• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাবেক সেনা কর্মকর্তা খুন

৫ দিনেও ধরা পড়েনি গৃহকর্মী আহাদ


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ১০, ২০১৬, ০৭:১৫ পিএম
৫ দিনেও ধরা পড়েনি গৃহকর্মী আহাদ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওয়াজি আহমেদ চৌধুরীকে নির্মমভাবে হত্যার পর ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার আসামি গৃহকর্মী আবদুল আহাদ ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। 

গত ৫ অক্টোবর মহাখালী ডিওএইচএসের (ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং এস্টেট) ৪ নম্বর সড়কের ১৪৮ নম্বরের নিজ বাসায় অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। 

পরিবারের অভিযোগ, গৃহকর্মী আবদুল আহাদ (৩০) বাসার বিভিন্ন মালামাল চুরি করার জন্য ওয়াজি আহমেদ চৌধুরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। ঘটনার পরদিন নিহত সেনা কর্মকর্তার ভাতিজা রেশাদ আহমেদ চৌধুরী কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় গৃহকর্মী আহাদসহ কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। গত দুই মাস আগে সিলেটের বিশ্বনাথ এলাকার আবদুল আহাদকে তার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়োগ দেন তারা।

নিহতের ভাতিজা রেশাদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, তার চাচা ওয়াজি উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (৭৬) মহাখালীর ডিওএইচএস-এর বাড়ির ৫ তলা ভবনের দোতলায় থাকতেন। তার এক ছেলেও থাকেন ওই বাড়িতে। গত ৫ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে তার চাচাকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধে হত্যার পর কক্ষের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায়। বিষয়টি তারা পরে জানতে পারেন। 

রেশাদ চৌধুরী বলেন, চাচার ছেলে ফুয়াদ চৌধুরী অসুস্থ থাকায় ওই সময়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে ঘুম থেকে উঠে তিনি তার কক্ষের বাইরে থেকে তালা দেয়া দেখতে পান। ভেতর থেকে লাথি মেরে দরজা ভাঙতে চেয়েও পারেননি তিনি। এ সময় দরজার ফাঁক দিয়ে তিনি দেখতে পান ডাইনিং রুমের টিভি দেয়ালে নেই। 

পরে বেলকনি দিয়ে নেমে দেখেন দোতলার ফ্ল্যাটের মেইন গেটেও তালা। সন্দেহ হওয়ায় তিনি বিষয়টি পিয়ন সন্তোশ মারমা ও সিকে মারমাসহ অন্যদেরও জানান। পরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন, তার বাবার কক্ষেরও বাইরে থেকে তালা দেয়া। 

বাবার কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে গিয়ে দেখেন, ওয়াজি আহমেদের হাত-পা বাঁধা নিথর দেহ পড়ে আছে। আর বাসার একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন ও ৪০ ইঞ্চি একটি এলইডি টিভি নেই। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ নিয়ে যান তারা। 

রেশাদ চৌধুরী জানান, ঘটনার পর থেকে বাড়ির কাজের ছেলে আবদুল আহাদ পলাতক রয়েছে। তাদের ধারণা, আহাদই তার সহযোগিদের নিয়ে তার চাচাকে হত্যার পর ল্যাপটপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে। 

এ বিষয়ে কাফরুল থানার ওসি সিকদার শামিম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এখনো আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। মাঠে কাজ করছে আমাদের কয়েকটি টিম। 

তবে আশা করছি, মামলার আসামি বাড়ির কাজের ছেলেসহ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। প্রযুক্তির সহায়তাও নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আসামি আহাদ বারবার স্থান বদল করছে। তকে ধরতে মাঠে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাকে ধরতে পারলেই মূল্য ঘটনা জানা যাবে বলে আশা করেন তিনি।

ওয়াজি আহমেদের ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এজাজ আহমেদ চৌধুরী জানান, তার বাবা ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের পদে থাকা অবস্থায় অবসরে যান। সিলেটের গোলাপগঞ্জে তার গ্রামের বাড়ি। ওয়াজি আহমেদের স্ত্রী আতিয়া চৌধুরী প্রায় ৬ বছর আগে মারা গেছেন। 

তাদের বড় ছেলে নাবিদ আহমেদ চৌধুরী (৪৪) প্রায় এক দশক ধরে আমেরিকায় থাকেন। ছোট ছেলে ফুয়াদ আহমেদ চৌধুরী (৪০) মহাখালী ডিওএইচএসের বাসায় বাবার সঙ্গে থাকতেন। ওয়াজি আহমেদের ছোট ভাই এজাজ আহমেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল হিসেবে অবসরে যান। 

তিনি বলেন, আহাদের দেশের বাড়িও সিলেট। এলাকার পরিচিত এক লোক তাকে ভাইয়ের বাসায় কাজে দিয়েছিল। ধারণা করছি, সেই আমার ভাইকে হত্যা করেছে। ওয়াজি আহমেদকে সিলেটে গ্রামের বাড়িতে দাফন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনিসহ অন্যান্য স্বজনরা জানান।            

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!