• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের পদ্মা সেতু


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৮, ২০১৮, ০১:৫৩ পিএম
৫ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের পদ্মা সেতু

ঢাকা: দৃশ্যমান হচ্ছে এশিয়ার দীর্ঘতম পদ্মা সেতু । আজ রোববার ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান (স্টিলের অবকাঠামো) বসানো হয়েছে। স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে সেতুর ৩০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।

সেতুটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১.২ ভাগ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতি বছর ০.৮৪ ভাগ দারিদ্র নিরসনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫টি জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে সংশ্লিস্ট অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

এদিকে স্প্যান বসানোকে কেন্দ্র করে পদ্মার দুই তীরে এখন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। দেশি-বিদেশি কুশলীরা সেখানে কাজ করছেন নিরন্তর। সবমিলিয়ে দৃশমান হচ্ছে পদ্মা সেতু বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। দেশের জন্য পদ্মা সেতু গৌরবের প্রতীক হয়ে থাকবে। ইতোমধ্যে সেতুর ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। পদ্মা সেতুতে এখন স্প্যান বানানোর কাজ চলছে। পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর। তিনি বলেন, স্প্যান বসানো হলে সারা দেশের মানুষের কাছে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান হবে।

১৮ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদে সেতু মন্ত্রী বলেছেন, চলতি বছরেই (২০১৮ সালে) পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। চলতি মাসেই পদ্মা নদীতে স্থাপিত পিলারের ওপর বসানো হবে তিনটি স্প্যান। গার্ডারের মাধ্যমে মূল সেতুর ৪২পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। এই কাজটি শেষ হলেই সেতু দৃশ্যমান হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের মধ্যে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। এর প্রায় চার মাস পর আরেকটি স্প্যান বসানো হলো। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় স্টিলের স্প্যানটির ওজন প্রায় ২ হাজার ৮০০ টন। এটি শক্তিশালী ক্রেন দিয়ে মাওয়া প্রান্ত থেকে নিয়ে জাজিরা প্রান্তের পিলারে বসানো হয়। আগের স্প্যানটিও জাজিরা প্রান্তে বসানো হয়।

প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেছেন, কুয়াশার কারণে স্প্যান বসানোর কাজে কিছুটা ব্যাঘাত হয়েছে। ১২টি স্প্যান প্রকল্প এলাকায় আছে। তৃতীয় স্প্যানটিও বসানোর মতো অবস্থায় আছে। এখন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলচ্ছে।

সেতু কর্তৃপক্ষের মাসিক অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর অগ্রগতি ৫২ শতাংশ। আর নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়ন, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ।

পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নে ২০০৭ সালে একনেকে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এরপর দুই দফা ব্যয় সংশোধন করা হয়। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ২০১৬ সালে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর এখন জমি অধিগ্রহণের জন্য বাড়তি যুক্ত হচ্ছে আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে ব্যয় বেড়েছে ২০ হাজার ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে এখন প্রায় চার হাজার লোক কাজ করছেন। তবে কর্মীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ে-কমে। শুকনা মৌসুমে বেশি লোক কাজ করেন। আবার বর্ষায় কিছুটা কমে যায়। কর্মরত মানুষের মধ্যে এক হাজারের বেশি বিদেশি, যাঁদের বেশির ভাগই চীনের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপানসহ আরও অনেক দেশের নাগরিকও আছেন। তাঁদের বেশির ভাগ পরামর্শক।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুতে মোট খুঁটি (পিলার) হবে ৪২টি। এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। বর্তমানে ১৬টি খুঁটি নির্মাণের কাজ চলমান।

২০১৪ সালের ১৮ জুন মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। তাতে খরচ ধরা হয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এই কাজের খরচ ধরা হয় ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে চলমান থাকায় প্রকল্প এলাকার নেওয়া হয়েছে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রকল্প এলাকার কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে প্রবেশের ক্ষেত্রেও রয়েছে কড়াকড়ি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সাধারণ দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রবেশ নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ও সিনোহাইর্ডোর যৌথ নিরাপত্তাকর্মীরা।

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৯ জুন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোধন করেন। ২০০৯ সালের ২৯ জুন পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি হয়। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন ২০১০ সালে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়ে ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ হবে। কিন্তু নানা অনিয়ম, দূর্নীতি আর দাতা সংস্থার অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নানা বাঁধা বিপত্তি থাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!