• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৩২ ধারা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা


ফেসবুক থেকে ডেস্ক জানুয়ারি ৩১, ২০১৮, ০৩:০৬ পিএম
৩২ ধারা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা: মন্ত্রিসভায় ‘ডিজিটাল সুরক্ষা আইন’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়ার পর এর ৩২ নম্বর ধারা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে অনেকে পোস্ট করেছেন। খসড়া আইনে তথ্যপ্রযুক্তি বা আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব আছে। তবে সাংবাদিকসহ অনেকে বলছেন, নতুন আইনের ৩২ ধারা আরো ‘ভয়ঙ্কর’। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারার খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে কেউ সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোনো গোপন তথ্য ফোন, পেনড্রাইভ, ই-মেইল বা অন্য কোনো ডিভাইসে করে নিলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তি বলে বিবেচিত হবে। এর সাজা ১৪ বছর। শাস্তি হিসেবে ২০ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনটিতে।

এর আগে ৫৭ ধারায় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ও সাংবাদিকদের কারাগারে নেয়ার একাধিক ঘটনা তীব্র সমালোচনা তৈরি করেছিল। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের তরফ থেকে এটি নিবর্তনমূলক আখ্যা দিয়ে আইসিটি আইন বাতিলের দাবি করা হয়েছিল। 

ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের খসড়া অনুমোদনের পর সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, “‘যাহা ৫৭, তাহাই ৩২’ বা ‘নতুন বোতলে পুরাতন মদ’-শিরোনাম হিসেবে কোনটা ভালো?” একটি অনলাইন পোর্টালের বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম সামদানী লিখেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন হলে সাংবাদিকতা সরকারি প্রেস রিলিজ-নির্ভর হয়ে পড়বে। এই আইনে কৌশলে একদিকে যেমন সরকারি কর্মকর্তা তথা দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। সারা বিশ্বেই অনুসন্ধানী বা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্টিংয়ের তথ্য সাংবাদিকরা জনস্বার্থে গোপনেই নিয়ে থাকেন। দেখি এবার আমাদের সাংবাদিক নেতারা কী ভূমিকা নেন।’

সাংবাদিক মোহাম্মদ ওমর ফারুক লিখেছেন, ‘৫৭ ধারা দিয়ে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীকে নাকানি-চুবানি খাওয়ালো, পরে আন্দোলন হলো। এখন ৩২ ধারা! এ তো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্রেফ বারোটা বাজিয়ে দিল। এসব আইনের খসড়া কমিটিতে কারা থাকে? তারা কি মাথা মোটা, মূর্খ? না সংবাদকর্মীদের ওপর ক্ষোভ নিয়ে দুর্নীতি জায়েজ করার জন্য এমন ধারা তৈরি করছে?’

শাহেদ শফিক নামের একজন লিখেছেন, ‘গোপনে ঘুষের ছবি নিলে গুপ্তচরবৃত্তি। সাজা ১৪ বছর, জরিমানা ২০ লাখ। সাংবাদিকরা সাবধান!’

মো. শহিদুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘এই আইনের ব্যাখ্যা কী? সাংবাদিকদের হয়রানি ছাড়া ভালো কিছু হবে? উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানে তো সব ফেরেশতারা থাকে! তাদের পবিত্র কর্মকাণ্ড দেখানোই তো গণমাধ্যমের কাজ। এই আইন করে ফেরেশতাদের দুর্নীতি করতে উৎসাহ দিল সরকার।’

রিকু আমির নামের আরেক সাংবাদিক লিখেছেন, ‘৩২ ধারার জয় হোক, সাংবাদিকতা গোল্লায় যাক। অনুসন্ধানী, দুর্নীতিবিরোধী রিপোর্টিংয়ের হায়াত শেষ। উন্নয়ন এবং তেল্লা রিপোর্টিং তাজা হবে, যৌবন পাবে। ভুল বুইঝেন্না কেউ-সাংবাদিকতার উন্নয়ন ঘটাচ্ছে সরকার।’

রিপন চন্দ্র মল্লিক নামে একজন লিখেছেন, ‘৩২ ধারা চালু থাকলে এর পজেটিভ (ইতিবাচক) দিক কী কী হতে পারে?’ জবাবে অভিজিৎ কর্মকার নামে একজন মন্তব্য লিখেছেন-‘বিটিভি, বাসস আর বাংলাদেশ বেতার যা যা করছে...।’

রায়হান উল্লাহ নামের একজন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘একই দিন বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল ও নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের খবর গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সুখের। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা কতটুকু মিলে বা মিলবে?’

খসড়া আইনের ৩২ ধারা নিয়ে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরাও উদ্বিগ্ন। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান পলাশ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এত ধারা তৈরি না করে দেশের সব গণমাধ্যমকে সরকারি ঘোষণা করা হোক। তাহলেই তো হয়। নিশ্চয়ই বিটিভি সরকারের সমালোচনার ক্ষমতা রাখে না!’

একটি দৈনিকের জেলা প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার চেয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা আরো ভয়ঙ্কর।... সরকার সরাসরি বলে দিলেই পারে সরকার ও সরকারের কর্মকর্তাদের নিয়ে সাংবাদিকরা কোনো প্রতিবেদন করতে পারবে না।’

তবে খসড়া আইনের ৩২ ধারাকে সাংবাদিকদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন না হাসান আহমেদ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনি নিজের ওয়ালে লিখেছেন, “৩২ ধারা নিজেই সুরক্ষা দিয়ে দিয়েছে সাংবাদিকদের। সাংবাদিকরা বৈধভাবেই সব জায়গায় প্রবেশ করেন। খসড়ার ৩২ ধারায় বলা, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি ‘বেআইনিভাবে প্রবেশ করে’ কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যেকোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে। এটা সাংবাদিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, সাংবাদিকরা কিন্তু কোথাও অবৈধভাবে প্রবেশ করে না। খোদ সরকার তথ্য অধিদফতরের মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রবেশপত্র (অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড) দেয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তাগত গুরুত্ব বিবেচনায় অনেক দফতর ও স্থাপনায় প্রবেশের জন্য ওই প্রবেশপত্রের পাশাপাশি আলাদা নিরাপত্তা ছাড়পত্রও প্রয়োজন হয়।”

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!