• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘৭ বছরে ১০ কোটি ৬৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৯, ২০১৬, ০৬:৩২ পিএম
‘৭ বছরে ১০ কোটি ৬৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে’

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের প্রধানতম শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও দেশে গত সাত বছরে প্রায় ১০ কোটি ৬৫ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই সফলতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে স্বল্প সময়ে এত অধিক কর্মসংস্থান অতীতে আর কখনো হয়নি বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার (২৯ জুন) সকালে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনের কার্যসূচি শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার পূর্বের মেয়াদে জনগণের অভূতপূর্ব রায় নিয়ে এ সরকার গঠন করে। এ গণরায়ের ভিত্তি ছিলো রূপকল্প-২০২১ সালে দিন বদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচির প্রতি জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন।

তিনি বলেন, যখন আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, সারা বিশ্বে তখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছিলো। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায়ও মন্দা চলছিলো। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৫ সালের নমিনাল জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬তম এবং ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে ৩৪তম স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

এ সময় স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের সাহসী নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের ফলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে। ২০১৫ সালের (১২ ডিসেম্বর) পদ্মা নদীর উপর ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণের মূল কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সেতু গাড়ি ও ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (২২ জুন) জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৩৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। 

বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাকের উৎসে কর কমানোর জন্য পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে তাদের অনুরোধ বিবেচনা করে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করছি। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সমাপনী বক্তব্য দিতে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব করেছেন। তার এই প্রস্তাবকে আমি অনুশাসন মনে করি, কারণ আমি তার হয়েই কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, তার সব প্রস্তাবই গ্রহণ হয়ে গেছে। 

(২ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক রফতানিতে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। অবশেষে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ করা হলো। 

রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অনেকের উদ্বেগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে অনেক হৈ চৈ। কী করণে এটা নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। পরিবেশ নষ্টের কথা যারা বলছেন তাদের জানাতে চাই, অক্সফোর্ড থেকে বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের শহরের পাশেই এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এখানে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা মোটেও নেই। 

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেখানে হচ্ছে সেখান থেকে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। কয়লা দিয়ে কিন্তু পানি ফিল্টার করা হয়। সেখানে কয়লায় কী করে প্রকৃতি নষ্ট হবে বা সুন্দরবন নষ্ট হবে এটা কীভাবে আসে বোধগম্য নয়। কোন উদ্দেশ্যে এই পরিবেশ নষ্টের কথা বলা হয় সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা যদি সত্যি পরিবেশ বা সুন্দরবন নষ্টের এতটুকু আশংকা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এটা আমরা করতাম না। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য সিমেন্ট কারখানায় যাবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুরে পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে রওশন এরশাদের উদ্বেগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে আমি এতটুকু নিশ্চিত করতে চাই পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন অনেক আধুনিক হয়েছে। এখন আর চেরনবিলের মত ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। এখন আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ নির্মাণ হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রর বর্জ্য তারাই নিয়ে যাবে। কাজেই এখানে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বরং এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যুগে পর্দাপন করছি। একই সাথে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যারও সমাধান হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!