• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট ট্র্যাজেডি: ভালো নেই চার নিহতের পরিবার


এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর আগস্ট ২১, ২০১৭, ১২:২৩ পিএম
২১ আগস্ট ট্র্যাজেডি: ভালো নেই চার নিহতের পরিবার

মাদারীপুর: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের ৪ নিহতের পরিবারের সদস্যরা ভালো নেই। এসব পরিবারে শোকের ছায়া এখনো কাটেনি। একই ঘটনায় আহতরা পঙ্গুত্ব নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। এখনো তাদের সে দিনের নারকীয় স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘ ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও সে দিনের দুঃসহ স্মৃতি আজও কষ্ট দেয় স্বজনদের।

বর্বরোচিত এ গ্রেনেড হামলায় নিহত শ্রমিক নেতা নাসির উদ্দিন ছিল আওয়ামী লীগের অন্ধ ভক্ত। তাই আওয়ামী লীগের মিছিল, মিটিং বা সমাবেশ হলে তাকে কেউ বেঁধে রাখতে পারতো না। মিছিল-মিটিংয়ের আগে থাকতো, শ্লোগান দিত। শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে সেই প্রতিবাদী কণ্ঠ আর শোনা যাবে না। তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামপোল গ্রামে।

নাসিরের বড় ছেলে মাহাবুব হোসেন (২৫) জানান, বাবার উপার্জনেই চলতো সংসার। বাবার মৃত্যুর পর টাকার অভাবে আমাদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কোনো কোনোদিন আধপেটা আবার কোনোদিন খাবারই জোটেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন। এখন সেই টাকার লভ্যাংশ দিয়ে আমার মা, আমি আর আমার ভাই নাজমুলকে নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। মাহাবুব দুঃখ করে বলেন, রাজনীতির জন্য যে জীবন উৎসর্গ করল সেই রাজনীতিকরা আমাদের কোনো খবর রাখেন না কেউ। এখন এই পরিবারের দিন কীভাবে কাটে তার কোনো খবর রাখে না আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের নামে কোনো স্মরণ সভাও হয় না এলাকায়।

বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্রি গ্রামে যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সি। লিটনের ছোট বোন ইসমত আরা জানান, বাবা, মা আর আমরা দু’ভাই-বোন ছিলাম এ সংসারের সদস্য। বাবা-মা’র বয়স হয়ে গেছে। কোনো কাজ করার ক্ষমতা নেই। যেটুকু জমি আছে, তার উৎপাদিত ফসলেই আমাদের চালিয়ে নিতে হয়। এছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই আমাদের। ২০১৩ সালে যখন চেক গ্রহণ করেন আমার মা, তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আপনার সন্তান গেছে, দুঃখ করবেন না। আমরা আছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মা কয়েকবার ঢাকা গেছেন, কিন্তু তিনি দেখা করতে পারেননি। তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে আমাদের কথা তিনি জানবেন? ভাইয়ের কবর বাধাবার স্থানীয়ভাবে দায়িত্ব নিয়েও তা বাধায়নি।

গ্রেনেড হামালায় নিহত অপর যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহাম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু। তার বাড়ি কালকিনি উপজেলার ক্রোকিরচর। সে বরিশালের মুলাদি নানা বাড়িতে বড় হয়েছে। এ কারণেই তার লাশ মুলাদিতেই দাফন করা হয়। গ্রেনেড হামলায় অন্যদের মধ্যে নিহত সুফিয়া বেগমের বাড়ি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামে। ওই দিন মহিলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রথম সারিতেই ছিলেন সুফিয়া বেগম। চঞ্চলা ও উদ্যমী এই সুফিয়া সপরিবারে ঢাকায় থাকতেন। নিহত হবার পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঢাকার থাকার কারণে সুফিয়ার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালকিনি পৌরসভার বিভাগদি গ্রামের মোহাম্মদ আলী হাওলাদারের ছেলে হালান হাওলাদারের একটি পা গ্রেনেড হামলায় নষ্ট হয়ে গেছে। আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে তাকে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিলেন হালান।

কালকিনি পৌর এলাকার চরঝাউতলা গ্রামের সাইদুল ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশে গ্রেনেট হামলার শিকার হয়ে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে অন্ধত্বের সঙ্গে জীবনযাপন করছে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছিল সে।
চোখ হারিয়ে এখন সে প্রতিবন্ধী।

সাইদুলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চরঝাউতলা গ্রামের মো. অহেদ সরদারের ছেলে মো. সাইদুল সরদার (৩৪)। তার বয়স ৫ বছর থাকতে মা মুঞ্জু বেগমকে হারায়।

কৃষ্ণনগর গ্রামের কবির হোসেনের ডানহাত স্প্রিন্টারের আঘাতে বাঁকা হয়ে গেছে। বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬। উপার্জন করে শুধু কবির। অনেকেই অনেক টাকা পেলেও কবির পেয়েছিল এক লাখ বিশ হাজার টাকা।

কবির জানান, ঘটনার পর আমি তিন বছর ভীষণ অসুস্থ ছিলাম। বাড়ির জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে আমার ৪/৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু শরীরে এখনো স্প্রিন্টার রয়ে গেছে। যার যন্ত্রণায় এখনো ঘুম আসে না। আামার পরিবার এখন অন্যের জায়গায় বাস করে। সব হারিয়ে এখন আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব। কোনো রকম জীবন চলছে।

প্রত্যেকের স্মৃতিতে সেদিনের নারকীয় দৃশ্য আতঙ্ক হয়ে আছে। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে এরা দিন দিন পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে গিয়ে সুচিকিৎসার সামর্থ্য এদের নেই। সবারই অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে তাদের কেউ খোঁজ রাখেনি। এমনকি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কোন কর্মসূচিও গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ নেতারা।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্ষীয়ান নেতা বাবু কাজল কৃঞ্চ দে সাংবাদিকদের জানান, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ীমী লীগের সমাবেশে গ্রেনেট হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি এবং পরে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিহত ও আহতের পরিবারকে নগদ অর্থসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহায়তা করেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!