• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৫ মার্চকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবি


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৭, ২০১৬, ১০:৫৪ পিএম
২৫ মার্চকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবি

ঢাকা: একাত্তরের ২৫ মার্চকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করতে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে বিল উত্থাপন করা হচ্ছে। সংসদ সদস্য শিরীন আখতার এই বিল উত্থাপন করবেন বলে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন বসবে।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের সদস্যসচিব কামাল পাশা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছি ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি বাহিনী যে নৃশংসতা চালিয়েছে তা গত শতাব্দীর ভয়াবহ নৃশংসতম ঘটনা। যে কারণে আমরা এই দিবসের দাবি জানিয়েছি। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এ বিষয়ে বিল উত্থাপন করা হবে।

১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে বাংলাদেশে লক্ষাধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই পৈশাচিক বর্বরতা যা গণহত্যার ইতিহাসে এক ভয়াবহতম ঘটনা। এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস, দলিলপত্র, ভিডিও বা ছবি দেখলে যে কেউ অপরাধীদের ধিক্কার জানাবে। মানুষ ও মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে বিশ্ববিবেক।

এর মধ্য দিয়ে আরো জোরালো হবে জেনোসাইডে যুক্ত পাকিস্তানি বাহিনীর বিচারের দাবি। এভাবেই আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের কাছ থেকে পঁচিশে মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে চায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন। এ লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে সংগঠনটি। তাদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী সমর্থন আদায়ের পর সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কাছে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জানানো হবে। পুরো বিষয়টির নেপথ্যে কাজ করছে সামাজিক এই সংগঠনটি।

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, এরই মধ্যে দাবি আদায়ে আন্তর্জাতিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাবিদ, লেখক, কবিসাহিত্যিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মিত্র দেশগুলো তাদের প্রধান লক্ষ্য। যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল ও দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। পাশাপাশি যেসব দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে, সে দেশগুলোর সঙ্গেও এ ব্যাপারে যোগাযোগ শুরু করেছে কমিটি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যেসব দেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, তারা সহজেই জেনোসাইডের ভয়াবহতা বুঝতে পারবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো বিষয়টি আসবে উপলব্ধিতে। এতে দুটি কাজ হবে, এর একটি হলো, ১৯৭১ সালে গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানের ১৯৫ সেনা সদস্যের বিচারের মূল দাবি আদায়।

২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশলাইনস, পিলখানার তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল ও জহরুল হক হলসহ সারা ঢাকা শহরে তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এদিনের গণহত্যা শুধু একরাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্বসভ্যতার জন্য এক কলংকজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা। পরবর্তী ৯ মাসে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা সৃষ্টি করেছিল সেই বর্বর ইতিহাস।

এ রকম বহু ঘটনার বর্ণনা প্রমাণসহ উল্লেখ আছে অনেক গবেষণা প্রকাশনা ও প্রত্যক্ষ সাক্ষীগণের জবানীতে। ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে গণহত্যার সংজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গৃহীত রেজ্যুলেশন ২৬০(৩)-এর অধীনে উল্লিখিত সংজ্ঞায় স্পষ্ট বলা আছে, ‘গণহত্যা’ শুধু হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ অপরাধ নয়। সেখানে অনুচ্ছেদ-২-এ যেসব কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, ক. পরিকল্পিতভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাদের সদস্যদের হত্যা বা গুম করা। খ. তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করা। গ. তাদের নিশ্চিহ্ন বা ধ্বংস করার জন্য এমন এমন জীবনবিনাশী অবস্থার সৃষ্টি করা, যাতে তারা পরিপূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়ে যায়। ঘ. তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য জন্ম প্রতিরোধক ব্যবস্থা বা পরিবেশ সৃষ্টি করা। ঙ. একটি জাতি বা গোষ্ঠীর শিশুদের স্থানান্তর বা অপসারণ করে তাদের জাতি পরিচয় ভুলিয়ে দেয়াও গণহত্যা বলে বিবেচিত হবে। এই বিবেচনায় ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাদের প্রায় সব কর্মকাণ্ডই বাঙালির ওপর গণহত্যা সংগঠনের শামিল।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!