• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে শুকতারা


সোনালীনিউজ ডেস্ক এপ্রিল ৬, ২০২০, ০৯:৪৩ এএম
আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে শুকতারা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে লকডাউন। কল-কারখানা বন্ধ। ফলে কমেছে বায়ু দূষণ। এমন দূষণহীন পৃথিবী থেকে এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শুকতারাসহ (ভিনাস বা শুক্র গ্রহ) ঝাঁকে ঝাঁকে তারা।

শুকতারা ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে পূর্বাকাশে দেখা যায়। সময় ভেদে একই জিনিস সন্ধ্যাতারা রূপে পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার পর দেখা যায়। মূলত শুক্র গ্রহের আবর্তনের ফলে এটি এক পাশে আবার সূর্যের আরেক পাশে চলে যায় (উপর-নিচে)। ফলে একে কখনো শুকতারা বা কখন সন্ধ্যাতারা রূপে দেখা যায়।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে থমকে যাওয়া বৈশ্বিক পরিবেশে টেলিস্কোপে চোখ রেখে অবাক হলেন কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (আইসিএসপি)’ বাঙালি গবেষকরা। তারা ঝাঁকে ঝাঁকে তারার খোঁজ পেলেন। একে বহু দূরে সেই তারাদের বাস, তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত দূষণের বেড়াজাল, ফলে কখনওই তারাগুলোর খোঁজ জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

করোনার আবহ পৃথিবীর দূষণের চাদর অনেকাংশে সরিয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। ফলে মাত্র ২৪ ইঞ্চি লেন্সের টেলিস্কোপেই ধরা দিয়েছে সেই তারাদের দল।

আইসিএসপির কর্মকর্তা, জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, কলকারখানা ও যানবাহন থেকে ছড়িয়ে পড়া ধূলিকণা যে শুধু মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা ঘটায় এমনটা নয়, বায়ুমণ্ডলের ১২ কিলোমিটার জুড়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে রাজত্ব করে তারা। আকাশ থেকে আগত ফোটন কণা বা আলোর কণা টেলিস্কোপ বা আপনার চোখ পর্যন্ত আসার আগেই ওই ধূলিকণাদের দেখতে পায় সে। সেই আলো ওই ধূলিকণায় লেগে ঠিকরে অন্যদিকে চলে যায়। আপনার কাছে আর পৌঁছতে পারে না। যার ফলে অনেক তারা দেখা যেত না। আবার বিচ্ছুরণের ফলে অনেক তারার উজ্জ্বলতা কম মনে হত। কাজেই এখন দূষণের মাত্রা কমে যাওয়ায় অনেক তারার খোঁজ পাওয়া গেছে।

‘টেলিস্কোপেরও নিজস্ব একটা পরিমাপ থাকে। একটা নির্দিষ্ট মানের ফোটনকণা টেলিস্কোপে এসে পৌঁছলে সেই তারা দেখা যায়। কিন্তু তার চেয়ে কম হয়ে গেলে সেই তারার হদিশ পাওয়া যাবে না।’

এতদিন দূষণের কারণে তারার আলোককণা টেলিস্কোপে ধরা দিচ্ছিল না। ফলে, তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা ছিল না ওই বাঙালি গবেষকের। তিনি জানিয়েছেন, তার তিন ছাত্র, অসীম সরকার, শ্যাম সরকার ও পবিত্র শীল টেলিস্কোপে দেখেছেন, এতদিন যদি ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কোনও তারার সন্ধান পাওয়া যেত, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের আকাশে এখন ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা তারার খোঁজ মিলছে। অর্থাৎ দ্বিগুণ দূরের তারারাও এখন দৃশ্যমান।

আকাশ আগের চেয়ে দশ শতাংশ আরও বেশি অন্ধকার হয়েছে। একইসঙ্গে ৪০ শতাংশ উজ্জ্বল হয়েছে সব তারা। যার ফলে নতুন অতিথিদের কিছু ক্ষেত্রে খালি চোখেও দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইসিএসপির বাঙালি বিজ্ঞানীর দল।

উল্লেখ্য, তারা প্লাজমা দশাস্থিত অতি উজ্জ্বল এবং সুবৃহৎ গোলাকার বস্তুপিণ্ড। উচ্চ তাপে তারা নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত নিজের জ্বালানি উৎপন্ন করে। নিউক্লীয় সংযোজন থেকে উদ্ভূত তাপ ও চাপ মহাকর্ষীয় সঙ্কোচনকে ঠেকিয়ে রাখে। জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে একটি তারার মৃত্যু হয়ে শ্বেত বামন অথবা নিউট্রন তারা আবার কখনো কৃষ্ণ বিবরের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী হতে সবচেয়ে কাছের তারা হচ্ছে সূর্য। তারা জ্বলজ্বল করার কারণ হচ্ছে, এর কেন্দ্রে নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা তারার পুরো অভ্যন্তরভাগ পার হয়ে বহিঃপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হয়।

স্টার ক্লাস্টারগুলোকে (কখনও কখনও স্টার মেঘের মতো ভুল বলা হয়), মাঝে মাঝে কেবল সংক্ষেপে ‘ক্লাস্টার’ বলা হয়, যেগুলো তারার বড় দল। তারাগুচ্ছ দুই ধরনের বৈশিষ্ট যুক্ত হতে পারে : গ্লবুলার ক্লাস্টারগুলো শত শত বা হাজার হাজার বছরের পুরনো তারা এবং এই তারাগুলো মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ, যখন মুক্ত তারা গুচ্ছগুলো বা তারাগুচ্ছের দলয়ে তারার সংখ্যা সাধারণত কয়েক শতের চেয়ে কম থাকে এবং প্রায়ই সবাই খুবই নবীন তারা। মহাকর্ষীয় মহাকর্ষের প্রভাব দ্বারা মুক্ত তারা গুচ্ছগুলো বিঘ্নিত হয় দৈত্য আণবিক মেঘয়ের জন্য এবং তারাগুলো ছায়াপথের দিকে ছুটে চলে।

তবে তারাগুচ্ছের সদস্য তারাগুলো মহাশূন্যে একই দিকে তাদের সরণ অব্যাহত রাখবে। যদিও তারাগুলো মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ নয়; তারপর তারা একটি নমনীয় অ্যাসোসিয়েশন হিসাবে পরিচিত হয়। খালি চোখে দৃশ্যমান স্টার ক্লাস্টারগুলো হলো প্লাইডেস (এম ৪৫), হাইডেস এবং বিইহিভ তারাগুচ্ছ (এম-৪৪)।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!