• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পায়নী হামিদা বেওয়া


ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭, ১০:৫১ এএম
৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পায়নী হামিদা বেওয়া

দিনাজপুর : স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পায়নী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকার স্বজনপুকুর বুন্দীপাড়া গ্রামের মৃত মনছুর আলীর স্ত্রী হামিদা বেওয়া।

গত ১৩ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন, ৭২ বছর বয়সে জীবনের এই পর্যায়ে বছর খানেক হলো কেবল তার ভাগ্যে জুটেছে বয়স্ক ভাতা একটি কার্ড। তার ২ ছেলে আনিছুর রহমান ও বেলাল হোসেন দিনমজুরের কাজ করে নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় হামিদা বেওয়ার জীবন জিবিকা নির্বাহ করে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে। তার এখন একটাই চাওয়া বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি।

হামিদা বেওয়া’র  সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে, তিনি ১৯৭১ সালের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি ।

তিনি বলেন, সে দিন বিকেলে হঠাৎ পাকিস্থানী খাঁন সেনারা তাদের গ্রামে আক্রমণ করলে গ্রামের অন্য বাসিন্দারা পালিয়ে গেলেও তারা পালানোর আগেই খান সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। খাঁন সেনারা তাদের ধরে নিয়ে যায় স্বজনপুকুর গ্রামের পাশে, খাঁন সেনাদের ক্যাম্প জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে তার সামনে স্বামীকে বেদম মারধরে আহত করে। এ সময় তিনি খান সেনাদের পায়ে ধরে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু কেউ তার আকুতি শোনেনি। বরং খান সেনাদের বুটের লাথি আর বন্দুকের বাটের গুতায় চরমভাবে আহত হয় তার স্বামী মনসুর আলী।

এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শুরু হয় তার ওপর পাশবিক নির্যাতন। এভাবে কয়েক দিন কাটার পর তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

পরবর্তী সময়ে খাঁন সেনাদের পাশবিক নির্যাতনের ফলে তার স্বামী অন্ধ হয়ে যান। তার পর থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন হামিদা বেওয়াা। গত ১৩ বছর আগেই তার স্বামী মনছুর আলী মারা যান। কিন্তু তার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড ছাড়া জোটেনি কোন সরকারি স্বীকৃতি। জীবনের এ শেষ সময়ে এসেও অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে  জীবন চলছে এখনও হামিদা বেওয়ার।

হামিদা বেওয়া বলেন, লোক লজ্জার ভয়ে সে দিনের কথা কাউকে জানাননি তিনি। তার পরও গ্রামের লোকেরা একে অন্যের কাছে বলাবলি করলে ঘটনাটি সবাই জানতে পারে। কিন্তু কেউ কোনো দিন তার খবর নিতে আসেনি। তার ২ ছেলে আনিছুর রহমান ও বেলাল হোসেন দিনমজুরের কাজ করে নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় হামিদা বেওয়ার জীবন জিবিকা নির্বাহ করে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে। তার শেষ জিবনে এখন একটাই চাওয়া বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!