• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩৮ বছর পর ফেসবুকে খুনী শনাক্ত!


বিচিত্র সংবাদ ডেস্ক আগস্ট ২৬, ২০১৮, ০৮:৫৯ পিএম
৩৮ বছর পর ফেসবুকে খুনী শনাক্ত!

ঢাকা: নির্যাতনের পর হত্যা করা প্রেমিক জুটির মরদেহগুলো পাওয়া গিয়েছিল ক্যারিবিয়ার পানিতে। তখন অনেক চেষ্টা পরেও জানা যায়নি সেই হত্যার রহস্য। এভাবে কেটে গেছে ৩৮ বছর। অজানাই রয়ে গেছে সেই হত্যার রহস্য। কিন্তু ৩৮ বছর পর শনাক্ত করা হলো সেই খুনীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মাধ্যম থেকে। সেই মাধ্যম হলো হালের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।

২০১৫ সালের ২ অক্টোবর। পেনি ফারমার হাঁটতে বেরিয়েছিলেন অক্সফোর্ডশায়ারের শহরতলীর দিকে। বাড়ি ফিরেই ল্যাপটপ খুলে ফেসবুকে বসলেন। তার ভাইয়ের খুনী হিসেবে একজনকে সন্দেহ করেন তিনি। কিন্তু তার দেখা কোথাও মেলে না। আচমকা ফেসবুকেই পেয়ে গেলেন সন্দেহভাজন খুনীকে। ধূসর দাড়ি তার মুখে, মাথায় বেসবল ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস। পরনে ডেনিস শার্ট। দেখতে অনেকটা সিরিয়াল কিলারের মতো দেখতে।

গায়ের রক্ত হিম হয়ে এলো পেনির। এখানে তাকে এতদিন কেন খোঁজেননি, আক্ষেপ করতে লাগলেন। অথচ ধরেই নিয়েছিলাম তাকে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে ফেলেছি। খুনি হয়তো একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কিন্তু এখানেই পেয়ে গেলাম, বিস্ময় ধরে রাখতে পারেন না পেনি।

১৯৭৮ সালে জুলাইয়ে পেনির ভাই ক্রিস এবং তার বান্ধবী পেটা ফ্রাম্পটনের মরদেহ গুয়াতেমালার উপকূলে ভাসতে দেখা যায়। তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। গাড়ির ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ দেহে বেঁধে ডুবিয়ে দেয়া হয় দেহগুলো। তখন ক্রিস ছিলেন ২৫ বছর বয়সী চিকিৎসক। আর পেটা ২৪ বছরের আইনজীবী। ছোটকাল থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। পরে প্রেমে রূপ নেয়। তথ্যপ্রযুক্তির আগ দিয়ে তখন যোগাযোগব্যবস্থা এতটা সহজ ছিল না।

তখন থেকেই তাদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নানা তদন্ত চালায় পুলিশ। অনুসন্ধান চলে। খুনীকে শনাক্তের নানা কাহিনি চলে। পেটা বাড়িতে পাঠানো শেষ চিঠিতে লিখেছিলেন, বেলিজে এক আমেরিকান এবং তার দুই ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তাদের। আরো বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা ছিল তাদের। বেলিজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাস্টিন বি নামের একজনের সঙ্গে বোটে চড়ে ক্রিস এবং পেটা ঘুরতে যান। কিন্তু ফেরার পর তারা বোটে ছিলেন না। একা ফেরেন জাস্টিন। যে আমেরিকানের সঙ্গে পরিচয় ঘটার কথা তারা চিঠিতে জানান তার নাম সিলাস বোস্টন। তার খোঁজ মেলে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাকরামেন্তোতে। কিন্তু পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ক্রিস আর পেটা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই বের করতে পারেনি।

এরপর ভাই এবং তার বান্ধবীকে হারানোর বিষাদময় সময় কাটে ফারমার পরিবারের। তবে আমেরিকার পুলিশ খুব বেশি সহায়ক ছিল না। ভাই যখন খুন হন, তখন পেনির বয়স মাত্র ১৭। পরে সাংবাদিক হয়েছেন। বিয়ে করে তিন সন্তানের জননীও হয়েছেন। সময়ের সঙ্গে তাদের জীবন ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে। কিছুটা সুখ ফিরে আসতে থাকে।

সাংবাদিকতাসুলভ মানসিকতার জন্যেই হোক, কিংবা ভাইয়ের খুনীকে খুঁজে বের করা দৃঢ় প্রত্যয়, পেনি কিন্তু খুনীর কথা ভুলতে পারেননি। তাকে খুঁজে বের করার এক প্রবণতা তার মাঝে সব সময়ই ছিল। জানালেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনেই দুঃখ আছে। কিন্তু ক্রিস আর পেটার বিষয়টা বিশেষভাবে ট্র্যাজিডি। তারা একেবারেই সাধারণ মানুষ ছিলেন। জীবনের বেশিরভাগটাই তারা দেখেননি তখনও, বিষাদময় কণ্ঠে জানান বোন।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। পেনির বাবা পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ শুরু করেন। কিন্তু কোনো ফল আসেনি। তার বাবা মারা যান ২০১৩ সালে।

পেনি মাঝে মাঝে ফেসবুকে ঢুঁ মারতেন সেই খুনীকে খোঁজার আশায়। ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে ফেসবুকে খুনীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন পেনি। এ তথ্য নিয়ে পেনি তার মা এবং বড় ভাই নাইজেলকে নিয়ে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ বিভাগে যান। পুলিশ বোস্টনের সেই দুই ছেলের বক্তব্য শোনেন।

কী ঘটেছিল তা পরিষ্কার হয়ে যায়। বোস্টন ছিলেন ধর্ষক। তার ভাইকে বেঁধে পেটাকে নিয়ে বোটের কেবিনে চলে যান। এর পর দুজনকেই হত্যা করা হয়। ক্রিসের খুলি ফাটা ছিল। হাড়ও ভাঙা হয়েছিল। বোটের ডেকে ছিল প্রচুর রক্ত।

শেষ পর্যন্ত খুনী বোস্টনের সন্ধান মেলে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকার একটি নার্সিং হোমে থাকেন। সেখানে বাস গড়ার বছর দুয়েক আগে কিছু আয়ের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে একটি পেজ খুলেছিলেন। তিনি ভাবেননি, এই একাকী বুড়োকে কেই বা খুঁজতে পারে!

পরে এফবিআই বেলিজ এবং গুয়েতেমালা থেকে বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে খুঁজে বের করে। এদের মধ্যে একজন অ্যাম্বুলেন্সের সহায়ক হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি ক্রিস এবং পেটার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছিলেন। এখন নিউ ইয়র্কে থাকেন। যে চিকিৎসক মরদেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন তাকেও পাওয়া গেছে।  

রাসেলের সঙ্গে পরে দেখাও করেছেন পেনি। রাসেলকে দেখে অবাক হয়েছেন পেনি। এক মানসিক বিকারগ্রস্ত বাবার কাছে বড় হয়ে কীভাবে এত স্বাভাবিক থাকেন তিনি!

আরো ভয়ংকর সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে বোস্টন বি'কে নিয়ে। রাসেলের বক্তব্যে উঠে এসেছে, তার বাবা ৩৩ জনকে হত্যা করেছেন। যদি তা সত্যি হয়, তবে আমেরিকান ইতিহাসে এই বোস্টন সবচেয়ে ভয়ংকর এবং বুদ্ধিমান সিরিয়াল কিলার। এমনকি তিনি নাকি রাসেল এবং তার আরেক ভাইকে মেলে ফেলারও হুমকি দিয়েছিলেন।

ফেসবুকে খুনীকে খুঁজে পাওয়ার ১৪ মাস পর ২০১৬ সালে বোস্টনকে গ্রেপ্তার করা হয়। খুনের পর কেটে গেছে ৩৮ বছর। অবশেষে ধরা পড়ে পেনির ভাই এবং তার বান্ধবীর খুনীকে।

২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল বয়স্কজনিত রোগ নিয়ে মারা যায় সিলাস বোস্টন। ফেসবুকের কল্যাণেই হারিয়ে যাওয়া খুনীকে শনাক্ত করে তাকে খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন পেনি। খুনীর মৃত্যুর মাধ্যমে এই কেসের অবসান ঘটে। সূত্র: বিবিসি

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!