• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৪ বলে ২, জীবনের সেরা ইনিংসই খেলে ফেললেন তামিম!


ক্রীড়া প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮, ০২:১৮ পিএম
৪ বলে ২, জীবনের সেরা ইনিংসই খেলে ফেললেন তামিম!

ঢাকা: জীবনের সেরা ফর্মে আছেন। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি একটি ফিফটি মেরেছেন। এর চেয়ে ভালো ব্যাটিং আর কী হতে পারে। তামিম ইকবাল তাই এশিয়া কাপকে ঘিরে বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন।

কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন এভাবে এক ফুৎকারে উড়ে যাবে কে-ই বা ভেবেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সুরঙ্গা লাকমলের বলে আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন। এরপর সোজা হাসপাতালে। তামিমের এশিয়া কাপ শেষ। শুধু তাই নয়, ঘরের মাঠে অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে সিরিজও খেলতে পারবেন না। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে আসা তামিম তো বটেই কেউ ভাবেননি তিনি আবার দেশমাতৃকার ডাকে আবার ব্যাট হাতে নেমে পড়বেন।

কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফিরে দলের অবস্থা দেখে তামিমের মন ভেঙে যায়। সে সময় কেমন লেগেছিল? তামিম বলেছেন, ‘মনটা প্রচণ্ড খারাপ। কতটা, তা বুঝিয়ে বলতে পারব না। আমার অনেক আশা ছিল এই টুর্নামেন্ট নিয়ে। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য অসাধারণ। সেটাও না হয় বাদ দিন। আমি এত ভালো অবস্থায় ছিলাম, এখানে এত বড় একটা ইভেন্ট খেলতে এলাম...কিন্তু কিছুই করা হলো না!’

বাংলাদেশ এশিয়া কাপ শুরু করতে চেয়েছিল দুর্দান্তভাবে। কিন্তু সেই সময় দলের অবস্থা এমন ছিল যে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ লড়াই করার মতো সংগ্রহ পাবে না। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে বিরষমুখে খেলা দেখছিলেন তামিম। ফিজিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই অবস্থায় তিনি যেন দৌড়ও না দেন। সেখানে তিনি আরেকবার ব্যাট হাতে নামার কথা কিভাবে ভাববেন?

তামিমকে কাছে ডেকে মাশরাফি বলেন, ‘যদি মোস্তাফিজ আউট হয়ে যায় আর মুশফিক উইকেটে থাকে, তাহলে তুই আবার যাস।’ মাশরাফির কথা শুনে প্রথমে তামিমের কৌতুক মনে হয়েছিল। কারণ মাশরাফির চরিত্রটাই তো ওরকম। প্রথমে সিরিয়াসভাবে নেননি তামিম। কিন্তু পরের কথায় তামিম বুঝে যান অধিনায়ক বিকল্প পরিকল্পনা করে ফেলেছেন।

সেই পরিকল্পনাটা ছিল এরকম, যদি শেষ ওভার পর্যন্ত মুশফিক অপরাজিত থেকে স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকেন, তামিম তখনই কেবল নামবেন। ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। ৬ বলের প্রতিটা মুশফিক মেরে খেলার চেষ্টা করবেন, দৌড়ে কোনো রান নেবেন না। তামিমের জন্য যে দৌড়ানোও হতে পারে বিপদের! কিন্তু সব তো পরিকল্পনামতো নাও হতে পারে। যদি তামিমকে স্ট্রাইকিং প্রান্তে যেতেই হয়?

মাশরাফি তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। পরিকল্পনায় তখন কিছুটা রক্ষণাত্মক চিন্তা, ‘ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। মুশফিক যদি স্ট্রাইকে থাকে, আর তুই ননস্ট্রাইকে থাকিস, তাহলেই তুই যাস।’

দশম ব্যাটসম্যান রুবেল হোসেন সাজঘরে ফিরে আসছেন দেখে তামিমই মনস্থির করে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্যাড পরতে শুরু করলাম। মুমিনুল প্যাড করতে সাহায্য করল। মাশরাফি ভাই এসে আমার গ্লাভস কেটে আঙুল বের করে দিতে সাহায্য করলেন (দুই আঙুলে মোটা ব্যান্ডেজ ছিল)। জীবনে প্রথমবার অন্য কেউ আমার অ্যাবডোমেন গার্ড পরিয়ে দিল। সবাই সাহায্য করছিল আমাকে।’

১১ নম্বর ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজ যখন আউট হয়ে ফিরে এলেন, তামিম ততক্ষণে জানেন কী করতে চলেছেন, ‘মাঠে নামার সময়টা যখন এল, তখনো সবাই যেন বুঝতে পারছিল না কী হতে চলেছে। কিন্তু আমি আর কিছু না ভেবে সোজা মাঠে নেমে পড়লাম। কেউ একজন বলল, আমি কি সব ভেবেচিন্তেই নামছি? বললাম, আমি নিশ্চিত। তখন মনে হচ্ছিল, আমার ভাগ্যে যদি এবারের এশিয়া কাপে আর একটি বল খেলাই থাকে, তবে তা-ই হোক। একটা বলই কেন নয়? তখন মনে হয়েছিল, আমার কারণে যদি ১০টা রানও যোগ হয়, এটাও অনেক। কেউ ভাবেনি আমি ওই একটা বলই খেলতে পারব, আর শেষে ৩২ রান যোগ হবে। মুশফিক যেভাবে ব্যাট করল, সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রাও ভাবেননি তামিম আবার ব্যাট হাতে নামবেন। বাংলাদেশের রান তখন ২২৯। তামিমকে ফের মাঠে নামতে দেখে গর্জে উঠল গ্যালারি। যেটা আন্দোলিত করেছে তামিমকেও। সেই মুহূর্তটার কথা বললেন তামিম, ‘লাকমল যখন দৌড়ে আসছিল, সেই সময়টা ভেতরে-ভেতরে খুব সাহস পাচ্ছিলাম। গ্যালারির চিৎকার শুনে আমিও বেশ রোমাঞ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম। জীবনে তো এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি। ওই বলে আমি আউট হয়ে যেতে পারতাম বা অন্য কোনো কিছু হতে পারত। কিন্তু ওই সময় আমার মাথায় এসব কিছুই কাজ করেনি। আমার কেবল মনে হচ্ছিল দল আর দেশের কথা।’ ৪ বলে অপরাজিত ২, এটাকেই তামিমের জীবনের সেরা ইনিংস বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।


সোনালীনিউজ/আরআইবি/আকন

Wordbridge School
Link copied!