• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘অকারণে’ ১৩ বছর জেল


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৪, ২০১৬, ০৪:১১ পিএম
‘অকারণে’ ১৩ বছর জেল

হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ার পরও ১৩ বছর কারাগারে আটকে থাকা সাতক্ষীরার জবেদ আলী বিশ্বাসকে (৫৯) কেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রুল দেন।

আদালতে রিট আবেদনকারী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

পরে আদালত থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম বলেন, একটি মামলায় ২০০১ সালে নিম্ন আদালত জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। জবেদ আলীর করা জেল আপিলে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট তাকে খালাস দেন। তবে সাতক্ষীরা তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ খালাসের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের না পাঠানোয় তের বছরেও তার মুক্তি মেলেনি। চলতি বছরের ২ মার্চ সে মুক্তি পায়। এটি সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৫, ৩৬ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন এসব যুক্তিতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটটি করা হলে আদালত রুল দেন।

স্বরাষ্ট্র সচিব, অর্থ সচিব, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত দায়রা জজ (৩ নম্বর আদালত) কারা মহাপরিদর্শক, জেল সুপার (সাতক্ষীরা) সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন গত ১৯ মে এ রিট আবেদনটি দায়ের করে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মৃত আমজেল বিশ্বাসের ছেলে জবেদ আলী বিশ্বাস। স্ত্রী ফরিদা খাতুন মারা যাওয়ার পর তার দুই মেয়ে লিলি (৮) ও রেক্সোনা (৫) জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে মামা আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকতেন। ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জবেদ আলী শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওই দিন লিলি মারা যায়। এ ঘটনায় শ্যালক আবুল কাসেম বিষ খাইয়ে লিলিকে হত্যার অভিযোগ এনে জবেদ আলীর বিরুদ্ধে তালা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই মামলায় জবেদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালের ১ মার্চ জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জবেদ আলী হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। ওই বছরের ১১ মে জবেদ আলীকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

২০০৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট জবেদ আলীকে নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেন। খালাসের রায়ের কপি হাইকোর্ট পাঠান সাতক্ষীরার আদালতে। বিচারক সেটি কারাগারে না পাঠিয়ে রেকর্ডরুমে সংরক্ষণের আদেশ দেন। তাতে করে কারাগারে আদেশের কপি না পৌছানোয় দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি ‘অকারণে’ কারাভোগ করছেন।

বিষয়টি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ পায়। প্রকাশিত প্রতিবেদনের কাটিং আদালতের রিট আবেদনের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে এই সংগঠনটি রিট করেন। আবেদনটির শুনানি করে আদালত এ আদেশ দেন।

রিটকারীর আইনজীবী জানান, হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ার খবর পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে ৬ বার চিঠি পাঠান। কিন্তু একটি চিঠিরও জবাব মেলেনি, মেলেনি তার মুক্তিও।

Wordbridge School
Link copied!