• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৫০ কেজির বস্তায় কয় কেজি চাল থাকে?


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুলাই ২৯, ২০১৭, ০৫:৫১ পিএম
৫০ কেজির বস্তায় কয় কেজি চাল থাকে?

ঢাকা: পুরোদস্তুর হিসাবি এর চেয়ে বড় কোনো শব্দ থাকলে তা ব্যাংকার সিরাজুল ইসলামের বেলায় বলা যায়। একমাস শেষ হওয়ার একদিন আগে দেখলেন চাল শেষ। প্রশ্ন খেলে মাথায় আজকেও চলার কথা। সন্দেহ দানা বাধেঁ, পরের মাসেও একই অবস্থা। তৃতীয় মাসে নিশ্চিত হয়ে ৫০ কেজি চালের বস্তা খুলে ওজন করে দেখতে পান দেড় কেজি কম।

এর সত্যতা মিললো খুচরা বাজারো গিয়ে। দোকানিরা জানালেন, ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত চাল কম থাকে। কারণ তাদেরও জানা নেই। চটের ব্যাগ বাজারে আসায় দেড় কেজি পর্যন্ত চাল কম থাকছে। আগে এক কেজি পর্যন্ত কম থাকতো।

দোকানীদের মতে, চালের খালি চটের ব্যগ বিক্রি হয় বিশ টাকায়। এই দামের সম পরিমাণ চাল রাখতে গিয়ে বেশি রেখে দেয় মিল মালিকরা বলে আড়ৎদাররা তাই জানিয়েছেন তাদের। 

এক বস্তা চাল কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে পারলে লাভ কমে হলেও বিনিয়োগের পুরো টাকাই উঠে আসে। কিন্তু খুচরা বিক্রয় করতে গিয়ে কেজি প্রতি দাম বাড়াতে হয় দোকানিদের। ৫০ কেজি এক বস্তা মোটা চালের দাম বর্তমানে ১৭৬০ টাকা হলে কেজি প্রতি দাম হয় ৪৪ টাকা। এক কেজি চাল কম থাকায়, খুচরা পর্যায়ে সমন্বয়ে দাম ঠিক হয় কেজি প্রতি ৪৫ টাকা। মুনাফা ও পরিবহন খরচ কেজি প্রতি ২/৩ টাকা যোগ করে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে হয় ৪৮ টাকা দরে।

এক বস্তা চাল কিনলে ক্রেতা এক থেকে দেড় কেজি চাল কম পান। এভাবেই ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের। এ বিষয়ে, আড়ৎদারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চালের বস্তা মিলেই সেলাই করা হয়। এখানে শুধু খুচরা পর্যায়ে স্থানান্তর করা হয়। আড়তে কোনো কারসাজি করা হয় না। আর চটের বস্তায় চাল পরিবহনের সময়ে কিছু চাল লোড-আনলোডের (নামানো-উঠানো) সময়ে পড়ে যায়। এজন্য বস্তায় প্রতি কিছু চাল কম হয়।

ব্যাংকার সিরাজুল ইসলামের মতে, আমি ক্রেতা হিসেবে কিন্তু ৫০ কেজি চালের দাম পরিশোধ করছি। কিন্তু চাল কম পাচ্ছি। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। দোকানদাররা বলেছেন, তাদের করার কিছুই নেই। তারাও চালের বস্তাই কিনে আনেন।

তবে, আশ্চর্যজনক হলেও সত্য দোকানদারদের মতে, কোনো কোনো বস্তায় দুই কেজি পর্যন্ত কম থাকে। আমরা যখন চাল কিনতে আড়তে যাই, তখন যে কোনো এক পাশ থেকে চাল নামিয়ে দেয়া হয়। সেখানে মেপে আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। যদি কোনো বস্তায় কম হয়, তার লোকসান দোকানদারকেই গুণতে হয়। 

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা চাল মিল মালিকদের সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, চালের বস্তায় ওজনে কম দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। প্রতিটি ছালার (চটের) বস্তার ওজনই ২৫০ গ্রাম। এই পরিমাণ চাল কম যেতে পারে। বস্তার দাম হিসেবে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি কম কেউ দেয় না। যদি কম পাওয়া যায়, তাহলে আড়ৎদাররা যদি কিছু করে থাকে।

ওজনে কম দেয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয় বাংলাদেশ অটো রাইস মিল এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলমের পক্ষ থেকেও। তিনি বলেন, যদি ওজনে কম দেয়া হয়,  তাহলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উচিত দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। দু’একজন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে সব ব্যবসায়ীদের দোষ দেয়া ঠিক হবে না। এতে ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, শুধু একটি নীতিমালা ও মিল ব্যবসায়ীদের অনুমোদন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে সরকার। এ বিষয়ে চালের, গুণগত মান যাচাই, ওজন ঠিক মতো দিচ্ছে কিনা বা চালের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছে এ বিষয়ে সরকারি কোনো মহলের তদারকি নেই। সাধারণ জনগণের কথা ভেবে চালের বাজার ও সরবরাহ চ্যানেলে বিশেষ নজরদারি করা দরকার।

নইলে ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়া অব্যাহত থাকবে। বিষয়টি অনেক ক্রেতা জানেনই না। যখন যানবেন তখন আরো বেশি ক্ষুব্ধ হবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!