• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭১-এ সব হারানো সেই শিশুটি এখন বৃদ্ধাশ্রমে


তবিবর রহমান, যশোর মে ১৫, ২০১৭, ১১:৩৫ এএম
৭১-এ সব হারানো সেই শিশুটি এখন বৃদ্ধাশ্রমে

যশোর: স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সব হারানো সেই ১২ মাস বয়সী শিশুর আশ্রয় মিলেছে যশোরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে। কখনও স্বরসতী, কখনও সুফিয়া নামে পরিচিত এ নারী ৪৬ বছর ধরে চোখের পানি ফেলে বাবা মা কিংবা আপনজনের ঠিকানা না পেয়ে ঠাঁই নিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ রোববার (১৪ মে) বিকেলে যশোরের রোটারি কেনায়েত আলী ও আনোয়ারা বেগম ওল্ড হোমে তাকে ‘পুর্নবাসন’ করেন।

১৯৭১-সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর যশোরের বারোবাজারের রেললাইনের পাশে হাগড়াবনের মধ্যে কাঁদছিল ১২ মাস বয়সী (আজকের স্বরসতী, কখনও সুফিয়া নামে পরিচিত এ নারী) এক শিশু। এলাকার বাদেডিহি গ্রামের চায়ের দোকানদার বানছারাম পালের হৃদয় কেঁদেছিল শিশুটির কান্নায়। তিনি উদ্ধার করে বাড়ি এনে নিজের ধর্মের হিসেবে নাম রেখেছিলেন স্বরসতী।

দেশ স্বাধীন হলে বানছারাম পাল তার বোন যশোদা রানির কোলে তুলে দেন স্বরসতীকে। তিনি ৫ বছর লালন পালন করেন। স্বরসতী মা বলে ডাকতেন যশোদাকে। কিন্তু অভাবের সংসার হওয়ায় বানছারাম-যশোদারা শেষ পর্যন্ত স্বরসতীকে নিজেদের ঘরে রাখেননি। তারা প্রতিবেশী ইদু জোয়াদ্দারের স্ত্রী আছিয়াকে স্বরসতীকে দিয়ে দেন। এরপর স্বরসতী থেকে হয়ে যান সুফিয়া।

এ পরিবারেও ৫ বছর মতো লালন-পালন হন সুফিয়া। এরপর বারোবাজারের রফিউদ্দিন মুন্সির বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে থাকেন। ২০ বছর বয়সে তিনি নিজেকে জানতে শিখলে বাবা মায়ের সন্ধান ও আপনজনদের খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কে তার বাবা মা, কি তার বংশ পরিচয় কিছুই জানতে পারেন না।

এক পর্যায়ে সুফিয়া বারোবাজারের ডা. তাহেরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর একই এলাকার মিঠাপুকুর গ্রামের মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করেন। এখান থেকেই তার আপনজনদের খোঁজ করতে করতে হাফিয়ে উঠেন। কিন্তু খোঁজের শেষ আজও হয়নি।
এখন তার শরীরে বয়সের ভার চলে এসেছে। স্থায়ী ঠিকানার বিকল্প নেই। এ প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই এগিয়ে আসে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির গত ৭ মে যশোর এলে তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরই অংশ হিসেবে এ নারীকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোর শাখার সভাপতি হারুণ-অর-রশিদ জানান, ১৯৭১ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাক আর্মি অবস্থান করে নিরীহ মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এছাড়া বারোবাজারে ছিল রাজাকার ক্যাম্প। সেখানেও নারী-পুরুষ ধরে অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হাজার হাজার মানুষ সহায় সম্বল ফেলে ভারতে আশ্রয় নেয়। সেসময় শরণার্থীদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোঁড়ে হানাদার বাহিনী। স্বরসতী বা সুফিয়ার বাবা মা সেই নির্যাতনের শিকার হতে পারে। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর হলেও সর্বহারা এ নারীর জন্য কিছু করতে পেরে ভাল লাগছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!