• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫৭ ধারা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি


এম আরমান খান জয় জুলাই ১৮, ২০১৭, ০৫:৩৫ পিএম
৫৭ ধারা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

ঢাকা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বড় কষ্ট ও বেদনা নিয়ে আপনার উদ্দেশে এই নিরুপায় কলম তুলে নিয়েছি। শুরুতেই না বললে নয় বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের বিস্ময়। আর এই বিস্ময় বাংলাদেশের ম্যাজিকের রূপকার আপনি বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি মুক্ত সাংবাদিকতার হুমকি ৫৭ ধারা বাতিলসহ মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য সরকার কর্তৃক সুবিধা প্রদান করে এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন করে আরেকটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবেন বলে আশা রাখি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তৃতীয় বিশ্বের একজন অসহায় মফস্বল সাংবাদিকের ফরিয়াদ পৌঁছানোর উপায় হয়তো একমাত্র গণমাধ্যমই। আমার এই ফরিয়াদ আপনার কাছে আদৌ পৌঁছাবে কিনা, এই লেখাটি আপনি পড়বেন কিনা, আপনাকে কেউ বলবে কিনা, আপনার টেবিলের দৈনন্দিন পেপার কিপিংয়ে এর স্থান হবে কিনা আমি জানি না। তবু কবি কামাল চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত পক্তিমালা’ কবিতা ‘তুমি পড়বে না জানি তবু এই চিঠি পাঠিয়ে দিলাম’ স্মরণ করে এই লেখাটি লিখছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শুরুতেই বলতে চাই আওয়ামী লীগ সরকারকে সব সময় মিডিয়ার বন্ধু হিসেবেই বিবেচনা করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি নিজেও ‘মিডিয়া ফ্রেন্ডলি’৷ মাঝে-মধ্যেই আপনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন৷ অনেক বড় বড় দেশের সরকার প্রধানরাও সরাসরি ‘প্রেস কনফারেন্সে' আসতে ভয় পান! আবার অনেক সরকার প্রধান মিডিয়া এড়িয়ে চলেন৷ কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন৷ একজন সাংবাদিক নেতাকে তো তিনি মিডিয়া উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগও দিয়েছেন, যাতে সরাসরি সাংবাদিকদের কথা তিনি জানতে পারেন বা শুনতে পারেন৷ এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর সময়ে মুক্ত সাংবাদিকতার হুমকি ৫৭ ধারা চিন্তা করা তো সত্যিই কঠিন!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক। আর গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। এ সাহসী পেশায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক সাংবাদিক। অনেকে হয়েছেন নির্যাতিত, হয়েছেন হয়রানির শিকার। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৭টি দেশে এখন পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ৯০ জন সাংবাদিককে। তাহলে সাংবাদিকদের কলম কি কখনো স্বাধীনতা পাবে না? একজন সাংবাদিকের দোষ কি তাহলে সত্য তুলে ধরা? জাতির বিবেক হয়ে যদি দেশের মাটিতে স্বাধীনতা না থাকে তাহলে কি করে চলবে এ কলম? রাষ্ট্রযন্ত্র কেনই বা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নেয় না?

এদিকে কয়েকদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে ৫৭ ধারা আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এই আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সস্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এই কার্য হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধের জন্য অনধিক ১৪ বছর ও অন্যূন ৭ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। ২০০৬ সালে আইসিটি আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একজন প্রকৃত সাংবাদিক সব সময় দেশের সংবিধান ও আইন মেনেই চলেন। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো খবর তৈরি করেন না। এখানে একটা কথা না বলে পারছি না, সমাজে কিছু হলুদ সাংবাদিক রয়েছে। এদের কারণেই দেশের রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। আর এদের কারণেই আজকের এই ৫৭ ধারা।

আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, সাংবাদিকরা কোনো কালেই কারো প্রতিপক্ষ ছিলেন না। এখনও নেই এবং আগামীতেও থাকবে না। সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়েই তারা এই শঙ্কাকুল পেশায় কাজ করেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকেও মাথায় রাখতে হবে যে, সাংবাদিকরা দুরন্ত সাহস নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। এজন্যই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি রুখে দেওয়া যায়। জনগণের অর্থ লোপাট বন্ধ হয়। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকে। জনকল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। সরকারের উচিত হবে, দেশের স্বার্থে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করা।

এদিকে সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচণা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ আইনজীবীদের মতে, সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদের ২(ক)-এর সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক। এখানে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইসিটি আইনে তাতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্য হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।’ ‘(২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড দণ্ডিত হইবেন।’ অন্যদিকে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর ৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড- এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডিত হইবেন।’ আইনজ্ঞদের মতে, একই ধরনের অপরাধে দুই আইনে দন্ডের এমন পার্থক্য এক ধরনের বৈষম্য। একই সঙ্গে এটা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতার ধারা অনেকটাই পাল্টে গেছে৷ এখন এখানে যাঁরা কাজ করেন তাংদের অধিকাংশই কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এসেছেন৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তাঁদের দারুণ আগ্রহ৷ বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য খুঁজে বের করতে মনোযোগ বেশি তাঁদের৷ কিন্তু অদৃশ্য এক চাপের কারণে এসব সাংবাদিকরা দৈনন্দিন রিপোর্ট করেই দিন শেষ করছেন৷ তারপর আবার মাথার উপর রয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা, যেটি বাতিলের জন্য আন্দোলন হলেও কোনো কাজ হয়নি৷ ফেসবুকে একটি ‘পোস্ট' দেয়ার কারণে কিছু দিন আগে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে৷ বিএনপি-জামায়াত আমলের নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি৷ আজ আওয়ামী লীগের শাসনামলেও তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছে৷ পঙ্গু হলেও জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ৷ হাতে লাগিয়েছে হাতকড়া! এভাবে অনেক সাংবাদিককে কারাগারে যেতে হয়েছে৷ এখন আবার রাজনৈতিক কর্মীদের হাতেও চলে যাচ্ছে ‘অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড'৷ সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সাংবাদিকদের অনুমতি দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন ‘আবিষ্কার' করে যে, বহু রাজনৈতিক কর্মীর হাতে রয়েছে এই ‘অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড'৷ বিভিন্ন অখ্যাত দৈনিক বা অনলাইনের নামে তাদের এই কার্ড দেয়া হয়৷‘অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড থাকলে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের অনুমতি দিতে অনেকটাই বাধ্য নির্বাচন কমিশন৷ ফলে জেনে বুঝেও নির্বাচন কমিশনকে ওই রাজনৈতিক কর্মীদের সাংবাদিকের কার্ড দিতে হয়েছে৷

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নিয়ে কাজ করে ‘আর্টিকেল নাইনটিন' নামের একটি সংস্থা৷ গত ১লা মে প্রকাশ করা তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবহারকারী ও সাংবাদিকদের ওপর মোট ২১৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ এর মধ্যে রয়েছেন ২০৫ জন সাংবাদিক ও আটজন ব্লগার৷ প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ সেগুলো হলো – চারজন সাংবাদিককে হত্যা, ৪০ জনের ওপর গুরুতর শারীরিক আক্রমণ এবং ৬২ জনের ওপর ছোটোখাটো হামলা৷সব কিছু মিলিয়ে খুব একটা ভালো সময় পার করছেন না বাংলাদেশের সংবাদ কর্মীরা৷ কয়েকদিন আগে সংসদে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মিডিয়া মনিটরিংয়ের জন্য আমাদের একটা টিম আছে৷ সংবাদপত্র স্বাধীন হলে মনিটরিং টিমের দরকার কেন? মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণারোপ করে কোনো সরকারই লাভবান হতে পারেনি৷ এক সময় এর বিস্ফোরণ ঘটেই! তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সরকারেরই৷’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের বাকস্বাধীনতা ৫৭ ধারায় আটকে গেছে যেখান থেকে বের হওয়ার সাহস বা শক্তি আমাদের নেই, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই আমরা বাকপ্রতিবন্ধী জাতিতে পরিণত হবো৷

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিবাবক, আপনি আমাদের সকলের ভালো চান, দেশের মানুষের ভালো চান তাই বড় আশা করি এই বেদনাহত সাংবাদিক এবং ছোট ভাইটির আবেদনে সাড়া দিয়ে আপনি মুক্ত সাংবাদিকতার হুমকি ৫৭ ধারা বাতিলসহ মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য সরকার কর্তৃক সুবিধা প্রদান করে এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন করে আরেকটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবেন। পরিশেষে আপনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে আপনার সুচিন্তিত উত্তরের অপেক্ষায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!