হয়ে যায় ও তার মেরুদন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

দ. কোরিয়ার কোনকাক ইউনিভার্সিটি-এর ডক্টর সি-ইয়ুন কিম আর তার দল ক্যানাভারো’র সঙ্গে কাজ করছে। কুকুরটির স্পাইনাল কর্ডের ৯০ শতাংশই ছিন্ন হয় বলে ধারণা করা হয়।

ওই গবেষণাপত্রের সূত্রমতে, তারা কুকুরের শরীরে পলিইথিলিন গ্লাইকল বা পিইজি নামের রাসায়নিক ইনজেক্ট করে। এর দুই দিন পর কুকুরটি তার সামনের থাবা নাড়াতে সক্ষম হয়।

কুকুরটি শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখয়ে একটি ভিডিও ছাড়া হয়। এতে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ পর, এটি তার ধড় আর সামনের পাগুলো দিয়ে পেছনের পাগুলো টানতে সক্ষম হয়। তৃতীয় সপ্তাহে এটি হাঁটতে সক্ষম হয়।

আরেক গবেষণায়, দক্ষিণ কোরীয় ওই গবেষণা দল ১৬টি ইদুঁরের স্পাইনাল কর্ড ছিন্ন করে। ইদুঁরগুলোর মধ্যে অর্ধেকের শরীরে পিইজি ইনজেক্ট করা হয়। আটটির মধ্যে পাঁচটির নড়াচড়ায় উন্নতি হয়, বাকি তিনটি এবং পিইজি না পাওয়া বাকি আটটি মারা যায়। শেষ ১১টির কোনোটিই 'প্যারালাইজড' অবস্থা থেকে ফিরে আসেনি।

আর চূড়ান্ত গবেষণায়, ১০টি বড় ইদুঁরের মধ্যে পাঁচটিকে গ্র্যাফেন ন্যানোরিবনস সমৃদ্ধ পিইজি সলিউশন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে, এক ধরনের স্কাফফোল্ড দেওয়ার মাধ্যমে নতুন করে নিউরন জন্মানো সম্ভব- এই তত্ত্বের উপর নির্ভর করা হয়। গবেষণা দলটি জানায়, পিইজি দেওয়া পাঁচটি ইদুঁরের চারটি গবেষণাগারে এক বন্যায় মারা যায়। কিন্তু পঞ্চম ইদুঁরটি তার হাঁটার সক্ষমতা ফিরে পায়।

এই খাতের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইঁদুরের উপর এই গবেষণায় যথেষ্ট পরিমাণ উপাত্ত দেওয়া হয়নি। বিশেষত, বন্যার কারণে পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস করানোর মতো নয় বলে মত তাদের। আর চিকিৎসার পর সুস্থ হওয়ার আগে কুকুরটি ঠিক কী ধরনের সমস্যায় ভুগছিল তা নিয়ে ওই গবেষণাদল পর্যাপ্ত বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেনি বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্যানাভারো বিশ্বাস করেন, পিইজি’র মাধ্যমে তিনি ২০১৭ সালের মধ্যে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে পারবেন। ভিয়েতনামের একটি হাসপাতাল এই সার্জারি করাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখন শুধু একজন ‘শক্ত’ দাতা দরকার বলেই জানান ওই বিজ্ঞানী।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন নিউ সায়েন্টিস্ট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি-এর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ আর্থার কাপলান জানান, সর্বশেষ গবেষণাপত্রগুলো দেখে বোঝা যায় এ ধরনের প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করা থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে আছি। তিনি বলেন, “এই কাজ তাদেরকে মানুষের স্পাইনাল কর্ড সারাতে আরও তিন থেকে চার বছর লাগাবে। আর মাথা প্রতিস্থাপনের মতো কিছু নিয়ে চেষ্টা করতে আরও সাত থেকে আট বছর লাগতে পারে।”

মানব শরীরের মাথা প্রতিস্থাপনে স্পাইনাল কর্ড পুনরায় যুক্ত করার সঙ্গে নতুন শরীরে ওই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা আরেকটি ‘চ্যালেঞ্জিং’ বিষয়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!