• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৪৮ বছর পর ফেসবুকে...


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ২৭, ২০১৬, ০৬:৫১ পিএম
৪৮ বছর পর ফেসবুকে...

ভ্রমণের নেশা পেয়ে বসেছিল হামজাকে। সেই নেশায় একদিন ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলেন। তারপর আর ফেরা হয়নি। দেখা হয়নি মা, ভাই ও বোনের মুখ। এভাবে কেটে গেছে ৪৮ বছর। রক্তের টানে হামজা বাড়ি ফিরতেই চেয়েছিলেন। ফিরতে পারেননি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত জটিলতার কারণে। হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তত দিনে মা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। প্রায় পাঁচ দশক পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ৭৬ বছর বয়সে হামজা সরকার ফিরে পেয়েছেন তাঁর পরিবার, তাঁর ভাই, তাঁর বোন। উড়নচন্ডী ভাইকে ফিরে পেয় পরিবারও দারুণ খুশি।

গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে পাকিস্তানের নাগরিক হামজা সরকার তাঁর ভাই ভারতের নাগরিক মাম্মিকুট্টি (৭৫) ও বোন ইইয়াথুর (৮৫) সঙ্গে আবুধাবিতে দেখা করেছেন। সময়টা ছিল ১৯৫১ সাল। হামজা সরকারের বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। একদিন মায়ের কথামতো মাঠে গরু চড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎ ভ্রমণের ইচ্ছে জাগে। গরু ফেলে, পরিবার ফেলে ট্রেনে চেপে বসেন তিনি। ঝিকঝিক করতে করতে সেই ট্রেন কেরালা থেকে পৌঁছায় দুই হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের করাচিতে। এসেই বুঝে গেলেন, যত সহজে পাকিস্তানে তিনি ঢুকলেন, এখান থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে ফেরাটা আর তত সহজ নয়। কী আর করা! পেটের তাগিদে টুকটাক কাজ শুরু করে দিলেন।

হামজা সরকার বলেন, ‘আমার একাকী বোধ হয়নি। এখানে থাকার মতো জায়গা পেতেও কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ ভারত থেকে এখানে আসা অনেক পরিবারের সঙ্গেই আমার খাতির হয়েছিল। পরে নিজেই টুকটাক কাজ শুরু করে পেট চালাতে লাগলাম।’ তবে তাঁর মাঝে মাঝেই মায়ের কাছে ফিরতে ইচ্ছে হতো। শেষমেষ ১৭ বছর পর ১৯৬৮ সালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতের রাজস্থানের সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান হায়দরাবাদে। কিন্তু পকেটে আর অর্থ না থাকায় মাকে চিঠি পাঠান তিনি। তিন সপ্তাহ পর মায়ের পাঠানো অর্থ পেয়ে কেরালায় বাড়ি পৌঁছান হামজা। সেখানে কয়েকদিন থেকে আবার পাড়ি জমান পাকিস্তানে। সেই শেষ দেখা পরিবার ও মায়ের সঙ্গে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। এরপর কেটে গেছে ৪৮ বছর। স্ত্রী ও আট সন্তান নিয়ে পাকিস্তানে থিতু হয়েছেন তিনি। ফেরার আশাও আর ছিল না। ২০১৫ সাল।

পাকিস্তানে থাকা হামজার মেয়ে আসিয়ার সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় মাম্মিকুট্টির আবুধাবিতে থাকা নাতি নাদির শাহর। ফেসবুকে চ্যাট করতে করতে তাঁরা দুজনে জানতে পারেন আসিয়ার বাবা ও নাদিরের দাদু বহুকাল আগের হারানো দুই ভাই। তারপর দুজনেই চো করেন, যে করেই হোক এই দুই ভাইকে মুখোমুখি দেখা করিয়ে দিতে হবে। ফোনে দুই পরিবারের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এতে দুই ভাই ও বোনের দেখা করার আগ্রহটা বেড়েছে শতগুণ।

দেখা হবে নাদিরের কাছে, আবুধাবিতে। ভাগনে হামিদ পাসপোর্ট ও ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। টিকিটও কেটে দিয়েছেন তিনি। তারপর চলতি বছর ভারত থেকে মাম্মিকুট্টি ও বোন ইইয়াথুর এবং পাকিস্তান থেকে হামজা সরকার ও তাঁর মেয়ে আসিয়া চলে গেছেন আবুধাবিতে। ফেসবুকের কল্যাণে ৪৮ বছর পর এখন পুরো পরিবার একসঙ্গে। আবুধাবিতে বসে হামজা বলেন, ‘জীবনের এই শেষ পর্যায়ে এসে আমার ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা হবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। তাঁদের আর হারাতে চাই না। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের এপার-ওপারে অনেক মানুষ বাস করে। তাঁদের হৃদয়ে কোনো সীমানা নেই। আমি আশা করি, ভারত-পাকিস্তান সরকার আমাদের মতো মানুষদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেবে।’ বোন ইইয়াথুর বলেন, হামজার ডান কানটা একটু অস্বাভাবিক ছিল। এখনো সে রকমই আছে। তাই আমাদের ভাইকে চিনতে কোনো ক হয়নি।

ইইয়াথুর বলেন, শেষবার দেখার পর থেকে মা হামজার ছবি তাঁর বালিশের নিচে রেখে কত রাত যে না ঘুমিয়ে কেঁদে কাটিয়েছিলেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। চলতি সপ্তাহেই ভাই বোনেরা আবার ফিরে যাবেন নিজ নিজ দেশে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!