• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে নিয়ে তোড়জোড়


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৫, ২০১৭, ১২:০৩ পিএম
২৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে নিয়ে তোড়জোড়

প্রতিকি ছবি

ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বাইরে থাকা তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে নতুন করে তোড়জোড় শুরু হয়েছে প্রশাসনে। কারাগারে এবং পলাতক এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সবকটি মামলায় জামিন পেলেও বাইরে বেরুতে চাইছে না। আবার জেলের বাইরে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা পলাতক থেকেও তাদের সাম্রাজ্যে রাজত্ব করে চলেছে। এসব তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে খোঁজ-খবর নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৭তম সভায় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়নি তাদের আইনের আওতায় আনতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর যারা কারাগারে আছে, তারা কারাগারে বসে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ইন্ধন দিচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকার পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কে কোথায় অবস্থান করছে, এ বিষয়েও খোঁজখবর নিতে বলা হয় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে। ওই সভায় ঢাকার ভয়ঙ্কর ২৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা উপস্থাপন করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই ২৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিষয়ে এখন খোঁজখবর শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

গত ২ নভেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের বিষয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির সঙ্গে ২৪ সন্ত্রাসীর একটি তালিকাও সংযুক্ত করা হয়। যাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পলাতকদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারাবন্দিরা কারান্তরালে থেকে অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটনে সহায়তা বা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করছে কিনা এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে বলা হয়।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট রাজধানীর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের ওপর নিয়মিত নজর রাখে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়নি তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের নানা পদক্ষেপ চলমান।

সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় যে ২৪ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর তালিকা উপস্থাপন করেছে তার মধ্যে ১৩ জনকে বিদেশে পলাতক দেখানো হয়। পলাতকদের বেশিরভাগই অবস্থান করছে ভারতে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই এবং জার্মানিতেও পলাতক রয়েছে বলে গোয়েন্দা তালিকায় উল্লেখ করা হয়।

অন্যদিকে ২৪ জনের মধ্যে ৮ জনকে জেলহাজতে দেখানো হয়েছে। নিখোঁজ দেখানো হয়েছে যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেনকে। এ ছাড়া পুরস্কার ঘোষিত ২৩ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর তালিকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কামরুল হাসান হান্নান এবং মশিউর রহমান কচির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, এ তথ্যও তুলে ধরা হয় গোয়েন্দা তালিকায়।

গোয়েন্দা তালিকায় নাম এসেছে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, সোহেল রানা চৌধুরী ওরফে ফ্রিডম সোহেল, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, হারিস আহম্মেদ ওরফে হারেস, খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু, ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আব্দুল জব্বার মুন্না, আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস, আরমান, হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, শামীম আহম্মেদ ওরফে আগা শামীম, জাফর আহম্মেদ মানিক ওরফে মানিক, আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, লিয়াকত হোসেন, মশিউর রহমান কচি, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান, সানজিদুল ইসলাম ইমন, তোফায়েল আহমেদ ওরফে যোশেফ, জিসান ওরফে মন্টি, লিটন আকন্দ ওরফে লেদার লিটন এবং ওমর ফারুক কচি ওরফে আইজি গেটের কচি। এই ২৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে বিদেশে পলাতকদের বেশিরভাগই ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারী।

২৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন প্রকাশ কুমার বিশ্বাস। ১৯৯৮ সালে তাকেসহ ঢাকার ৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই প্রকাশ কুমার ভারতে পলাতক জীবনযাপন করছে। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে ফ্রান্সে যাতায়াত করে। আর তার ভাই বিকাশ কুমার বিশ্বাস জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। বিকাশ কুমার বিশ্বাস ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়। সে ভারত হয়ে ফ্রান্সে আত্মগোপন করেছে বলে জানা গেছে।

ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছে। সেখানে ২টি রেস্টুরেন্ট দিয়েছে। জিসানের পক্ষে জাফর ওরফে জেট মামা দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজি করে। এই টাকা চলে যায় জিসানের কাছে। জিসানের রেস্টুরেন্ট ব্যবসার অংশীদারও।

অন্যদিকে জিসানের পক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ ও পিডব্লিউডির ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। জিসানের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে।

ঢাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয় বহুদিন ধরে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছে। সেখানে একবার গ্রেপ্তারও হয়। সে ঢাকার আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সেভেন স্টার গ্রুপের আরেক সদস্য সুব্রত বাইন বর্তমানে কলকাতায় কারাবন্দি। পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম ত্রিমতি সুব্রত বাইনও গ্রেপ্তার এড়াতে ভারতে আত্মগোপন করে।

২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর কলকাতা পুলিশের হাতে প্রথম গ্রেপ্তার হয়। পরে কলকাতা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে নেপালে পালায়। সেখানে নিজের নাম বদলে আত্মগোপন করে। ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সুব্রত বাইন নেপালে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়। ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর ১২ সহযোগীসহ নেপালের কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ কেটে পালায়।

এরপর ২৭ নভেম্বর কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তাকে দেশে ফেরাতে ভারতের সঙ্গে একাধিকবার বাংলাদেশ চিঠি চালাচালি করে; কিন্তু ফেরত আনা যায়নি। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ। সে এক ডজন হত্যা মামলার আসামি। বর্তমানে কলকাতায় কারাবন্দি।

২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন। সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবারের অভিযোগ। এরপর থেকে লিয়াকতের খোঁজ নেই। আর তার ছোট ভাই কামরুল হাসান হান্নান ইন্টারপোলের হুলিয়া প্রত্যাহার করে দেশে ফিরে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে তার নাম বাদ দিতে সক্ষম হয়। বর্তমানে দেশে আছে বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছে পিচ্চি হেলাল, টিটন, যোশেফ, ফ্রিডম সোহেল, আরমান, খোরশেদ আলম ওরফে রাশু এবং আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস।

পুরস্কার ঘোষিত আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিন রসুল সাগর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। শামীম আহমেদ কানাডায় আছে কয়েক বছর ধরে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে এই সন্ত্রাসী একবার দেশে ফিরেছিল; কিন্তু ওপর মহলের কোনো সবুজ সংকেত না পেয়ে আবার কানাডায় ফিরে যায়। কিছুদিন ভারতে ছিল। জাফর আহমেদ ওরফে মানিক ও ইমাম হোসেন কলকাতায় অবস্থান করছে দীর্ঘদিন ধরে।

আব্দুল জব্বার মুন্না জার্মানিতে অবস্থান করছে। হারেস আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে পরিবারসহ ভারতে ছিল। সেখান থেকে যায় ইউরোপে। বর্তমানে এ সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রে আছে বলে গোয়েন্দা তালিকায় উল্লেখ করা হয়।

পুরস্কার ঘোষিত ২৩ সন্ত্রাসীর মধ্যে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে পিচ্চি হান্নান। আর আলাউদ্দিন হাতিরঝিলে নিহত হয় গণপিটুনিতে। অার কালা জাহাঙ্গীর নিখোঁজ।


সোনালীনিউজ/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!